|
গোপালগঞ্জে সংঘর্ষে এনসিপি-আ.লীগ দুপক্ষই দায়ী: তদন্ত কমিটি
ডেল্টা টাইমস্ ডেস্ক:
|
![]() গোপালগঞ্জে সংঘর্ষে এনসিপি-আ.লীগ দুপক্ষই দায়ী: তদন্ত কমিটি উসকানি, গুজবসহ দুপক্ষের অনঢ় অবস্থান এবং মাঠের বাস্তবতার সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্যের সমন্বয় করে পরিস্থিতি অনুযায়ী যথাসময়ে প্রশাসনের সিদ্ধান্তহীনতার অনিবার্য পরিণতি ছিল গোপালগঞ্জের সংঘাত–– বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সরকার গঠিত তদন্ত কমিশনের একজন সদস্য সাজ্জাদ সিদ্দিকী বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, এ তদন্ত প্রতিবেদনে ৮-১০টি সুপারিশ এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে পাঁচটি করণীয় তুলে ধরা হয়েছে। তবে গোপালগঞ্জে কীভাবে ও কার গুলিতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়টি কমিশন তদন্ত করেনি। গুলির বিষয়টি তদন্তকারী কমিশনের টিওআর বা কার্যপরিধির মধ্যে ছিল না। এ বছর ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষে গুলিতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পর সরকার সাবেক একজন বিচারপতিকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে। ঘটনার মূল কারণ কী, কারা এর পেছনে দায়ী, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে করণীয় কী তার সুপারিশ দেওয়ার দায়িত্ব ছিল এ কমিশনের। গত সেপ্টেম্বরের শেষে ওই তদন্ত প্রতিবেদন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে দাখিল করা হয়েছে। যদিও সরকার গোপালগঞ্জের তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে এখনও প্রকাশ করেনি। তদন্ত কমিশনের সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাজ্জাদ সিদ্দিকী গোপালগঞ্জের তদন্ত সম্পর্কে জানিয়েছেন। গোপালগঞ্জে ১৬ জুলাই এনসিপির সমাবেশ ঘিরে দুপক্ষই মুখোমুখী অবস্থান নিয়েছিল। তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে এনসিপির সারা দেশে সমাবেশ যখন গোপালগঞ্জে নাম পরিবর্তন হয়ে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ হয়, সেখান থেকেই সংকট বেড়েছে। তদন্ত কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ সিদ্দিকী বলেন, এই যে নাম পরিবর্তন করাটা মনে হয়েছে গোপালগঞ্জবাসীর ভুল বোঝাবুঝি-উসকানি হিসেবে কাজ করেছে। তারই প্রেক্ষিতে প্রোগ্রামের ঠিক আগের দিন এবং ওইদিন সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের গাড়িতে হামলা, কিংবা ওসির গাড়িতে হামলা ককটেল বিস্ফোরণ। বিভিন্ন জায়গায় এই সবগুলো মনে হচ্ছিল যেন এনসিপির প্রোগ্রামটাকে তারা যেকোনোভাবে প্রতিহত করবে। তিনি বলেন, এই যে করতে দেবে না এবং এনসিপির পক্ষ থেকে করবেই–– এই যে বাস্তবতার সঙ্গে এনসিপির চিন্তার দূরত্ব, আর গোপালগঞ্জবাসীর বিশেষ এক ধরনের ট্রাইবালিজম এবং আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকদের পাঁচ আগস্ট পরবর্তী সারা দেশের পরিবর্তিত বাস্তবতা মেনে না নেওয়া; এই দুটো বিষয় আসলে কনফ্লিক্টটাকে কিংবা এই যে কার্নেজ যেটা হলো এটাকে একেবারে ইনএভিটেবল (অলঙ্ঘনীয়) করে তুলেছিল। ওইদিন গোপালগঞ্জে যাওয়ার আগেই স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, এনসিপির নেতৃত্বে শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি ভাঙা হতে পারে। এনসিপির সমাবেশের শেষ পর্যায়ে ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ’ স্লোগান এলাকাবাসীকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। সিদ্দিকী বলেন, এনসিপির সমাবেশে ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ’ স্লোগান এলাকাবাসীকে এর ভিত্তিতে আরও উসকে দিয়েছিল। বিফোর এন্ডিং দ্যা প্রোগ্রাম, যেটা ছিল ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ’, এই মুজিববাদ মুর্দাবাদ ডিক্টাম একাডেমিকেলি আমরা যেভাবে রিড করি, গ্রাম ও মফস্বলের সাধারণ মানুষ কিন্তু সেভাবে রিড করে নাই। তাদের কাছে এটার ব্যাখ্যাটা ছিল এরকম–– যে হয়তো তারা শেখ মুজিবের মাজারে এখন আক্রমণ করবে, এরকম মিসকন্সিভড একটা বিষয় আমাদের অ্যানালাইসিসে এসেছে। তিনি আরও বলেন, তাদের মিসপারসেপশন (ভুল বোঝা) বা অজ্ঞতা বলেন, তারা এ বিষয়টাকে এইভাবে ধারণ করার প্রেক্ষিতে মসজিদে ঘোষণা করে গণজমায়েত করে এনসিপি নেতাকর্মীদের উপর আক্রমণ করা এবং পরিশেষে মিলিটারির হস্তক্ষেপে তাদের (এনিসিপি নেতাদের) প্রাণে বেঁচে যাওয়া, সর্বোপরি কনফ্লিক্টটি ভায়োলেন্ট ওয়েতে রিজলুশনটা (সহিংসতায় মোড় নেওয়া) কারোরই কাম্য ছিল না। ফলে এ কনফ্লিক্টটি অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছিল যেখানে দুপক্ষই রেসপন্সিবল- এরকমই একটা বিষয় দাঁড়িয়েছে। গোপালগঞ্জে ওই সংঘর্ষের আগে থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যেই পালটাপালটি অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। সবমিলিয়ে স্থানীয় প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাসহ রাজনৈতিক দলের মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের একটা ঘাটতি পেয়েছে তদন্ত কমিশন। জড়িত কারা গোপালগঞ্জের ঘটনার তদন্তে কমিশন নির্ভরযোগ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত ছবি, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণসহ প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। কমিশন সদস্য সাজ্জাদ সিদ্দিকী জানান, যাদের নাম এসেছে কিংবা ভিডিও ফুটেজ বা পত্রপত্রিকায় যাদের অ্যাকশনে আসতে দেখা গেছে, তাদের বেশিরভাগেরই রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। দলীয় লোকজনের নেতৃত্বেই স্থানীয় লোকজন সমবেত হয়েছে এবং তাদের উপরে আক্রমণ করেছে। ডেল্টা টাইমস্/আইইউ |
| « পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |