র্যাবিস: একবার হলে আর বাঁচানো সম্ভব নয়
এস. এম. এম. মুসাব্বির উদ্দিন:
|
![]() র্যাবিস: একবার হলে আর বাঁচানো সম্ভব নয় র্যাবিস কীভাবে সংক্রমিত হয় র্যাবিসের মূল কারণ হলো Rabies virus, যা সাধারণত সংক্রমিত কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, বেজি বা বাদুড়ের কামড়ের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। আক্রান্ত প্রাণীর লালা যদি ক্ষত, কাটা জায়গা বা চোখ–নাক–মুখের শ্লেষ্মায় লাগে, ভাইরাস সংক্রমণ ঘটতে পারে। শরীরে প্রবেশের পর ভাইরাস স্নায়ুতন্ত্র ধরে মস্তিষ্কে পৌঁছায় এবং সেখানে মারাত্মক ক্ষতি শুরু করে। সাধারণত ১–৩ মাসের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি কয়েক দিন বা এক বছর পরও প্রকাশ পেতে পারে। র্যাবিসের লক্ষণ প্রাথমিকভাবে র্যাবিসের উপসর্গ সাধারণ সর্দি-জ্বরের মতো—জ্বর, মাথাব্যথা, অবসাদ, ক্ষতস্থানে ব্যথা বা ঝিনঝিন অনুভূতি। এরপর ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর উপসর্গ দেখা দেয়: প্রচণ্ড অস্থিরতা ও মানসিক বিভ্রান্তি পানি বা বাতাস দেখলেই গলায় খিঁচুনি (হাইড্রোফোবিয়া ও এরোফোবিয়া) পেশির খিঁচুনি, পক্ষাঘাত শ্বাসকষ্ট ও কোমা এই পর্যায়ে পৌঁছালে রোগীকে আর বাঁচানো সম্ভব হয় না। কেন বাঁচানো যায় না র্যাবিস ভাইরাস একবার মস্তিষ্কে পৌঁছে গেলে স্নায়ুকোষ ধ্বংস শুরু করে। বর্তমানে এমন কোনো ওষুধ নেই যা ভাইরাসটিকে মস্তিষ্ক থেকে সরিয়ে দিতে পারে। গবেষণা চললেও কার্যকর কোনো নিরাময় এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। তাই একে বলা হয় “অচিকিৎসাযোগ্য” বা incurable। প্রতিরোধই একমাত্র উপায় র্যাবিস প্রতিরোধ করা সম্ভব তিনটি ধাপে: প্রাণীর টিকা দেওয়া: পোষা কুকুর ও বিড়ালকে নিয়মিত ভ্যাকসিন দিতে হবে। কামড়ানোর পর ব্যবস্থা: কোনো প্রাণী কামড়ালে বা আঁচড়ালে দ্রুত ক্ষতস্থানে কমপক্ষে ১৫ মিনিট সাবান ও পানি দিয়ে ধুতে হবে। এরপর হাসপাতাল গিয়ে Post Exposure Prophylaxis (PEP) টিকা নিতে হবে। আগাম সুরক্ষা: যারা নিয়মিত প্রাণীর সঙ্গে কাজ করেন (যেমন ভেটেরিনারিয়ান, ল্যাব কর্মী, কুকুর নিয়ন্ত্রণ কর্মী), তাদের Pre Exposure Prophylaxis টিকা নেওয়া উচিত। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় কয়েক লাখ মানুষ কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয় এবং কয়েকশ মানুষ র্যাবিসে মারা যায়। সরকার বিনামূল্যে ভ্যাকসিন প্রদান করছে, কিন্তু অনেকেই সময়মতো চিকিৎসা না নেওয়ায় প্রাণ হারাচ্ছেন। তাই জনসচেতনতা বাড়ানো একান্ত জরুরি। “র্যাবিস একবার হলে আর বাঁচানো সম্ভব নয়”—এই ভয়ঙ্কর সত্যটাই আমাদের সচেতন হতে বাধ্য করে। প্রাণীর কামড় বা আঁচড়কে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। সময়মতো ক্ষত পরিষ্কার করা, চিকিৎসকের কাছে যাওয়া এবং ভ্যাকসিন নেওয়াই একমাত্র পথ এই শতভাগ প্রাণঘাতী রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার। লেখক: শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ, ঢাকা। ডেল্টা টাইমস/এস. এম. এম. মুসাব্বির উদ্দিন/সিআর/এমই |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |