মানবতা আজ স্বার্থের বন্ধনে আবদ্ধ!
সেঁজুতি মুমু:
|
![]() মানবতা আজ স্বার্থের বন্ধনে আবদ্ধ! যখন আমেরিকার লস এঞ্জেলসে অগ্নিকাণ্ড ঘটে, তখন সারা বিশ্বের হৃদয় কেঁপে ওঠে। মানুষের দুঃখে মানুষের কষ্ট হবে, এটা স্বাভাবিক। তা দেখে মনে হয়, বিশ্বমানবতা এখনো বেঁচে আছে। কিন্তু ভেতরের দৃশ্যটি ভিন্ন। এই সহানুভূতি কতটা প্রকৃত, আর কতটা কৃত্রিম, সেটাই প্রশ্ন। লস এঞ্জেলসের ঘটনায় বিশ্ব সমবেদনা জানাল, কিন্তু যখন রমজান মাসে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনের গাজায় ভয়াবহ বোমা হামলা চালানো হলো— চার শতাধিক নিরীহ মানুষ নিহত হলো, শিশুর আর্তনাদ আর মায়ের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠল— তখন বিশ্ব যেন নিরব! বিশ্বমানবতার মুখে যেন তালা লেগে গেল। তাহলে কি সহানুভূতি শুধু শক্তিশালীদের জন্য? তাদের দুঃখেই কি বিশ্ব কাঁদবে? কিন্তু যারা অসহায়, তাদের কষ্টের কি কোনো মূল্য নেই? এমন ভয়াবহ হামলার পক্ষেও অনেকে সাফাই গাইছে! যেন এই হত্যাযজ্ঞ অত্যন্ত জরুরি ছিল! তাহলে কি সত্যিই বিশ্বমানবতা স্বার্থান্ধ? আমাদের বিবেক কি পুঁজিবাদী সমাজের কাছে নতিস্বীকার করেছে? আজকের মানবতা শুধু শক্তিশালীদের জন্যই নয়, বরং সম্প্রদায়ের গণ্ডিতেও আবদ্ধ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই সংকীর্ণ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ স্পষ্ট— হিন্দুর কষ্টে শুধু হিন্দুরা, মুসলমানের কষ্টে শুধু মুসলমানরা সহানুভূতি দেখাচ্ছে! অথচ আমাদের শেখানো হয়েছিল, "সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।" আমরা কি তা ভুলতে বসেছি? অথচ সব ধর্মেই মানবপ্রেমের কথা বলা হয়েছে। হিন্দুর হাত কাটলে যেমন লাল রক্ত বের হয়, মুসলমানের হাত কাটলেও সেই একই লাল রক্তই প্রবাহিত হয়। তাহলে এত বিভেদ কেন? যে ব্যক্তি মানুষের মৃত্যু দেখেও শোকাহত হয় না, সে নিজেই যেন এক মৃতপ্রাণ! পারমাণবিক বোমা আবিষ্কার করার পর বিজ্ঞানী রবার্ট ওপেনহেইমার বলেছিলেন, "আমি এখন সাক্ষাৎ মৃত্যু, বিশ্ব ধ্বংসকারী।" অস্ত্র সভ্যতায় প্রবেশের পর আমরা দিন দিন দানব হয়ে উঠেছি। প্রতিদিন নতুন নতুন মারণাস্ত্র আবিষ্কার করে মনে করছি, আমরা সভ্যতার শীর্ষে পৌঁছাচ্ছি, অথচ প্রকৃতপক্ষে আমরা ধ্বংসের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছি। ক্ষমতার লোভে, জমির লোভে, শক্তির লোভে আমরা বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে মানুষ হত্যা করছি। রাজনীতি আজ ধর্মের নীতিকে পদদলিত করছে। ক্ষমতার মোহে প্রতিনিয়ত মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও ফাঁকা স্বপ্ন দেখিয়ে মানুষকে বোকা বানানো হচ্ছে, অথচ এতে আমাদের বিবেকে সামান্যও স্পর্শ লাগে না। বৈষম্য ও অবিচারকে মেনে নেওয়া মানবতার পরাজয়। আজ যখন শক্তিশালী দেশগুলোর স্বার্থে যুদ্ধ হয়, তখন নিরপরাধ মানুষের প্রাণ যায়। কিন্তু যারা এই যুদ্ধ বাধিয়ে দেয়, তারা শান্তির বুলি আওড়ায়। বিশ্ব সংস্থাগুলো নিরব দর্শকের ভূমিকায় থাকে। অথচ মানবতার প্রকৃত পরিচয় তখনই পাওয়া যায়, যখন আমরা নিপীড়িতের পাশে দাঁড়াই। আমাদের বিবেকবোধই আমাদের "সৃষ্টির সেরা জীব" করে তুলেছে। যদি তা হারিয়ে ফেলি, তাহলে আমরা শুধু দুই-পাওয়ালা প্রাণীতে পরিণত হব। ধীরে ধীরে আমরা মানবতার গুণ হারিয়ে ফেলছি। মানবতা আরেকটি বড় পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে— আমরা কি সত্যিই মানুষ থাকতে পারব, নাকি স্বার্থের খেলায় মানবতাকে বিসর্জন দেব? আমাদের একমাত্র প্রার্থনা হওয়া উচিত— স্রষ্টা আমাদের বিবেকবোধ ও মানবিকতা জাগ্রত করুন, নইলে এই পৃথিবীর ধ্বংসের জন্য মানুষের হাতই যথেষ্ট হবে। আসুন, আমরা সত্যিকার মানবতা ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াই। লেখক: শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ডেল্টা টাইমস/সেঁজুতি মুমু/সিআর/এমই
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |