সংবিধান ও আইন : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ
আব্দুর রউফ
|
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজ থেকে বিচ্যুত কোন মানুষ সভ্য হতে পারে না। মানুষ নিজের প্রয়োজনেই সমাজ আবিস্কার করেছে। সেই সমাজ ব্যবস্থাপনার জন্য দরকার হয় কিছু নিয়ম-নীতির। যে নিয়ম-নীতির মাধ্যমে সেই সমাজের মধ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা যায়। আর এই সমাজবদ্ধ আত্মবিকাশের জন্য মানুষের প্রয়োজন হয় কতগুলো সুযোগ-সুবিধার। সাধারণ ভাবে আমরা এই সুযোগ-সুবিধা গুলোকে নাগরিক অধিকার বলতে পারি। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবে সকল নাগরিকেরই কিছু অধিকার রয়েছে। আর এই অধিকার গুলো বুঝে পাওয়ার জন্য মানুষ রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। আধুনিক রাষ্ট্রের মূল্যায়ন হয়ে থাকে রাষ্ট্র কর্তৃক নাগরিকদের অধিকার বুঝিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকদের যেমন অধিকার রয়েছে, তেমন রাষ্ট্রের প্রতি সেই নাগরিকের কিছু কর্তব্য রয়েছে। রাষ্ট্রের অধিকার গুলো একজন নাগরিককে ভোগ করতে হলে, রাষ্ট্রের প্রতি সেই নাগরিকের কিছু কর্তব্য পালন করতে হবে। এই অধিকার ও কর্তব্য পালনের মধ্য দিয়েই নাগরিক জীবন সুন্দর ও সার্থক হয়ে উঠে। নাগরিকের স্বাধীনতা ও শৃংখলাবদ্ধ জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে সংবিধান ও আইনের গুরুত্ব অপরিসীম। আইন একজন নাগরিকের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন-যাপনকে সুসংহত করে। একজন সুনাগরিক হিসেবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বসবাস করতে হলে রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের যে দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে তার মধ্য অন্যতম, রাষ্ট্রের সংবিধান ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তা মান্য করা। প্রত্যেক নাগরিকের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হলো রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা। রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ছাড়া কেউ কোন রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব দাবি করতে পারে না। তেমনিভাবে রাষ্ট্রের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রর্দশন করা সকল নাগরিকের একান্ত দায়িত্ব। আইন না মানলে রাষ্ট্রের শান্তি শান্তি-শৃঙ্খলা বিনিষ্ট হয়। তাই প্রত্যেক নাগরিকের জীবন ও সম্পদ নিরাপদ রাখার জন্য আইন মেনে চলা একজন নাগরিকের অন্যতম কর্তব্য। ![]() আব্দুর রউফ অপরাধ প্রবণতা মানুষের চরিত্রের একটি বৈশিষ্ট্য। মানুষ তো ভুলের মধ্যেই রয়েছে। রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন এবং সংবিধান মেনে চলার ক্ষেত্রে জনসাধারনের অনিহা বেড়েই চলছে। এই ভুলের নানা প্রকৃতি রয়েছে। কবি রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘ভ্রান্তি কিছুতেই ঘোচেনা। তিনি ভ্রান্তির যে সংজ্ঞাই দিয়ে থাকুন না কেন, কথাতো এটাই সত্যি যে, মানুষ বারবার ভুল করে। এই ভুল ধরিয়ে দেয়াই আইনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। মানুষকে মনে করিয়ে দেয়া যাতে সে ভুল না করে। এখানেই শাস্তি বা বিচার বিভাগের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যে বৈশ্বিক মহামারী করোনার বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে সেই আশঙ্কা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করেছেন। সরকার প্রধান ঘোষণা করলেন মাস্ক ব্যবহার না করলে আইনের আওতায় আনা হবে। আইন প্রয়োগে ভ্রাম্যমান আদালত চালু করার নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই সাথে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা আছে, বাড়ির বাহিরে গেলে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক। অথচ সেই আইন বা প্রজ্ঞাপন শুধু কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে। কিছু কিছু জরুরী আইন মানা ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে এরকম উদাসীনতা বরাবরই লক্ষ করা যায়। ইদেনিং আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া প্রবণতা ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। কেউ যদি কোন অপরাধ করে তাহলে দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচার হবে। কিছু ক্ষেত্রে সেই অপরাধীর আইন অনুযায়ী বিচার হওয়ার সুযোগ থাকলেও জনগণ তা মানছে না। অনেকেই সহিংস ভাবে নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন নোংরা কাদা ছোড়াছুড়ি হয় তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এমন অকথ্য ভাষায় একে অপরকে আক্রমন করা হয় যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। অথচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করার সরকার একটা নীতিমালা দিয়েছে। সেই নীতিমালা মানার ব্যাপারে কোন সচেতনতা নেই। তাই বাংলাদেশের অপরাধ গুলোকে প্রর্যালোচনা করে সেই ব্যাপারে সংবিধান ও আইন কি বলে সেই বিষয়ে সচেতনা তৈরি করতে হবে। সংবিধান ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে প্রতিটি নাগরিককে তার পরিবার থেকে গড়ে তুলতে হবে। আইনের প্রতি সম্মান দেখানো নাগরিকদের অন্যতম দায়িত্ব ও বর্তব্য। দেশের নাগরিকগণ যদি আইন অমান্য করে তাহলে সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। স্বাভাবিক জীবনের ব্যাঘাত ঘটে। যার ফলাফল ইতোমধ্য দেশবাসী দেখেছে। সংবিধান ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হওয়ার করনে এই সহিংস ঘটনাগুলো ঘটছে। তাই সুষ্ঠু জীবনযাপন, শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রত্যেক নাগরিককে সংবিধান ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে জীবন-যাপন করতে হবে। [মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন] আব্দুর রউফ শিক্ষার্থী : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ই-মেইল : aroufiubd@gmail.com ডেল্টা টাইমস্/আব্দুর রউফ/সিআর/জেড এইচ
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |