সুন্দরতর জীবনের হাতছানিতে কলম ধরা
জারিয়াতুল হাফসা:
প্রকাশ: রবিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৫, ১:৩৪ পিএম

সুন্দরতর জীবনের হাতছানিতে কলম ধরা

সুন্দরতর জীবনের হাতছানিতে কলম ধরা

সমকামিতা (Homosexuality) হলো এমন একটি যৌন প্রবৃত্তি, যার ফলে মানুষ তার সম লিঙ্গের মানুষের প্রতি রোমান্টিকতা বা যৌন  আকর্ষণ অনুভব করে। সমকামী দুই ধরনের। পুরুষ সমকামীদেরকে গে এবং নারীদেরকে লেসবিয়ান বলা হয়। আধুনিক মনোবিজ্ঞান ও চিকিৎসা অনুযায়ী সমকামিতা কোন মানসিক রোগ নয় এবং ১৯৭৩ সালে American Psychiatric Association (APA)  এটিকে মানসিক রোগের তালিকা থেকে বাদ দেয়।

সমকামিতার ইতিহাস: ইতিহাস বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সমকামিতা বিষয়টি প্রাচীনকাল থেকে বিদ্যমান। মেসোপটেমিয়া, গ্রিস ও রোমান সভ্যতা থেকে শুরু করে মধ্যযুগ এবং আধুনিক যুগ পর্যন্তও তা বিস্তার লাভ করেছে। ইসলামে লুত (আঃ) এর জাতির সমকামিতার এক ভয়ানক কাহিনী সকলেরই জানা। এছাড়া প্রাচীন গ্রিসে প্রচলিত সমকামিতার সম্পর্ককে 'পেডেরাস্টি' নামকরণ করা হয়েছিল।

আইন ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা : কিছু কিছু দেশে (ইউএসএ, ভারতসহ পশ্চিমা কিছু দেশ) সমকামিতা স্বীকৃত হলেও বেশিরভাগ দেশে (সৌদি আরব, ইরান, আফগানিস্তান ইত্যাদি) এটি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশেও সমকামিতা আইনত দণ্ডনীয় (দন্ডবিধির ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী)।

সমকামিতা গড়ে ওঠার কারণ : মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, জন্মগত -পরিবেশগত - সামাজিক কারণে মানুষ সমকামী হয়ে উঠতে পারে। তবে এটি একমাত্র কারণ নয়। আবার এটি কোন মানসিক রোগও নয়। এটি এক ধরনের প্রবৃত্তি। যা কোন ব্যক্তিকে ধর্মীয়, সামাজিক, প্রাকৃতিক, নৈতিক, দর্শনগত দিক থেকে প্রকৃতির নিয়ম বহির্ভূত এক জগতে ঠেলে দেয়।

ধর্মীয়, সামাজিক,প্রাকৃতিক দৃষ্টিকোণ কি বলে?
১. ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে : ইসলামসহ খ্রিস্টান, হিন্দুধর্ম,বৌদ্ধধর্ম সমকামিতাকে প্রশ্রয় দেয় না।
ক) ইসলামের সমকামিতাকে হারাম বা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যা পবিত্র কুরআনে বর্ণিত লুত (আঃ) এর জাতির বাস্তবিক পরিণতি এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। সমকামিতার জন্য আল্লাহ পুরো জাতির উপর কঠোর শাস্তি বর্ষণ করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, "অতঃপর যখন আমার আদেশ এল, আমি সে জনপদকে উল্টে দিলাম এবং তার উপর স্তরে স্তরে প্রস্তরবর্ষণ করলাম। "সূরা হুদ (১১:৮২-৮৩)
তিনি আরও বলেন, "তোমরা কামবৃত্তি চরিতার্থ করার জন্য কি পুরুষদের কাছে গমন করো নারীদের পরিবর্তে? বরং তোমরা তো নির্বোধ জাতি।"সূরা আন-নামল (২৭:৫৫)

খ) খ্রিস্টধর্মেও সমকামিতা পাপ হিসেবে বিবেচিত। বাইবেলে বলা হয়েছে,
"তুমি পুরুষের সাথে শয়ন করবে না যেমন নারীর সাথে শয়ন করা হয়; এটি একেবারেই ঘৃণ্য।"লেবীয় বিধান (Leviticus ১৮:২২)

গ হিন্দুধর্মে সমকামিতা নিয়ে সমালোচনা করে কিছু বাণী কিছু কিছু পুরাণ ও শাস্ত্রে উল্লেখিত আছে।"একজন পুরুষ যদি অন্য পুরুষের সাথে যৌন সম্পর্ক করে, তাহলে তাকে কঠোর প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।"মনুসংহিতা (৮:৩৭০)

২. প্রাকৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে : সমকামিতা নিয়ে প্রাকৃতিক কিছু যুক্তি রয়েছে। যেমন :

ক) প্রজনন অক্ষমতা :সম লিঙ্গের ব্যক্তিদের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে সন্তান জন্ম দেওয়া সম্ভব নয়। যা বিবর্তন ধারার সাথে সাংঘর্ষিক।
খ) পশু পাখির আচরণের সহাবস্থান :কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাণিজগতের কিছু প্রজাতির (ডলফিন, বানর, সিংহ, পেঙ্গুইন ইত্যাদি) মধ্যে সমকামিতার প্রবৃত্তি দেখা যায়। তবে তা সাময়িক। কিন্তু মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, মনন মানুষকে পশু থেকে আলাদা করেছে। অন্যথায়, সমকামিতা মানুষকে পশুপাখির আচরণের সাথে সহাবস্থানে দাঁড় করায়।

৩. সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে : সামাজিক বিভিন্ন যুক্তি সমকামিতাকে নিরুৎসাহিত করে। যেমন :

ক)ভঙ্গুর পারিবারিক কাঠামো :যেহেতু সম লিঙ্গের ব্যক্তিরা যৌন সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানে সক্ষম নয়। তাই সন্তান হিসেবে দত্তক নেওয়া সন্তান তাদেরকে লালন পালন করতে হয়। যেখানে শিশুটি প্যারেন্টাল সম্পর্ক, ভালোবাসা ও বিকাশ থেকে বঞ্চিত হয়।
খ)সমকামীদের মানসিক স্বাস্থ্য :গবেষণায় দেখা গেছে, সমকামীদের মাঝে আত্মহত্যা, হতাশা, অবসাদগ্রস্ততার প্রবণতা বেশি।
বিভিন্ন যুক্তি থেকে এটি প্রমাণিত হয় যে, সমকামিতা একটি সামাজিক ব্যাধি। যার ক্রমবিস্তার হতেই থাকলে সামাজিক, ধর্মীয়, বাস্তবিক অর্থে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। আবার যারা সমকামী তারাও এই সমাজেরই মানুষ। তাই তাদেরকে অবহেলা-ঘৃণা না করে বিভিন্নভাবে সতর্ক ও সচেতন করে তুলতে হবে এই 'সমকামিতা' নামক জীবনবিনাশী অভিরুচিটি নিয়ে।

প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায় :
সমকামিতাকে প্রতিকার ও প্রতিরোধ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়,
১.ধর্মীয় ও নৈতিক অনুশাসন বৃদ্ধি।
২.কাউন্সেলিং ও কগনিটিভ বিহ্যাবিয়রাল থেরাপি(CBT) গ্রহণ।
৩.পুরুষ - নারী সম্পর্ক নিয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গঠন।
৪.পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষার বিস্তার।
৫.পারিবারিক বন্ধন ও দাম্পত্য জীবন গঠন।
৬.সুষ্ঠ বিনোদনের ব্যবস্থা ইত্যাদি।

সমকামিতা একটি সংবেদনশীল ও বহুমুখী বিষয়। যার বাস্তবিক পরিণতিও বহুমুখী। তাই আমাদের উচিত সকলে মিলে তা প্রতিরোধ করা  এবং সমাজকে সুন্দর করতে সমকামিতা প্রতিকারে সমকামীদের প্রতি বিনয়ী ও অন্ধ পথের হাতছানি থেকে বেরিয়ে আসতে তাদেরকে সাহায্য করা।

লেখক : শিক্ষার্থী, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


ডেল্টা টাইমস/জারিয়াতুল হাফসা/সিআর/এমই

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com