চুয়ান্ন বছরের গ্লানি এক বছরে ঘোচে না
রহমান মৃধা:
প্রকাশ: বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫, ১১:৩৪ এএম আপডেট: ৩০.০৪.২০২৫ ১১:৩৮ এএম

চুয়ান্ন বছরের গ্লানি এক বছরে ঘোচে না

চুয়ান্ন বছরের গ্লানি এক বছরে ঘোচে না

যদি একটি জাতি খারাপ হতে ৫৪ বছর সময় নেয়, তাহলে মাত্র এক বছরে সেই জাতি কীভাবে ভালো হয়ে উঠবে?

বাংলাদেশ যদি সত্যিকার অর্থে দুর্নীতিমুক্ত, সৎ, সুশিক্ষিত, ন্যায়পরায়ণ ও সৃজনশীল জাতি হতে চায়, তাহলে আমাদের বুঝতে হবে—এটা এক বছরের কাজ নয়। ৫৪ বছরের দুর্নীতির আগুন এক বছরে নিভিয়ে কিছু গঠনমূলক করা প্রায় অসম্ভব।

বাস্তবতা হলো, গত ৯ মাসে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী বুক ঠুকে বলতে পারেননি যে, তারা দেশের কল্যাণে কোনো ভালো কাজ করেছেন। পক্ষান্তরে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস—একজন বিশ্বস্বীকৃত চিন্তাবিদ ও উন্নয়নকর্মী—এই পুরো সময়টিতে নীরবে কাজ করে গেছেন একটি উন্নত, ন্যায়ের ভিত্তিতে গড়া বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে। অথচ তার পাশে দাঁড়াতে আমরা কাউকে দেখিনি। কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা নেতা তার প্রয়াসকে মন থেকে সমর্থন কিংবা সহায়তা করেননি। বরং তার প্রতি অবজ্ঞা, হীনমন্যতা ও বিদ্বেষই প্রকাশ পেয়েছে।

আমাদের উচিত ছিল ড. ইউনূসের ন্যায়পরায়ণতা, ব্যবস্থাপনা দক্ষতা ও আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা থেকে শেখা। পাশাপাশি দেশের দুর্নীতিবাজ ও অপরাধীদের নিরপেক্ষভাবে চিহ্নিত করা জরুরি—তারা যেই দলেরই হোক না কেন। শুধু আওয়ামী লীগের সমালোচনায় সময় নষ্ট না করে, বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যান্য দলের দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসীদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।

তারপর একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। তবেই কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সম্ভব হবে। না হলে শুধু শাসক বদলাবে, শোষণ নয়। “যে লাউ, সেই কদু”—এই কথাটাই প্রমাণিত হবে।

বিএনপি আজ নানা কৌশলে নির্বাচনী বিভ্রান্তি তৈরি করছে। এর পেছনে কি কোনো আন্তর্জাতিক কূটকৌশল বা গোপন এজেন্ডা রয়েছে? নাকি আমরা সবাই চোখ বন্ধ করে শুধু নাটক দেখছি?

৫ আগস্টের ঘটনার পর, যারা দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে, সেই নেতাকর্মীরা আজও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মূল নিয়ন্ত্রণে রয়ে গেছেন। রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে এখনো আওয়ামী লীগের রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিকড় গেঁথে আছে। তাহলে প্রশ্ন আসে—যারা অতীতে আওয়ামী লীগ সমর্থক ছিলেন, তারা কি রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছেন? অন্তর্বর্তী সরকার কেন এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দিচ্ছে না?

বর্তমানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে না থাকলেও দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি আগের চেয়ে বেশি বেড়েছে। তাহলে এই “স্বৈরাচার পতনের নাটক” কেন মঞ্চস্থ হলো? কে কার সঙ্গে প্রহসন করছে?

একটু চারপাশে তাকালেই দেখা যায়—লুটপাট বেড়েছে, অনিয়ম চরমে উঠেছে, দুর্নীতি নতুন মাথা তুলেছে। যেসব ছাত্র এক সময় রাজপথে অবস্থান নিয়েছিল, তাদের অনেকেই এখন সন্ত্রাসের রঙিন খেলোয়াড়ে রূপ নিয়েছে। কোথায় গেল সেই দেশপ্রেম, সেই ত্যাগ?

যত রক্ত, যত বিসর্জন—সব কি শুধু দুর্নীতির পালাবদলের জন্য? মানুষ কি আবারও প্রতারিত হলো?

আমরা ভুলে গেছি, অতীতে আওয়ামী লীগ ভারতের দালালি করে ক্ষমতায় ছিল। আজ বিএনপি-জামায়াতও ভারতের আশীর্বাদ পেতে উদগ্রীব। এ কেমন রাজনীতি? এ কেমন দেশপ্রেম?

ড. ইউনূসের মতো একজন স্বাধীনচেতা, ন্যায়বান মানুষ আছেন বলেই তারা পুরোপুরি ভারতের গোলামী করতে পারছে না। তাই তাকে নিয়ে নানা বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।

আমি শেখ হাসিনার শাসনামলেও প্রবাসে বসে লিখতাম। তখন সব লেখা ছাপা হতো না, কিন্তু অন্তত ৬০% প্রকাশিত হতো। আর এখন? ৩০% লেখাও ছাপা হয় না, আর ছাপা হলেও তা পরে সরিয়ে ফেলা হয়। না মানলে কালবেলা পত্রিকায় নজর দিন।

তাই কেউ যদি বলেন—আওয়ামী লীগের পতনের পর বাংলাদেশ স্বর্গ হয়ে গেছে—তবে সেটা নিছক ভ্রান্তি।

ড. ইউনূসের মতো নেতৃত্বের নিচে যদি সৎ, নিরপেক্ষ ও দেশপ্রেমিক মানুষ একত্র হতো, তবে পরিবর্তন আসত। কিন্তু আজকের বাংলাদেশ সেই মানসিকতা হারিয়ে ফেলেছে।

আজ রাজনীতি মানেই দুর্নীতির নতুন মোড়ক, আর দেশপ্রেম মানে লুটপাটের লাইসেন্স।

তবুও এখনো সময় আছে। যারা সত্যিকারে দেশকে ভালোবাসেন, তারা জেগে উঠুন। না হলে এই দেশ একদিন চিরতরে বিক্রি হয়ে যাবে।

আমি চল্লিশ বছর প্রবাসে থেকেও দেশের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি। কোনো স্বার্থ বা প্রত্যাবর্তনের আশায় নয়—শুধু একটিমাত্র চিন্তায়: “এই দেশটা আমার, আমাদের।”

তোমরা তো দেশের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করো। তাহলে তোমাদের দেশপ্রেম তো আমার চেয়েও বেশি হওয়া উচিত, তাই না?

আমি এই দেশের মালিক হিসেবে তোমাদের হাতে দায়িত্ব তুলে দিয়েছি। বিনিময়ে শুধু একটাই অনুরোধ—তোমরা ভালো হও। নিজেরা শুদ্ধ হও, দেশকে শুদ্ধ করো। কারণ, এই বাংলাদেশ আমাদের সকলের।

(প্রকাশিত লেখাটির আইনগত মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, ডেল্টা টাইমস্ কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার ডেল্টা টাইমস্ কর্তৃপক্ষ নেবে না। )


লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন।

ডেল্টা টাইমস্/রহমান মৃধা/সিআর/এমই

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com