|
শিশুর সুষ্ঠু মানসিক বিকাশে পারিবারিক শিক্ষা
জসীমউদ্দীন ইতি
|
![]() শিশুর সুষ্ঠু মানসিক বিকাশে পারিবারিক শিক্ষা পরিবার বলতে বিশেষ করে মা-বাবার সান্নিধ্যই একটি শিশুকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। জন্মের পর থেকে মা-বাবাই শিশুর সার্বিক পর্যবেক্ষণ করেন। শিশুর প্রতিটি জিনিসের হাতেখড়ি হয় মা-বাবার কাছেই। শিশুরা তার চারপাশের ঘটে যাওয়া খুব সূক্ষ্ম বিষয়াবলিও সহজেই ধারণ করতে পারে। এ সময় মা-বাবাসহ পরিবারের সবাই শিশুর বিষয়ে যত্নবান ও সচেতন হওয়া জরুরি। কারণ সে যা কিছু দেখছে সবকিছু নিজের ব্রেইনে ধারণ করছে। বর্তমানে দেশের শহরাঞ্চলে দেখা যায়, অধিকাংশ মা-বাবা চাকরিজীবী হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে শিশুকে যথাযথ যত্ন ও সময় দিতে সক্ষম হচ্ছেন না। এর ফলে শিশুকে যার তত্ত্বাবধানে রাখা হয় সে তাকেই প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুসরণ করে। আচার-আচরণ, কথা বলার ধরন, মন-মানসিকতা প্রভৃতিসহ একটি শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে যত প্রভাব লক্ষণীয়, সবকিছুই তত্ত্বাবধায়কের আদলেই হয়ে ওঠে। এজন্য শুরু থেকেই মা-বাবার উচিত শিশুকে পারিবারিক নিয়ম-শৃঙ্খলা, নৈতিক শিক্ষা, ভালোবাসা, সহযোগিতা, সহানুভূতি প্রভৃতি বিষয়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। পারিবারিক শিক্ষার পাশাপাশি পরিবারের আর্থসামাজিক অবস্থান, সামাজিক শ্রেণি, পারিবারিক কাঠামো, মা-বাবার সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়গুলো শিশুর আচরণ অনুধ্যানের ক্ষেত্রে সমহারে জড়িত শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে পরিবারের শিক্ষা সম্পর্কে বিগত দশকগুলোতে অনেক লেখালেখি ও গবেষণা হয়েছে। সব লেখক, গবেষক স্বীকার করেছেন যে, পরিবারের শিক্ষা ও সার্বিক সহযোগিতা ছাড়া শিশুর বিকাশে সুষ্ঠুধারা ও সন্তোষজনক অগ্রগতি সম্ভব নয়। একটি শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য উত্তম পরিচর্যার বিকল্প নেই। সম্প্রতি আরও গুরুতর বিষয় লক্ষণীয় যে, অনেক মায়েরা সন্তান যখন কান্না করে, জেদ ধরে, তখন তাদের কান্না থামানোর জন্য মোবাইল ফোনকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেন। স্মার্টফোন তাদের ব্রেইনকে সংকুচিত করে। আসক্তি বৃদ্ধি করে। সন্তান যখন রাগ করে, কান্না করে, জেদ করে, তখন তাদের ভালোভাবে আদর, সোহাগ, মায়া-মমতা দেওয়া উচিত অথবা বিভিন্ন ধরনের খেলনা আছে সেগুলো দেওয়া উচিত। সবচেয়ে বেশি তাদের সময় দেওয়া উচিত। তারা জানতে চায়, শিখতে চায়, তারা যেভাবে চায় সেভাবে শেখানো উচিত। তাদের সঠিক পথ দেখানো উচিত। কিন্তু এগুলোর পরিবর্তে যখন মোবাইল ফোন হাতে দেয়, সে আস্তে আস্তে মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে ওঠে। ইউটিউব, ফেসবুক, মোবাইল গেমে আসক্ত হয়ে যায়। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় শিশুর আচরণ আস্তে আস্তে উগ্র হয়ে ওঠে। সে এটিকে নিজের গণ্ডি হিসেবে ধরে নেয়। সে সময়মতো মোবাইল ফোন না পেলে অনেক অঘটনও ঘটিয়ে বসে। এজন্য অভিভাবকদের উচিত শিশুদের স্মার্টফোন থেকে দূরে রাখা এবং আদর, স্নেহ, মায়া-মমতায় গড়ে তোলা। প্রতিটি শিশুর মধ্যে লুকিয়ে আছে নানা ধরনের প্রতিভা। তার প্রতিভা বিকশিত হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে পরিবার, মা-বাবা এবং শিক্ষকের। তাকে ভালোভাবে পরিচর্যা করে আগামীর কর্ণধার হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তার সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। সেজন্য পারিবারিক শিক্ষার বিকল্প নেই। লেখক : সাংবাদিক, দৈনিক শিক্ষা ডটকম। |
| « পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |