|
সহিংসতা ও উস্কানি: ভোটের আগে গণতন্ত্র ঝুঁকির মুখে
আবুল কালাম আজাদ
|
![]() সহিংসতা ও উস্কানি: ভোটের আগে গণতন্ত্র ঝুঁকির মুখে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচন একটি উৎসব। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি সম্ভব হচ্ছে না। সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত, ঘর থেকে বের হওয়া নিয়ে শঙ্কিত এবং ভোটের মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বাভাবিক অধিকারও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে স্বতঃস্ফূর্ত, নিরাপদ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা করেছে। কিন্তু এখন যা ঘটছে, তা সেই আশা ভেঙে দিচ্ছে। মিডিয়ার ভূমিকা এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। অনেক সংবাদমাধ্যম খবর কেটে, বিকৃত করে বা আংশিকভাবে প্রচার করছে। কখনো ভিউ বাড়ানোই উদ্দেশ্য, কখনো দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ করা। ফলে সাধারণ মানুষ সঠিক তথ্য পাচ্ছে না। মিডিয়ার পক্ষপাতিত্ব এক দলকে নির্দোষ, অন্যকে দোষী হিসেবে উপস্থাপন করছে। সংবাদ বিকৃতির এই প্রবণতা সামাজিক বিভ্রান্তি এবং উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। প্রধান কারণগুলো স্পষ্ট। প্রথমত, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো সহিংসতা এবং ক্ষমতার লড়াইকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে দেখছে। নির্বাচনের সময় সহিংসতা, উত্তেজনা এবং ভীতি ছড়ানোই হয়ে যাচ্ছে প্রধান কর্মকাণ্ড। নেতারা ভোটের আগে কর্মীদের উত্তেজিত রাখার জন্য উস্কানিমূলক বক্তব্য ব্যবহার করছেন। এর ফলে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত, ভোট দেওয়ার পরিবেশ অনিশ্চিত। দ্বিতীয়ত, প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু বাস্তবে তা যথাযথভাবে হচ্ছে না। পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কার্যকর তদারকি নেই। সংঘর্ষ এবং সহিংসতার ঘটনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। অপরাধীরা শাস্তিমুক্ত থেকে যাচ্ছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছে। রাজনৈতিক সহিংসতা প্রশাসনের উদাসীনতা এবং অপ্রস্তুতিকে আরও উস্কে দিয়েছে। তৃতীয়ত, সামাজিক সচেতনতার অভাব। মানুষ আতঙ্কিত হলেও সরাসরি কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। পরিবার, সন্তান, ব্যবসা—সবই ঝুঁকির মধ্যে। সহিংসতা সামাজিক সম্পর্ককে দুর্বল করছে। মানুষের মধ্যে অসহযোগিতা ও distrust বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে নাগরিকদের দায়িত্বশীল আচরণ একান্ত প্রয়োজন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তা পর্যাপ্ত নয়। চতুর্থত, মিডিয়ার দায়িত্বহীনতা। সামাজিক মাধ্যম এবং প্রচলিত সংবাদমাধ্যমে খবর কেটে বা বিকৃতভাবে প্রচার করা হচ্ছে। প্রাসঙ্গিক তথ্য পরিবর্তন বা অপসারণের ফলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষ কখনো কখনো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। মিডিয়ার পক্ষপাতিত্ব এবং তথ্য বিকৃতি সংঘাতের মাত্রা আরও বাড়াচ্ছে। পঞ্চমত, রাজনৈতিক দলগুলোর মনোভাব। দলগুলো ক্ষমতা অর্জন এবং ভোটের ফলাফলকে কেন্দ্র করে কাজ করছে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রক্রিয়া তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। নিজের স্বার্থে সহিংসতা ছড়ানো এবং অস্থিরতা বৃদ্ধি করাই এখন প্রধান লক্ষ্য। দেশের জনগণ আতঙ্কিত হলেও দলগুলো সেই বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ ভোট দিতে চায়, কিন্তু নিরাপদ ভোটের পরিবেশ নেই। ভোট মানে গণতন্ত্রের উৎসব, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তা সম্ভব হচ্ছে না। দেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে স্বতঃস্ফূর্ত ও সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করছে। নির্বাচনের আগে সহিংসতা, অশান্তি এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা সেই আশা ভেঙে দিচ্ছে। নির্বাচন শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠান নয়; এটি গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের মাধ্যম। ভোটের মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধিত্ব নির্বাচন করে এবং দেশের দিকনির্দেশ নির্ধারণ করে। কিন্তু সহিংসতা এবং রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে জনগণ এই অধিকার পুরোপুরি প্রয়োগ করতে পারছে না। সমাধান সুস্পষ্ট। প্রতিটি নাগরিকের সচেতনতা অপরিহার্য। রাজনৈতিক সহিংসতা থেকে দূরে থাকা, আইন মেনে চলা, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া—এসব অত্যাবশ্যক। পরিবার, সমাজ এবং নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অপরিহার্য। রাষ্ট্রের ভূমিকা অপরিহার্য। প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখবে, প্রতিটি সংঘাত ঠেকাবে এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। রাজনৈতিক দলগুলো শান্তিপূর্ণ আচরণ নিশ্চিত করবে। মিডিয়া দায়িত্বশীল হবে, সত্য প্রকাশ করবে এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে না। নাগরিক সচেতনতা, প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ এবং রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল আচরণ মিলেই সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ ফিরবে। ভবিষ্যৎ গণতন্ত্র নির্ভর করছে এই সময়ের দায়িত্বশীল আচরণের ওপর। ভোটের আগে তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচনী পরিবেশ স্বাভাবিক করা, সহিংসতা বন্ধ করা, জনগণকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা—এগুলো সময়ের চূড়ান্ত দাবি। সচেতনতা, দায়িত্ব, সততা এবং আইনশৃঙ্খলার মধ্যে মিলেই দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পারবে। সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, গণতন্ত্র জাগ্রত হবে। না হলে দেশের মানুষ ভয়, বিভ্রান্তি এবং প্রতারণার শিকার হবে। শেষ পর্যন্ত বলা যায়, ভোটের আগে তফসিল ঘোষণার অপ্রতুলতা, রাজনৈতিক সহিংসতা, মিডিয়ার দায়িত্বহীনতা এবং নাগরিক সচেতনতার অভাব—সব মিলিয়ে দেশের পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর। এখনই প্রয়োজন সকলে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করা। রাজনৈতিক দল, প্রশাসন, মিডিয়া এবং সাধারণ মানুষ—সবার সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। একত্রে কাজ করলে দেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং নিরাপদ ভোটের পরিবেশ ফিরবে। এখন সময় এসেছে একত্রে দায়িত্ব নেওয়ার। না হলে গণতন্ত্র হবে একবারের স্বপ্ন, আর ভোটের আনন্দ কেবল অজুহাতমুক্ত আতঙ্কের ছায়া। দেশের মানুষ শান্তি, স্বাভাবিকতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার চায়—এটি সকলের দায়িত্ব নিশ্চিত করা। লেখক : যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ও কলাম ডেল্টা টাইমস্ |
| « পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |