হয়রানিমুক্ত ভূমি সেবা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় মন্ত্রণালয় অঙ্গীকারাবদ্ধ : সিনিয়র সচিব
নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫, ৮:৫৫ পিএম

.

.

হয়রানিমুক্ত ও জনবান্ধব ভূমি সেবা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে ভূমি মন্ত্রণালয় বদ্ধপরিকর বলে জানিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ বলেছেন অনলাইন ব্যবস্থায় প্রতি মাসে প্রায় ৫ লাখ নামজারি মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে।

 বৃহস্পতিবার (২২ মে) ভূমিসেবা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র সচিব এ তথ্য জানাান।

তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের ভূমি সেবা ডিজিটাল রূপান্তরের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ভূমিসেবায় ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম নাগরিকদের জন্য স্বস্তিদায়ক। হয়রানিমুক্ত ও জনবান্ধব ভূমি সেবা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে ভূমি মন্ত্রণালয় বদ্ধপরিকর। সে লক্ষ্য অর্জনে মন্ত্রণালয় প্রযুক্তিগতভাবে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নামজারী, ভূমি উন্নয়ন করা, পর্চা ও নকশা সংগ্রহ ব্যবস্থাপনা শতভাগ অনলাইন ভিত্তিক ও ক্যাশলেস করা হয়েছে। যে কোন নাগরিক পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে যেকোনো সময় সপ্তাহের সাতদিনে দিবারাত্রি চব্বিশ ঘণ্টাই কল সেন্টার ও নাগরিক ভূমিসেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করতে পারছেন।

দেশব্যাপী ভূমি উন্নয়ন কর শতভাগ অনলাইনে আদায় করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভূমিসেবার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস)। তথা পেমেন্ট গেটওয়েসহ অর্থ বিভাগের এ-চালান সিস্টেমের ফলে নাগরিকের অনলাইন সিস্টেমে পরিশোধিত ফি তাৎক্ষণিকভাবে সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে। পুরোপুরি অনলাইন হওয়ার ফলে ভূমিসেবা থেকে রাজস্ব আয় বহুগুণে বেড়েছে। ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের সঙ্গে সঙ্গে নাগরিকরা তাৎক্ষণিকভাবে অনলাইনে কিউআর কোডসমৃদ্ধ একটি দাখিলা প্রাপ্ত হচ্ছেন, যা সর্বত্র গ্রহণযোগ্য। সারাদেশের অনলাইনে আদায়কৃত ফি সরাসরি ড্যাশবোর্ডে প্রদর্শিত হচ্ছে। অচিরেই বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের জন্য ড্যাশবোর্ড চালু করা হবে।

সিনিয়র সচিব বলেন, বর্তমানে অনলাইনে প্রতি মাসে প্রায় ৫ লাখ নামজারি মামলা নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। তিনটি পার্বত্য জেলা ছাড়া সারাদেশের মোট ৫১৬টি উপজেলা ও সার্কেল ভূমি অফিস এবং ৩ হাজার ৪৬৭টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ই-নামজারি চালু হয়েছে। নামজারি সাত থেকে ২৮ কর্মদিবসের মধ্যে সম্পন্ন করা হচ্ছে।
২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ১৫ মে পর্যন্ত নামজারি সিস্টেম থেকে অনলাইনে প্রায় ২৯০ কোটি ২২ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ভূমি উন্নয়ন কর থেকে প্রতিদিন ৩-৪ লাখ টাকা এবং অনলাইন খতিয়ান থেকে প্রতিমাসে গড়ে ৩ লাখ ২১ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিনিয়র সচিব।

বর্তমানে ৬ কোটি ৫০ লাখের বেশি খতিয়ান অনলাইনে রয়েছে জানিয়ে সালেহ আহমেদ বলেন, মর্টগেজ জমির ডেটাবেজ, ওয়ারিশান সিস্টেম, অনলাইন শুনানি, অনলাইন খতিয়ান সিস্টেমের সঙ্গে ই-নামজারি সিস্টেমের আন্তঃসংযোগ স্থাপিত হয়েছে। এরইমধ্যে অনলাইন সিস্টেমে রাজস্ব মামলা পরিচালনা শুরু হয়েছে, মামলার ডেটা ব্যাংক তৈরি করা হয়েছে এবং জেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এ পর্যন্ত প্রায় ৫ কোটি ৭০ লাখ হোল্ডিং ডেটা ম্যানুয়াল থেকে ডিজিটালে রূপান্তরিত হয়েছে। নাগরিককে অনলাইনে দাখিলা দেওয়া হয়েছে প্রায় এক কোটি ১০ লাখ। প্রতিদিন সার্ভরসহ অন্যান্য ব্যবস্থা সচল থাকলে দিনে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা সম্ভব।

ভূমি সচিব বলেন, সাধারণ নাগরিকদের অনলাইন সেবা সহায়তার জন্য ঢাকা জেলায় ল্যান্ড সার্ভিস সেন্টারের (এলএসএফসি) মাধ্যমে নাগরিকদের ভূমিসেবা দিতে এজেন্ট নিয়োগের পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগে শীগগির এ কার্যক্রম শুরু করা হবে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় সমগ্র বাংলাদেশের এক লাখ ১২ হাজার ৩৮ টি ম্যাপকে ডিজিটাইজ করাসহ স্যাটেলাইট ইমেজ কেনা হচ্ছে। এই ম্যাপের ওপরে স্যাটেলাইট ইমেজ বসিয়ে প্লটভিত্তিক জমির শ্রেণির একটি তথ্যভান্ডার তৈরি হচ্ছে বলেও জানান সিনিয়র সচিব।

তিনি আরও জানান; প্রতিদিন ই-পর্চা থেকে সরকারের কোষাগারে প্রায় ১৪-১৮ লাখ টাকা জমা হয়। জুলাই-২৪ থেকে মে-২৫ পর্যন্ত ই-পর্চা থেকে সরকারের কোষাগারে জমা পড়েছে ৪৫ কোটি টাকা। ডাক বিভাগের মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় ১২ লাখ খতিয়ান এবং ১১ হাজারের অধিক মৌজা ম্যাপ জনগণের ঠিকানায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ইউনিয়ন ভূমি অফিসসমূহের কর্মপরিবেশ উন্নতকরণ, রেকর্ডপত্র সংরক্ষণ সুবিধা বৃদ্ধিকরণের লক্ষ্যে সারাদেশে ১৩৩০ টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ করা হবে এবং ১৫০টি সমন্বিত উপজেলা ভূমি কমপ্লেক্স নির্মাণকল্পে ডিপিপি প্রণীত হয়েছে।

২০২৬ সাল নাগাদ ভূমি মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য উল্লেখ্য করে সিনিয়র সচিব বলেন; ভূমি জরিপ একটি জটিল কাজ। এই কাজটি কম সময়ে নির্ভূলভাবে করার জন্য ড্রোন ব্যবহার করে করা হবে। খুব প্রয়োজন ছাড়া ভূমি অফিসে যেতে হবে না। এনআইডি দিয়েই পাওয়া যাবে জমির সকল তথ্য। কৃষি ও বনভূমি রক্ষায় নীতিমালা প্রণয়নের কথাও জানান সিনিয়র সচিব। রাজস্ব মামলা ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের মাধ্যমে সরকারি সম্পত্তি রক্ষা।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাগ্রতা সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং নাগরিকের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় একটি স্বচ্ছ, দক্ষ, আধুনিক ও টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জনবান্ধব ভূমি ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠার আশাবাদ পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান এজেএম সালাউদ্দিন নাগরী; ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান মুহম্মদ ইব্রাহিম; ভুমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমানসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।



ডেল্টা টাইমস/সিআর

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com