বিজয়ের প্রায় অর্ধশত বছরের প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা
আরোশি আঁখি
|
১৬ ডিসেম্বর বাঙালির এক আনন্দের বিজয় উৎসব।দেশের সব শ্রেণির মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে এই দিনে আমরা লাভ করি স্বাধীন বাংলাদেশ। আমরা কথা বলতে পারি প্রাণ খুলে। হৃদয় ভরে শ্বাস নিতে পারি। বাতাসের সাথে মিশে যায় সালাম,রফিক জব্বার,বরকত সহ লাখ লাখ মানুষের লাশের গন্ধ। হৃদয় ভরে বিজয় দিবসে স্মরণ করি এই বীর দের। তাদেরকে ভুলে গেলে ভুলতে হবে বাংলাদেশ কে। এত কষ্টে অর্জিত স্বাধীনতা কি আমরা পেরেছি রক্ষা করতে? না আমরা পারিনি দেশকে পুরোপুরি দাসত্ব মুক্ত করতে। আমরা পারিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধরে বাঁচতে। লাল সবুজের এই পতাকা অর্জনের প্রায় অর্ধশত বছর পেরিয়ে। বিজয়ের ৪৯ তম বছরে আমরা এখন দাঁড়িয়ে। এই বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার যুদ্ধ একেবারেই সহজ ছিলো না।গোটা দেশের সকল পেশার মানুষ ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে এক হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো কেবল স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে। ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ জীবন দিয়ে এই স্বাধীনতার সাক্ষ্য রেখে গেছে। যা ভুলে যাওয়া মোটেও সহজ নয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ এর মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে অর্জিত হয় এই স্বাধীন বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিলো তরণ সমাজের। তবে বিজয়ের ৪৯ বছরে দাঁড়িয়ে এখনও তরুণদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি স্বপ্নের ন্যায় সুন্দর করে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এই ৪৯ বছরে দেশে চোখে পড়ার মত রয়েছে অনেক অর্জন তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী তা অতিমাত্রায় সামান্য বলা চলে। ![]() ছবি: সংগৃহীত কোথাও একটা বৈষম্য রয়ে গেছে যা হয়তো বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ প্রাপ্তিতে বাঁধা দেয়। আমাদের বিজয়ের স্বাদ তখনই পূর্ণতা পাবে যখন দেশের সকল পেশার মানুষগুলো সঠিক সম্মান পাবে। আর পাবে মৌলিক চাহিদা পূরণের অধিকার। দূর্ণীতির কবল থেকে যেদিন দেশটি মুক্ত হবে৷ তরূণ সমাজ যেদিন হবে মাদকমুক্ত।কেবল ২০২১ সালের ভিশন পূরণ করতে নয় বাস্তবিক অর্থে দেশের মানুষগুলোকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষা খাতে দূর্ণীতি বলে কোন শব্দ থাকবে না। প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার মত ঘৃণিত অপরাধ ঘটবে না। অর্থনীতির মাপকাঠিতে যেভাবে একটা রাষ্ট্রকে উন্নত ঘোষণা করা হয় ঠিক সেভাবে বিচার না করে যদি গোটা দেশের সামাজিক,অর্থনেতিক, শিক্ষাভিত্তিক উন্নয়ন ঘটিয়ে একটা মেলবন্ধনের সমন্বয় করে দেশের উন্নয়ন ঘটানো যায় তবে হয়তো দেশ সত্যিকার অর্থে উন্নয়নের মুখ দেখবে। স্বাধীন দেশে বসবাস করেও দেশের সর্বস্তরের মানুষ এখনও বাকস্বাধীনতা পায়নি। খেঁটে খাওয়া মানুষ গুলো মেহনতি সকল মানুষ গুলো এখনও চাপা পড়ে আছে দারিদ্র্যের কষাঘাতে। মুক্তিযুদ্ধের সেই সমতা এখন কোথায়? কেন তারা আজ বঞ্চিত? যেখানে দেশজ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ১৯৭০ সালে ছিলো ৫৭% সেখানে বিয়জের পরেও তা ধরে রাখতে পারেনি আমরা। ১৯৮০ সালে তার হার হয় ২৯% এবং ১৯৯০ সালে গিয়ে তা কেবল ২৪% এ এসে দাড়ায়। বিজয়ের অর্ধশত বছরে এসেও দেশের মোট আয়ের বন্টনে রয়েছে অসমতা। রয়েছে ধর্মে বর্ণে বিবাদ। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন বেকার তৈরীর কারখানা নামে পরিচিত হতে চলেছে। একের পর এক গড়ে উঠছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তবে সেখানে থাকছেনা গবেষণার সুযোগ, পর্যাপ্ত লাইব্রেরী সুবিধা বা নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তোলার সব সুযোগ সুবিধা। দেশের শিক্ষা উন্নয়ন এর মানদন্ড যতদিন কেবল জিপিএ-৫ দ্বারা এবং গতানুগতিক সিজিপিএ দ্বারা বিচার করা হবে ততদিন দেশ উন্নতির মুখ দেখতে সক্ষম হবে না। ভালোবাসার এই চিরসবুজ বাংলাদেশকে উন্নয়নের সর্বোচ্ছ শিখরে পৌছে নিতে প্রয়োজন সবাইকে কাঁধে কাঁধ রেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হৃদয়ে লালন করা এবং সেদিকে ধাবিত হওয়া। শিক্ষিত নয় বরং সুশিক্ষিত নাগরিক গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। নৈতিক শিক্ষার উন্নয়ন ঘটিয়ে দেশকে সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে হবে। ধনী, দরিদ্রের বৈষম্য দূর করতে হবে। সম্পদের বন্টন সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হচ্ছে কি না তদারকি করতে হবে। আমাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশ এর অর্জন আমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে। দেশপ্রেম জাগ্রত করতে শিশুদের কে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাতে হবে। সর্বোপরি বিজয়ের আনন্দ যুগ যুগ ধরে রাখতে সব শ্রেণি এবং পেশার মানুষকে একই সুত্রে গ্রথিত করে দেশের তরে কাজ করতে হবে। আরোশি আঁখি ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ। মেইলঃ +aroshiislamakhi@gmail.com ডেল্টা টাইমস্/আরোশি আঁখি/সিআর/জেড এইচ
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |