শিক্ষক নিয়োগে সিস্টেম-দুর্নীতি ও বৈষম্য: ১-১২তম ব্যাচের অব্যাখ্যিত বঞ্চনা
আমির আসহাব:
|
![]() শিক্ষক নিয়োগে সিস্টেম-দুর্নীতি ও বৈষম্য: ১-১২তম ব্যাচের অব্যাখ্যিত বঞ্চনা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাত ধরে স্বৈরতান্ত্রিক সরকার বিদায় নিয়েছে, গণতন্ত্রের সুবাতাস ফিরেছে। কিন্তু শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি, বৈষম্য, অব্যবস্থাপনা এখনো বিদ্যমান এবং তা অতীত শাসনের দুঃসহ ছায়া বহন করছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলোÑযেখানে শিক্ষিত, মেধাবী, প্রশিক্ষিত শিক্ষকগণ যোগ্যতা অর্জন করেও বছরের পর বছর নিয়োগ পাচ্ছেন না, সেখানে এই যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষারই বা প্রয়োজন কী? ২০০৫ সাল থেকে এনটিআরসিএ’র কার্যক্রম শুরু হলেও এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া আজও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থেকে বঞ্চিত। সংস্থাটি কম্বাইন্ড মেরিট লিস্ট তৈরি করেও বাস্তবে পিক-অ্যান্ড-চুজ পদ্ধতিতে সুপারিশ করছে, ইনডেক্সধারী ও পূর্বে সুপারিশ পাওয়া আবেদনকারীদের আবারও আবেদন করার সুযোগ রেখে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম শিক্ষক সংকট। একই রোল নাম্বার একাধিক ব্যক্তিকে দেওয়া হচ্ছে, ফলে একজন উচ্চ নম্বরধারী প্রার্থী বারবার সুপারিশ পাচ্ছেন, আর অন্যরা থেকে যাচ্ছেন বঞ্চিত। উল্লেখযোগ্য যে, ৫টি গণবিজ্ঞপ্তির প্রত্যেকটিতেই এক-চুতর্থাংশেরও কম নিয়োগ সুপারিশ করা হয়। বাকি পদগুলো শূন্যই থেকে যায়, অথচ পরবর্তী গণবিজ্ঞপ্তিতে একই পদগুলো আবার চাহিদা হিসেবে দেখানো হয়। তাদের আবার নতুন করে আবেদন করতে হচ্ছে ফি দিয়ে, অপেক্ষা করে এ যেন অনন্ত প্রত্যাশার এক দুঃস্বপ্ন। আবার, ১-১২তম ব্যাচের আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তাদের বয়স, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, এমনকি নিবন্ধন সনদ সব কিছুই যথাযথ, তবুও নিয়োগ পাচ্ছেন না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা এনটিআরসিএ একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিলেও কোনো স্থায়ী সমাধান আজও আসেনি। এ অবস্থায় শিক্ষার্থী, প্রতিষ্ঠান এবং প্রার্থীরাÑতিন পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত। সাবেক সরকারের সময়ে জাল সনদধারী ১১৬৫ জন শিক্ষককে চিহ্নিত করে বেতন ফেরতের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে নতুন করে আরও ১০ হাজারের বেশি জাল সনদধারীর সন্ধান পাওয়া গেছে। অথচ বৈধভাবে উত্তীর্ণ শিক্ষকরা বছরের পর বছর ধরে বেকার বসে আছেন। প্রশ্ন ওঠে, শিক্ষাক্ষেত্রের এমন নৈরাজ্যের পেছনে কারা দায়ী? কেন নিবন্ধিত শিক্ষককেরা এত অসহায়? নিয়োগবঞ্চিতদের দাবির মধ্যে যৌক্তিকতা স্পষ্ট: এনটিআরসিএ’র শিক্ষক নিয়োগ চক্রে (গণবিজ্ঞপ্তিতে) আবেদন করা অথচ সুপারিশ না পাওয়া ১-১২তম ব্যাচের প্রার্থীদের জন্য পৃথক ডাটাবেস করে, এন্ট্রি লেভেল বয়স বিবেচনায় রেখে এককালীন নিয়োগ দিতে হবে। শিক্ষাকে যদি আমরা রাষ্ট্র গঠনের মূল পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করি, তাহলে শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নাহলে, মেধার মৃত্যু হবে নীরবে, শিক্ষা খাত পরিণত হবে সুবিধাভোগীদের বাণিজ্যক্ষেত্রে। এখনই সময় চেতনার অবক্ষয় রোধ করে বাস্তব সংস্কারের পথে হাঁটার। অন্যথায় যে মেধাবী প্রজন্ম গড়ে উঠতে পারত আমাদের সন্তানদের শিক্ষক হয়ে, তারা হারিয়ে যাবে হতাশা, বেকারত্ব আর প্রহসনের গহ্বরে। লেখক : সভাপতি, প্যানেল প্রত্যাশী নিবন্ধিত শিক্ষক সংগঠন। ডেল্টা টাইমস/আমির আসহাব/সিআর/এমই |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |