ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়ে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি
নিজস্ব প্রতিবেদক:
|
ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়ে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি তিন মাস আগে, অর্থাৎ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। সে হিসেবে মাত্র তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। রোববার (১৫ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ঋণের নামে ব্যাংক লুট ও সেই অর্থ পাচারের কারণে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। জামানতবিহীন কিছু ঋণ কু-ঋণে পরিণত হওয়ায় খেলাপি ঋণ ‘লাফিয়ে বাড়ছে’, যা এখন বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ শেষে মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। তুলনামূলকভাবে, ২০২৪ সালের মার্চে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা তৎকালীন বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। অর্থাৎ এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪০ কোটি টাকা — দ্বিগুণেরও বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বহুদিন ধরে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতারা খেলাপি হলেও ব্যাংকগুলো তা গোপন রাখত। তবে অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা—এটি সম্পূর্ণ চিত্র নয়। তাদের মতে, প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। জানা গেছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়া ব্যাংকগুলো এখন প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করতে শুরু করেছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে খেলাপি ঋণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এছাড়া, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপ, নাসা গ্রুপসহ আরও কয়েকটি প্রভাবশালী ব্যবসায়িক গোষ্ঠীও এখন ঋণখেলাপি তালিকায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, যদি শক্তিশালী আইন, স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ না করা হয়, তবে এই ঋণখেলাপি সংকট দেশীয় অর্থনীতিকে মারাত্মক বিপদের মুখে ফেলবে।
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |