প্রকাশ: বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫, ৭:১৩ পিএম

বগুড়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এতে দুইজন ছুরিকাহতসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

ঘটনাটি ঘটে বুধবার (৩০ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে তিনটায় শহরের শহীদ টিটু মিলনায়তনে। সেখানে এনসিপি ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার ও তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের’ দাবিতে একটি বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। এর বিরোধিতা করে একই স্থানে পাল্টা কর্মসূচি দেয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি অংশ।

বিকেল পাঁচটার দিকে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, যুগ্ম সদস্য সচিব তাহসিন রিয়াজসহ কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে ওঠেন। সমাবেশ শুরু হলে কিছুক্ষণ পর ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে দিতে ছাত্র আন্দোলনের একাংশ মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করে। এনসিপি নেতাকর্মীরা তাদের বাধা দিলে প্রথমে বচসা ও পরে হাতাহাতি শুরু হয়। এরপর কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সারজিস আলম বক্তব্য দেওয়ার সময়ও মিলনায়তনের বাইরে উত্তেজনা চলতে থাকে।
তবে এ ঘটনায় কোনো পক্ষের সরাসরি মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সারজিস আলম বলেন, "আওয়ামী লীগ এ দেশে আর রাজনীতি করতে পারবে না। তাদের যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানেই প্রতিহত করা হবে। বগুড়া থেকেই প্রতিরোধের সূচনা হবে।"

তিনি আরও অভিযোগ করেন, "আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে গত ১৬ বছরে বগুড়া উন্নয়নের দিক থেকে বঞ্চিত হয়েছে। চাকরি, প্রমোশন, অবকাঠামো—সবক্ষেত্রে বৈষম্য করা হয়েছে। বিমানবন্দর সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়নি, আধুনিক হাসপাতালকে তৃতীয় শ্রেণির প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হয়েছে, আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম থাকলেও কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করা হয়নি।"

এ সময় তিনি বগুড়া-ঢাকা সরাসরি রেললাইন চালুর দাবি জানান এবং জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান মিলনের বিরুদ্ধে ঐতিহ্যবাহী প্যালেস মিউজিয়াম ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা দখলের অভিযোগ করেন। তার দাবি, “বগুড়ায় অসংখ্য আওয়ামী দালাল রয়েছে—তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।”

সমাবেশ পরিচালনা করেন এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক যুথী অরণ্য প্রীতি। বক্তব্য রাখেন এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব তাহসিন রিয়াজ, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সাকিব মাহদী, কেন্দ্রীয় সদস্য রফিকুল ইসলাম পলক, আবদুল্লাহ আল মুহিন, নাজমুল হক, জেলা সংগঠক আহমেদ সাব্বির এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সদস্য সচিব সাকিব খানসহ আরও অনেকে।

সমাবেশ শেষে সারজিস আলমের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সাতমাথার মুক্তমঞ্চের সামনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ এবং তাদের বিচার দাবিতে নানা স্লোগান দেওয়া হয়।

বগুড়া সদর থানার ওসি এসএম মঈনুদ্দিন বলেন, “সমাবেশ চলাকালে ১৫-২০ জনের একটি দল ‘ভুয়া-ভুয়া’ স্লোগান দিয়ে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। তখন এনসিপির নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া দিয়ে বের করে দেন। পরে মিলনায়তনের বাইরে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। এ সময় দুইজনকে ছুরিকাঘাত করা হয় বলে জানা গেছে।”

ডেল্টা টাইমস/আবদুস সবুর/সিআর