স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও পাকা রাস্তার মুখ দেখেনি রায়পুরার মির্জাচর ইউনিয়ন
মো. মোস্তফা খান, নরসিংদী:
|
![]() যোগাযোগ ব্যবস্থায় আজোও অন্ধকার যুগে ১২ গ্রামের ১৫ হাজার মানুষ সরেজমিনে জানা যায়, ২৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত রায়পুরা উপজেলা। আর এ উপজেলারই প্রায় ৮ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে অবস্থিত মির্জারচর ইউনিয়ন। এখানে ১২টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ বসবাস করছে। নারী-পুরুষসহ ভোটার রয়েছে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার। এ ইউনিয়নের কোথাও এক ইঞ্চি পাকা সড়ক নেই। একটি ইটের সলিং চোখে পড়লেও সেগুলোর ইট উঠে গেছে অনেকাংশে। প্রয়োজনীয় সেতু-কালভার্ট নেই। ইউনিয়নের ১২ গ্রামে যাতায়াতের প্রায় ১৬ কিলোমিটার রাস্তায় কোথাও পাকা নেই। পুরো ইউনিয়নে একটি মোটরসাইকেল চোখে পড়লেও, আর কোনো রিকশা, ভ্যানগাড়ি বা যাতায়াতের উপযোগী যানবাহন দেখা যায় না। ইউনিয়ন থেকে অন্য কোথাও যেতে হলে দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে ও নৌকায় নদী পার হতে হয়। কষ্টের সঙ্গেই বসবাস ইউনিয়নবাসীর। ইউনিয়নের লোকজন বলেন, বৃষ্টি হলে কাদা-মাটি দিয়ে চলাচল করতে হয়। জুতা পরে রাস্তায় চলা যায় না। সারা দেশে উন্নয়নের কথা শুনলেও আমরা চোখে দেখিনি। আমাদের রাস্তাঘাটের কোনো উন্নয়ন হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ ইউনিয়ন এটি। মেঘনা থেকে সৃষ্ট যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রথমে আঘাত হানে ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে। এখানকার বাসিন্দাদের দুঃখ-কষ্টের শেষ নেই। এখানকার মানুষগুলো কত কষ্টে আছে সেটা যারা আসেননি, তারা অনুভব করতে পারবেন না। নরকের মধ্যে বসবাস করছি। আমাদের স্বপ্ন ছিল মির্জারচরের প্রতিটা বাড়ি থেকে যেন প্রতিটা ছেলে-মেয়ে হাইস্কুলে বা প্রাইমারি স্কুলে যেতে মা-বাবার কাছে অজুহাত না দেখায় যে, নৌকার জন্য স্কুলে যেতে পারিনি। মির্জারচর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুক্তা আক্তারসহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আমরা অনেক দূর থেকে পায়ে হেঁটে স্কুলে আসি। অনেক কষ্ট হয়। রাস্তা ভালো হলে আমাদের কষ্টটা কম হতো। স্থানীয় ইউপি সদস্য অহিদ মেম্বার বলেন, আমাদের ইউনিয়নে এক ইঞ্চি পাকা রাস্তা নেই। উপজেলা সদরে যেতে আমাদের কষ্ট হয়। ছেলে-মেয়ের ডেলিভারি হতে পারে না এবং অসুস্থ রোগীকে নিয়ে যেতে পারি না। এখানে রাস্তা করে দিলে অনেক উপকার হতো। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে মির্জারচরের মতো এমন অনুন্নত ইউনিয়ন আর কোথাও নেই। বিগত ১৭ বছরের মধ্যে এখানে এক ইঞ্চি রাস্তারও উন্নয়ন হয়নি। নদীভাঙনের কথা নাইবা বললাম। মির্জারচর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিল্লাল হোসেন বলেন, রায়পুরা উপজেলার সবচেয়ে অবহেলিত গ্রাম এবং ইউনিয়ন মির্জারচর। এখানে একটি মাত্র মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়—মির্জারচর উচ্চ বিদ্যালয়। এখানে ৮ শতাধিক শিক্ষার্থী থাকলেও নিয়মিত পাওয়া যায় ৫ শত। বাকিরা পাশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে চলে যায়। যদিও নবীনগরের দূরত্ব ৮ কিলোমিটার, কিন্তু পাকা রাস্তা থাকায় তারা নদী পেরিয়ে সহজেই বিভিন্ন যানবাহনে যেতে পারে। এই বিদ্যালয়ে অবকাঠামো, কম্পিউটার ল্যাব, ডিজিটাল ক্লাসরুম, মানসম্পন্ন শিক্ষক এবং বিদ্যালয়ের পরিবেশ সব কিছু ভালো থাকা সত্ত্বেও শুধু যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় আমরা পিছিয়ে পড়ছি। এই ইউনিয়নে সড়ক ব্যবস্থার উন্নতি হলে শিক্ষা ব্যবস্থা সহ সার্বিক মানোন্নয়ন হবে। মির্জারচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোসা. মাহফুজা আক্তার বলেন, এলাকায় এক ইঞ্চি রাস্তাও পাকা নেই। চলাচল উপযোগী রাস্তা নেই। তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালের ইউপি নির্বাচনে আমার স্বামী জাফর ইকবাল মানিক চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে এলজিইডি কর্তৃক রাস্তার আইডি তৈরি করেছিল এবং কিছু রাস্তা পাকাকরণের প্রক্রিয়া নিয়েছিল। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে স্থানীয় এমপি রাজু ভাই চরাঞ্চল থেকে ভোট কম পাওয়ায় উন্নয়নের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। পরে উপ-নির্বাচনে আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে রাস্তাঘাটের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেছি। একটি এলাকার উন্নয়নের জন্য আগে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করতে হবে—সেটি আমাদের নেই। বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে মির্জারচরকে যোগাযোগব্যবস্থার আওতায় আনার দাবি জানাই। ![]() স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও পাকা রাস্তার মুখ দেখেনি রায়পুরার মির্জাচর ইউনিয়ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, মির্জারচর খুবই অবহেলিত একটি ইউনিয়ন হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি, এখানে সেরকম কোনো উন্নয়নমূলক কার্যক্রম হয়নি। আমরা চেষ্টা করবো, ভবিষ্যতে যে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো আসবে, সেগুলো যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মির্জারচরে বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেখানে বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখবো এবং স্থানীয় সরকার ও উপজেলা পরিষদের তহবিল থেকে সেখানে যথেষ্ট পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়ার চেষ্টা করবো। ইতোমধ্যে টি.আর., কাবিখা একটি বরাদ্দ আমরা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে পাঠিয়েছি এবং নির্দেশ দিয়েছি যাতে এই বরাদ্দ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ঘটানো যায়। ডেল্টা টাইমস/মো. মোস্তফা খান/সিআর/এমই
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |