স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল
মোহাম্মদ ইমতিয়াজ উদ্দিন:
প্রকাশ: শনিবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:৫১ পিএম

স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল

স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল

কথায় বলে ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’। ছোটবেলা থেকেই কথাটি আমরা সবাই কমবেশি  শুনে আসছি। মেডিকেল হসপিটালগুলোতে একদিন রোগীদের সাথে কাটালে সুস্থতার গুরুত্ব বুঝা যাবে।

যৌবনকালে কিংবা সারা জীবন সুস্বাস্থ্যকে গুরুত্ব না দেবার কারণে অনেক মানুষকেই বৃদ্ধ বয়সে অসুস্থ জীবনযাপন করতে হচ্ছে। সেই সাথে তাদের জীবনটা হয়ে গিয়েছে ডাক্তার ও ঔষুধনির্ভর। এজন্যই বোধহয় প্রাচ্যে এ প্রবাদটি চালু আছে যে, ‘কেউ কেউ অর্থ উপার্জন করতে গিয়ে নিজেদের শরীর-স্বাস্থ্য নষ্ট করে ফেলে, আবার পরবর্তী সময়ে তারাই স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য সেসব অর্থ নষ্ট করে।’

আধুনিক অস্বাস্থ্যকর জীবনব্যবস্থা আমাদের স্বাস্থ্যকে ক্রমাগত নষ্ট করে দিচ্ছে। প্রতিনিয়ত ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের ফলে প্রচুর মানুষের কিডনি, লিভার প্রভৃতি বিকল হয়ে যাচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর ধুলাবালি, বায়ুদূষণের ফলে মানুষের শ্বাসতন্ত্রে অনেক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। হার্টের রোগী বেড়ে যাচ্ছে ক্রমাগত। মাত্রাতিরিক্ত শর্করা গ্রহণ ও কম শারীরিক পরিশ্রমের কারণে এখন বেশিরভাগ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। খাদ্যের ভেজালের কারণে এখন হরমোনের সমস্যা ও প্রাণঘাতী ক্যান্সারের হার আগের চেয়ে বেড়ে গিয়েছে। আগে মানুষ গ্রামে বাস করতো, কৃষিকাজ করতো, শারীরিক পরিশ্রম করতো, টাটকা ফলমূল-সবজি খেতো। এজন্য আগে মানুষের রোগ-বালাই কম হতো। আমাদের বাপদাদাদের আমলে কারোর তেমন একটা ডাক্তারের কাছে যাবার প্রয়োজন হতো, চোখে চশমারও প্রয়োজন হতো না। কিন্তু এখন প্রতি ঘরে ঘরে রোগী! আধুনিক সহজ জীবনব্যবস্থা আমাদেরকে শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। ফলে শরীরে বাসা বাধছে নানান ধরনের রোগ।

এই বিষয়ে থাইল্যান্ডের ডা. মুজিবুর রহমান মনে করেন, মানুষের দেহের বেশিরভাগ রোগের কারণ সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও সঠিক লাইফস্টাইল মেনে না চলা। তিনি মনে করেন, সঠিক নিয়মে সঠিক উপায়ে যদি মানুষ টাটকা ও নির্ভেজাল খাবার খেতে পারতো তাহলে মানুষের জীবন থেকে অধিকাংশ রোগ উধাও হয়ে যেতো। এছাড়া তিনি মনে করেন, সঠিক লাইফস্টাইল, পর্যাপ্ত ঘুম, পর্যাপ্ত ব্যায়াম না করার ফলেও মানুষ এখন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

এই বিষয়ে আরেক বিশেষজ্ঞ ডা. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, মানুষের আজকাল ডেল্টাস্লিপ হচ্ছে না। সাধারণত রাত ৯টা থেকে রাত ২টার মধ্যে আমাদের শরীরে এক প্রকার উপকারী হরমোন নিঃসরণ হয়। এই উপকারী হরমোন আমাদের শরীরের বিভিন্ন জানা-অজানা রোগের মহৌষধ।

যদি রাত ৯টা থেকে রাত ২টার মধ্যে ঘুমানো যায় তবে এই উপকারী হরমোন আমাদের শরীরে কার্যকর হবে। আর এই সময়ের ঘুমটাকে ডেল্টাস্লিপ বলে।

ডা. জাহাঙ্গীর কবির মনে করেন, আমরা রাত জেগে কাজ করি। ফলে আমাদের শরীরে নানা রোগ প্রতিনিয়ত বাসা বাধছে। আর ঘুম ঠিক না হলে শরীর এমনিতেই অসুখে ধরবে।

সুস্বাস্থ্যই জীবনের সকল সুখের মূল। সুস্থতা না থাকলে এই জীবনের কোনো মূল্য নেই। সুস্থ মানুষের পক্ষেই সারা পৃথিবীকে সুন্দর কোনো সৃষ্টিশিল্প বা কর্ম উপহার দেওয়া সম্ভব। তাই সুস্থ থাকতে হবে যেকোনো মূল্যে।

সুন্দর আর সুস্থ জীবনের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাওয়া আর পর্যাপ্ত ব্যায়াম যেমন প্রয়োজন তেমনি দুইয়ের ভারসাম্য বজায় রাখাও অতি গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ থাকতে ভালো খাবারের পাশাপাশি শরীরচর্চাতেও বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। সুস্থ জীবনধারার দীর্ঘমেয়াদি সুফল পেতে নিচের ছয়টি নিয়ম মেনে চলা যেতে পারে।

১. ধৈর্য্য ধরে চিবিয়ে চিবিয়ে খান : যখন খিদে পাচ্ছে তখন খাচ্ছেন নাকি যখন ইচ্ছে হচ্ছে তখন খাচ্ছেন এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য করা খুব দরকার। যখন প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছেন বা রেগে আছেন বা প্রচণ্ড আনন্দেও থাকেন তখন খাবার খাওয়া থেকে সতর্ক থাকুন। কেননা এই সময় আপনি অনিয়ন্ত্রিতভাবে খেয়ে ফেলতে পারেন। এ ছাড়া খাবার খাওয়ার সময় টিভি দেখা বা মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না। খাবার খাওয়ার সময় সম্পূর্ণরূপে খাবারের দিকে মনোনিবেশ করুন। খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে চিবিয়ে খান। তাহলে হজমে কোনো সমস্যা হবে না। দীর্ঘদিনের হজমের সমস্যা থেকেও নানা ধরনের রোগ আমাদের শরীরে বাসা বাধে। এমনকি হজমের সমস্যা থেকে অনেক সময় মুড সুইং, কাজে অনীহা, অস্বস্তি দেখা দিতে পারে।

২. সময়সূচি মেনে ব্যায়াম করুন : নিয়মিত ব্যায়াম শুধু শরীরের জন্যই উপকারী নয়, মনের জন্যও বেশ ভালো। নিয়মিত যোগাভ্যাস ও ব্যায়াম ভালো থাকার হরমোনগুলোর প্রবাহ বাড়ায়। সেজন্য ব্যায়ামের জন্যও প্রতিদিন কিছু সময় বের করুন।

৩. শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম : আমাদের শরীরকে ভালো রাখতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন প্রয়োজন। সুস্থতার জন্য শরীরের সমস্ত অংশেই অক্সিজেন সরবরাহ করা খুবই প্রয়োজন। আর এজন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই।

৪. অস্বাস্থ্যকর খাবার বাদ দিন : নানান জাঙ্কফুড এবং চকলেটের জন্য লোভ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু সুস্থ জীবনযাপন করতে হলে এসব খাবার বাদ দেওয়া ভালো। সকল প্রকার অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলা উত্তম। কেননা বর্তমানে এসব অস্বাস্থ্যকর খাবারই সকল অসুখের মূল। এছাড়া ধূমপান, মদ্যপান বা মাদকজাতীয় দ্রব্য পুরোপুরি বর্জন করতে হবে।

৫. অন্য পানীয়ের বদলে পানি খান : কোমলপানীয় পান করতে সবারই মজা লাগে। তবে যেমন মজা তেমন সাজা! এসব কোমল পানীয় আমাদের স্বাস্থ্যকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়। লিভার, কিডনির জন্যও এগুলো যথেষ্ট ক্ষতিকর। তাই সকল কোমল পানীয়, বোতলজাত বা টিনজাত পানীয় বর্জন করা বুদ্ধিমানের কাজ। বরং এগুলোর পরিবর্তে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পানের অভ্যাস করা উচিৎ আমাদের। কেননা পানির অসংখ্য উপকারিতা আছে।

৬. দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করুন : এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মানুষের শতকরা ৭৫ ভাগ রোগের মূল কারণ মনোদৈহিক। মানসিক অস্থিরতা বা দুশ্চিন্তা থেকে অনেক রোগ সৃষ্টি হয়। বর্তমান এই আধুনিক যুগে প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতির কারণে দুশ্চিন্তা যেন মানুষের পিছু ছাড়ছে না। এমনকি ছোট ছোট বাচ্চারা পর্যন্ত দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত নয়।

কিন্তু সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হলে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। নিয়মিত মেডিটেশন করতে হবে, প্রাণখুলে হাসতে হবে প্রতিদিন, মানুষের সাথে মিশতে হবে, স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হবে, সব ব্যাপারে লোভ-লালসা ত্যাগ করতে হবে। তবেই দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করা সম্ভব।

স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে প্রতি বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে ৭ এপ্রিল সারা বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। ১৯৫০ সালের ৭ এপ্রিল থেকে বিশ্বজুড়ে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এই বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের মূল ভাবনা 'মা ও শিশুর স্বাস্থ্য'। সুস্থ পরিবার সমাজের ভিত্তি, যা আমাদের সকলের জন্য আশাব্যঞ্জক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। মা ও শিশুর সুস্থতার সাথে আগামী প্রজন্মের সুস্থতা ও সুন্দর ভবিষ্যৎ জড়িত। এই ধারণাকে সামনে রেখেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আগামী একবছর কাজ করে যাবে বলে জানা যায়।

পরিশেষে এটা স্পষ্ট যে, স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলা করলে  জীবনযাপনের সকল আনন্দ ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। আমরা সবাই চাই মৃত্যুর পূর্বে জীবনটাকে প্রাণখুলে উপভোগ করতে। তাই জীবনের সকল আনন্দ, রূপরস উপভোগ করার জন্য সুস্বাস্থ্য রক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

লেখক : শিক্ষার্থী, ফিন্যান্স বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।


ডেল্টা টাইমস/মোহাম্মদ ইমতিয়াজ উদ্দিন/সিআর/এমই

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com