মুজিব শতবর্ষের গুরুত্ব ও আমাদের প্রত্যাশা
মাহমুদা টুম্পা
|
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী একটি বিশেষ সময়কালের অর্জন ও গৌরবের সঙ্গে যুক্ত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর সুগভীর তাৎপর্যের সঙ্গে এক সময় যোগ হবে উন্নয়ন ও অগ্রগতির একাধিক মাইলফলক। বঙ্গবন্ধু একটি সমৃদ্ধ সোনার বাংলার স্বপ্নযাত্রা বাস্তবায়নে বহুতর কর্মযজ্ঞে নিবেদিত করেছিলেন। তার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই স্বপ্নযাত্রার গতিপথ আরও বিস্তৃত পরিসরে রূপ লাভ করে। তাছাড়া সমৃদ্ধির পথে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। আজ আর্থসামাজিক উন্নয়নের নানা বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশ বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে। দেশে যে কয়টি মাইলফলক এই সময়ে অতিক্রান্ত হবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী,ডিজিটাল বাংলাদেশ ও মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ। এ সবই বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ও প্রত্যয়ের ধারাবাহিকতার দৃষ্টান্ত। জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যয়কে যুক্ত করা হয়েছে যা এসব আয়োজনকে সুদূরপ্রসারী তাৎপর্যে অভিষিক্ত করে। ফলে মুজিবশতবর্ষের গুরুত্ব ব্যাপক বিস্তৃত ও সুদূরপ্রসারী। জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন পৃথিবীতে কোন নতুন ঘটনা নয়। এর আগেও অনেক বিখ্যাতজনের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন সম্পর্কে জানি। বর্তমানে মাহাত্ম্য গান্ধীর ১৫০ তম জন্মশতবার্ষিকীর উদযাপন চলছে। ইতোপূর্বে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধির জন্মশতবার্ষিকীও উদযাপন করা হয়েছে। নিকট অতীতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মশতবার্ষিকী ভারত ও বাংলাদেশ যৌথ আয়োজনে উদযাপন করেছে। বঙ্গবন্ধু তার সাহস, অনমনীয় দৃঢ়তা এবং অসাধারণ বাগ্মীতার অভূতপূর্ব সমন্বয়ে বাঙালির শ্রেষ্ঠতম নেতা হিসেবে আবিভূত হয়েছিলেন। জেল,জুলুম, অত্যাচার কিছুই তাকে বাঙালির মুক্তির স্বপ্নযাত্রা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। ![]() মাহমুদা টুম্পা সম্প্রতি জেলখানা থেকে প্রকাশিত একটি গ্রন্থে দেখা যায়, ৩০৫৩ দিন তিনি জেলখানায় অতিবাহিত করেছেন। সেই যে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ভাষা আন্দোলনের গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, তারপর থেকে জেলখানাই হয়ে উঠেছিল তার নিত্য আবাসস্থল। অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা এই দুটি অসাধারণ গ্রন্থে এবং সম্প্রতি প্রকাশিত তার Secret Documents Of Intelligence Branch on Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman গ্রন্থে আমরা এসব দিনের অনেক খুটিনাটি সম্পর্কে জানতে পারি। বঙ্গবন্ধু সাধারণ মানুষ থেকে অসাধারণ উচ্চতায় আসীন হয়েছেন। রূপান্তরিত হয়েছেন ব্যক্তি থেকে সমষ্টিতে। তার ৭ মার্চের ভাষণ আজ ইউনেস্কোর মেমোরি অব দা ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভুক্ত। এ ভাষণ বাঙালির ইতিহাসের বাক বদলের ভাষণ। কারণ এর আগে বাঙালিকে কেউ এভাবে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে নি,কেউ এভাবে স্বাধীনতার ডাক নেয় নি,তার ডাকেই বাঙালি ঝাপিয়ে পড়েছিল দেশমাতৃকার শৃঙ্খল মোচনে। এ ভাষণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ যুদ্ধাবস্থার ভাষণ। একদিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর রক্তচক্ষু ও তাদের ট্যাঙ্ক কামান প্রস্তুত অন্যদিকে নিরস্ত্র বাঙালির হৃদয়ে স্বাধীনতার আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছেন অকুতোভয় এক মহানায়ক। ৭ মার্চের অগ্নিগর্ভ ভাষণে তিনি আবির্ভূত হয়েছেন জাতির একমাত্র প্রতীক হিসেবে। সেদিন তিনি শুধু ব্যক্তি নন, শুধু নেতা নন,বাঙালি জাতিসত্তার হাজার বছরের অতিক্রান্ত ইতিহাসকে ধারণ করে নিজেই রূপান্তরিত হয়েছেন জনতার কন্ঠস্বরে। প্রথম সার্বভৌম বাঙালি হিসেবে জনতার শক্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার উদাহরণ ও তিনি সৃষ্টি করছেন। তাই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে ধ্বংসস্তূপ থেকে পৌরাণিক ফিনিক্স পাখির মত বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জেগে উঠেছিল নতুন দেশ - বাংলাদেশ। আরাধ্য সোনার বাংলা গঠনের লক্ষ্যে দ্বিতীয় বিপ্লবের শুরু করেন তিনি। ঘাতকের বুলেটে তার মহাপ্রাণ ঘটেছে। কিন্তু আমাদের জীবনাচরণে, প্রাত্যহিকতায় চিরকালীন বাতিঘরের মতো তিনি সমুজ্জ্বল। নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি প্রতি মূহুর্তে আবির্ভূত হচ্ছেন প্রেরণার দীপশিখা হিসেবে। আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের যে অভিযাত্রা, সেখানে তিনি সাহস ও আলোকবর্তিকা। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী তাই বাঙালির কাছে নিছক জন্মদিন নয়, বাঙালির কাছে মুক্তিদাতার প্রতি সম্মান জানানোর বিরল সুযোগের। সেই সঙ্গে যে জাতিকে তিনি সৃষ্টি করছেন,তার অববায় দিয়েছেন এবং বিশ্বসত্তার গর্বিত অংশে রূপায়িত করেছেন, তার প্রতির সেই জাতির সম্মলিত কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সময় এটি। জীবনদ্দশায় তিনি শোষিতদের নেতা হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। ফিদেল কাস্ত্রোর মতো বিশ্ব নায়কের চোখে তিনি ছিলেন হিমালয়। বিশ্ব মিডিয়ায় তিনি ছিলেন রাজনীতির কবি। বঙ্গবন্ধু যুগপৎ জাতির নেতা এবং বিশ্বনেতা। এই জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের মানুষ এবং বিশ্বের মুক্তিকামী, স্বাধীনতাকামী মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানায়,ভালোবাসা জানায়। বাংলাদেশের সাধারণ জণগণের প্রত্যাশা, এ আয়োজন একদিকে হবে গৌরবের নিরিখে ইতিহাসের উত্তরাধিকার এবং অন্যদিকে স্মৃতিময় ও উৎসবমুখর। প্রকৃতার্থে বঙ্গবন্ধুর আজন্ম লালিত ও আমৃত্যু আরাধ্য 'সোনার বাংলা' গড়ার দৃড় প্রত্যয়ে জাতীয় জাগরণকে আরও ত্বরান্বিত ও উদ্বুদ্ধ করা এবং বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে মাথা উচু করে দাঁড়াবে এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা। যার অন্তরালে তাৎপর্যময় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আশা, আকাঙ্খা বাস্তবায়নের মাইলফলক স্বরূপ 'বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী'। (প্রকাশিত
লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, ডেল্টা
টাইমস্ কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার ডেল্টা
টাইমস্ কর্তৃপক্ষ নেবে না। ) মাহমুদা টুম্পা শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সদস্য, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ডেল্টা টাইমস্/মাহমুদা টুম্পা/সিআর/জেড এইচ
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |