বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র সংকট: একটি সূক্ষ্ম আলোচনা
সাইফুল বিন শরীফ
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:৩৩ পিএম আপডেট: ১৫.০৯.২০২০ ১২:৩৭ পিএম

গণতন্ত্র কোনো রাষ্ট্রের এমন একটি শাসনব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে নীতিনির্ধারণ এবং সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার থাকে। 'গণতন্ত্র' শব্দের বাংলা পরিভাষা হলো জনগণের শাসন বা জনগণের অধিকার। একুশ শতকের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং আলোচিত ও সমালোচিত শব্দ হলো 'গণতন্ত্র'। আমরা বর্তমানে কাগজে কলমে সর্বত্র 'গণতন্ত্র' শব্দটিকে গুলিয়ে ফেলেছি, কিন্তু বাস্তবে গণতন্ত্রের 'গ' ও বিদ্যমান আছে কিনা তা সারা বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টিপাত করলেই বুঝা যায়।

গণতন্ত্রের জনক এরিস্টটল গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দিয়ে বলেছেন: "একটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সার্বভৌম ক্ষমতা সমগ্র জনগণের হাতে ন্যস্ত থাকে"।  গণতন্ত্রের উৎকৃষ্ট উদাহরণ দিয়ে থিউডোর পার্কার বলেছেন: "চিন্তার স্বাধীনতা থাকবে, কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে, কাজের স্বাধীনতা থাকবে, উপাসনার স্বাধীনতা থাকবে- এই হলো গণতন্ত্রের মতাদর্শ"। গণতন্ত্রের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা দিয়েছেন জর্জ আব্রাহাম লিংকন: গণতন্ত্র হল "জনগণের দ্বারা গঠিত, জনগণের জন্য, এবং জনগণের সরকার"।

আজ ১৫ ই সেপ্টেম্বর "বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস"। বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক ধারাটি শত শত বর্ষ  ধরে প্রচলিত হয়ে আসলেও এর নির্দিষ্ট কোন দিবস ছিল না। আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস জাতিসংঘ কর্তৃক ২০০৭ সাল থেকে সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে গণতন্ত্র সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি এবং গণতন্ত্র চর্চাকে উৎসাহিত করার জন্য প্রচলিত একটি বিশেষ দিন, যা প্রতিবছর ১৫ ই সেপ্টেম্বর পালিত হয়। আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উৎযাপনের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তনিও গুতারেস করোনা মোকাবেলায় গণতন্ত্রের ভূমিকা সম্পর্কে বলেছেন: "বিশ্ব কোভিড-১৯-এর মুখোমুখি হওয়ার সাথে সাথে মহামারির প্রতিক্রিয়ার জন্য তথ্যের অবাধ প্রবাহ, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে গণতন্ত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ"।
লেখক: সাইফুল বিন শরীফ

লেখক: সাইফুল বিন শরীফ

এবারের আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসের মূল বিষয় হলো গণতান্ত্রিক ধারার রাষ্ট্র সমূহে কোভিড-১৯ প্রতিক্রিয়াতে স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিতার অংশগ্রহণ। মানবাধিকারের প্রতি আরো শ্রদ্ধার সাথে সমান, অন্তর্ভুক্ত ও টেকসই বিশ্ব গড়ে তোলা।এবং যেকোনো জরুরি ব্যাবস্থা আইনি,আনুপাতিক, প্রয়োজনীয় এবং বৈষম্যমূলক কিনা তা নিশ্চিত করা। জাতিসংঘের মহাসচিব আরো বলেন, "মানবাধিকার এবং আইনের শাসন রক্ষার জন্য তাত্ক্ষণিক হুমকির জন্য আনুপাতিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো"। 

বর্তমানে সারা বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র সংকট ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। গণতন্ত্রের কথা বলে চলছে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। গণতন্ত্রের আড়ালে চলছে একনায়কতন্ত্র। বিশ্বমোড়ল যারা মুখ দিয়ে গণতন্ত্রের ফেনা বের করে সর্বত্র, একুশ শতকে এসে তাদের ঘরেই গণতন্ত্র আত্মহত্যা করছে। কোভিড-১৯ কালে অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতির পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে গণতন্ত্রের। দূর্বল গণতন্ত্রের রাষ্ট্র সমূহে গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করা হচ্ছে। নেই আইনের শাসন, নেই সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা,নেই মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা। "আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস" বিশ্বের গণতান্ত্রিক অবস্থা পর্যালোচনা করার একটি সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।

গণতান্ত্রিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য গণতন্ত্রের সাথে যে সব উপাদান বিদ্যমান থাকা প্রয়োজন তা হলো: স্বাধীনতার মূল্যবোধ, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা, সার্বজনীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে জনগণের অধিকার বাস্তবায়ন করা। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের যোগসূত্র মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার ২১/৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে,
" জনগণের ইচ্ছা সরকারের কর্তৃত্বের ভিত্তি হবে; এটি পর্যায়ক্রমিক ও আসল নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকাশ করা হবে যা সার্বজনীন ও সমান ভোটাধিকারের দ্বারা হবে এবং গোপনীয় ভোট বা সমতুল্য ভোটদান পদ্ধতি দ্বারা অনুষ্ঠিত হবে।"
ব্রিটেন ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) এর বার্ষিক গণতন্ত্র সূচকে এ বছর শীর্ষে অবস্থান করছে নরওয়ে(স্কোর:৯.৮৭) বাংলাদেশ ৮ধাপ এগিয়ে বর্তমান অবস্থান করছে ৮০তম। বিশ্বের বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ ভারত ১০ধাপ পিছিয়ে বর্তমান অবস্থান ৫১তম।

যারা নিজেদের গণতন্ত্রের রক্ষক দাবি করে সেই আমেরিকা গণতন্ত্রের দোহায় দিয়ে কিভাবে মধ্যপ্রাচ্যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে এবং চালিয়ে যাচ্ছে সে সম্পর্কে সারা বিশ্ব অবগত থাকলেও মুখ খুলছেনা। পৃথিবীর বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ ভারত কিভাবে কাশ্মীরে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, সিএএ এবং এনআরসি বিল পাশ করে ভারতের মুসলিমদের কিভাবে উগ্রবাদী হিন্দুদের রোষানলে ফেলেছে সে সম্পর্কে অবশ্যই সবাই অবগত। চীন তো রীতিমত উইগোর মুসলিমদের উপর সাইলেন্ট কিলিং মিশন পরিচালনা করছে। ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূ খন্ডে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে।

বর্তমানে গণতন্ত্র শব্দটি শুধু মাত্র বক্তৃতা, সেমিনার, কিংবা কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ আছে। গণতন্ত্রের চলমান এই সঙ্কটের সমাধান করতে হলে এগিয়ে আসতে হবে যারা নিজেদের প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে দাবি করে। সর্বোপরি সারা বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক দ্বারা পরিপূর্ণভাবে ফিরে আসুক এটায় কামনা। মানুষ ফিরে পাক মানুষের কথা বলার পূর্ণ অধিকার।   [মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]


সাইফুল বিন শরীফ
শিক্ষার্থী: বাংলা বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া।
ইমেইল: saifuliu96@gmail.com

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-২২৬৬৩৯০১৮, ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-২২৬৬৩৯০১৮, ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com