প্রথম পর্ব
জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত শব্দকোষ: প্রচলিত পরিভাষার ব্যাখ্যা
শালিনী কুমারী :
|
![]() ইলাস্ট্রেশন: ভিপিন স্কেচপ্লোর : দ্য থার্ড পোল দ্য থার্ড পোল-এ প্রকাশিত নিবন্ধটির প্রথম পর্ব আজ ডেল্টা টাইমস-এর পাঠকদের জন্য হবহু তুলে ধরা হলো : একথা অনস্বিকার্য যে জলবায়ু নিয়ে যে কোনো ধরনের পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে গবেষক এবং নীতিনির্ধারকরা বিজ্ঞানভিত্তিক, তথ্যনির্ভর এবং কারিগরিভাবে পরীক্ষিত তথ্যের উপর নির্ভর করে থাকেন সাধারণ মানুষের জন্য সচরাচর যা বোধগম্য হয়না। ফলে সমাজের একটি বিরাট অংশ জলবায়ু বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকে। আর বিষয়টিকে সামনে রেখে জলবায়ু সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণাকে আরো জোরদার করতে শব্দকোষটি প্রকাশ করেছে দ্য থার্ড পোল। এই শব্দকোষটিতে জলবায়ু সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট তথ্য, সংজ্ঞা এবং অন্যান্য বিষয়গুলো সহজ ভাষায় তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা দ্য থার্ড পোলের এই ‘এক্সপ্লেইনারটি’ (ব্যাখ্যা) জলবায়ু নিয়ে সাধারণ মানুষের জানার পরিধিকে আরো বিস্তৃত করবে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ সাধারণ জনগণ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানতে পারবে যা তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহনে সহায়তা করবে বলে আমরা মনে করি। ১.৫সে. এবং ২সে. ২০২২ সালে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ছিল শিল্প বিপ্লবের আগের তুলনায় ১.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। উষ্ণতার এই মাত্রা বৃদ্ধির ফলে মানুষ, বন্যপ্রাণী এবং সমগ্র প্রাকৃতিক ব্যবস্থায় এর নেতিবাচক প্রভাব বাড়তে থাকে। প্রকৃতিতে তীব্র তাপপ্রবাহের পাশপাশি বাড়তে থাকে অস্বাভাবিক বন্যা এবং খরা, পাল্টে যায় বৃষ্টিপাতের ধরণ। এর ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ নানা ধরনের প্রভাবে মানুষের জীবন ও প্রকৃতিতে অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসতে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবেলায় ২০১৫ সালে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ প্যারিস চুক্তি সইয়ের মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। আর এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্য ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় ‘প্রচেষ্টা’ চালিয়ে যেতে সচেষ্ট হয়। আসলে ১.৫সি এবং ২সি-এর প্রভাবের ক্ষেত্রে পার্থক্য অনেক বেশি। বিশ্বের তাপমাত্রা মাত্র ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাওয়ার অর্থ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দৃশ্যমান প্রভাবের মাত্রা বহুগুনে বেড়ে যাবে। এমনকি চলমান পরিস্থিতি তার সব ধরনের বিপদসীমাকে অতিক্রম করবে। ইন্টার গর্ভণমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর (আইপিসিসি) একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখতে হলেে ২০২৫ সালের মধ্যে গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পাবে এবং সেই হারকে ২০৩০ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৪৩ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে । তবে নানা প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, এই লক্ষ্য অর্জনের পথে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত আইপিসিসির প্রতিবেদন অনুসারে, গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনের মাত্রা হ্রাসের প্রবনতা চলমান সত্বেও এই শতাব্দীতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির মাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সে. ছাড়িয়ে যেতে পারে। অভিযোজন ‘জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে অভিযোজন’ বলতে পরিবেশ, সমাজ, জনস্বাস্থ্য এবং অর্থনীতিতে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাবগুলো কমিয়ে আনতে সরকার এবং সাধারন মানুষ যেসব পদক্ষেপ নিয়ে থাকে তা বোঝায়। এই প্রভাবগুলির অর্থপূর্ণ অভিযোজন পদ্ধতি বিভিন্ন দেশ, অঞ্চল এবং সম্প্রদায়ের চাহিদার সাথে সমন্বয় রেখে নির্ধারণ করা উচিত। দক্ষিণ এশিয়ায় যেসব অভিযোজন পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে খরা-প্রতিরোধী ফসলের নতুন জাত উদ্ভাবন, উপকূলীয় শহর বা নদীর আশেপাশে বসবাসকারী সম্প্রদায়ের সুরক্ষার জন্য উন্নত বন্যা প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা প্রচলন, জলবায়ু পরিবর্তন-সম্পর্কিত দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে পূর্বাভাস ব্যবস্থার উন্নতি এবং ম্যানগ্রোভ বনের মতো প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা, যা চরম আবহাওয়ার বিরুদ্ধে একটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করতে পারে। অভিবাসন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পায় এবং বন্যা, তাপপ্রবাহ এবং খরার মতো ঘন ঘন এবং তীব্র চরম আবহাওয়ার ঘটনা ঘটতে থাকে। এই বিরুপ পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে বিশ্বজুড়ে অনেক মানুষ উন্নত জীবনযাপনের সন্ধানে বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। একে প্রায়ই জলবায়ু অভিবাসন বলা হয়। তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বৃদ্ধির সাথে সাথে জলবায়ু স্থানান্তর আগামী দশকগুলোতে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। অ্যানথ্রোপজেনিক (নৃতাত্ত্বিক) ‘অ্যানথ্রোপজেনিক’ (নৃতাত্বিক) পরিভাষার অর্থ হচ্ছে এমন সব বিষয় যা কেবল মানুষের দ্বারা সৃষ্ট। ঐতিহাসিকভাবে পৃথিবীতে হাজার বছর ধরে ধীরে ধীরে জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে। তবে ১৮০০ শতক থেকে মানুষের জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহারসহ বনভূমি উজার করার মতো কার্যকলাপ বায়ুমণ্ডলে গ্যাসের ভারসাম্য পরিবর্তিত হয়েছে, যার ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বিষয়গুলো জলবায়ু পরিবর্তনের নৃতাত্ত্বিক বা ‘অ্যানথ্রোপজেনিক’ বিষয়সমূহের উদাহরণ। আরবান হিট আইল্যান্ড ইফেক্ট আরবান হিট আইল্যান্ডের প্রভাব বলতে বোঝায় যেখানে শহুরে এলাকায় তাপমাত্রা আশেপাশের অঞ্চলের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এর সম্ভাব্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে কংক্রিটের মতো কৃত্রিম পৃষ্ঠ এবং তাপ শোষণকারী রাস্তা; জ্বালানি পোড়ানো এবং অন্যান্য মানবসৃষ্ট কার্যক্রমের সময় উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং সবুজ উদ্ভিদের অভাব। এই পরিস্থিতিতে শহর বা নগরে তাপপ্রবাহের তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে। আকস্মিক বন্যা আকস্মিক বন্যা হল তীব্র এবং হঠাৎ বন্যা, যা অল্প সময়ের মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাত বা তুষার বা বরফ দ্রুত গলে যাওয়ার মতো ঘটনাগুলির কারনে সৃষ্টি হয়ে থাকে। আকস্মিক বন্যা গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে পারে কারণ সেগুলো কোনো সতর্কতা ছাড়াই সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময়ই বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়া বা প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা সম্ভব হয়ে উঠে না। ভারতীয় হিমালয়ে, ১৯৮৬ সাল থেকে ১৭টি বড় আকস্মিক বন্যার ঘটনা ঘটে। বিজ্ঞানীরা বলেন, গত ২০ বছরে হিমালয়ে আকস্মিক বন্যা বৃদ্ধির জন্য বনে তীব্র দাবানল একটি অন্যতম প্রধান কারণ। ইকোসিস্টেম (বাস্তুসংস্থান) একটি ইকোসিস্টেম হল প্রকৃতির একটি জৈবিক প্রক্রিয়া যার মধ্যে রয়েছে প্রাণী, উদ্ভিদ এবং অণুজীব ইত্যাদি। এই প্রক্রিয়ায় প্রকৃতির সবগুলো উপাদান একটি অপরটির সাথে যুক্ত এবং নির্ভরশীল। যেমন পানি এবং মাটি। ইকোসিস্টেম ব্যাপক হতে পারে – যেমন বনভূমি। আবার অনেক ক্ষুদ্রও হতে পারে। এল নিনো এল নিনো হল একটি জলবায়ু ধরণ যেখানে পূর্ব-মধ্য গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্রশান্ত মহাসাগরের পৃষ্ঠের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে উষ্ণ হয়ে যায়। এটি সারা বিশ্বে বৃষ্টিপাতের ধরণ এবং আবহাওয়াকে প্রভাবিত করে এবং বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। এল নিনো হল এল নিনো-সাউদার্ন অসিলেশন (ENSO) নামক একটি ঘটনার অংশ। আর প্রকৃতির এই ধরনের বিপরীত শীতল পর্যায়কে লা নিনা বলা হয়। এল নিনোর ঘটনাগুলো নিয়মিতভাবে না ঘটলেও গড়ে প্রতি দুই থেকে সাত বছরে এটি ঘটে থাকে। এনার্জি ট্রানজিশন বিদ্যুৎ বা জ্বালানী খাত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জীবাশ্ম জ্বালানির উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রাথমিক কারণ। কয়লা, তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে সৌর এবং বায়ুর মতো নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসের দিকে স্থানান্তরকে মূলত এনার্জি ট্রানজিশন বলা হয়ে থাকে। এর ফলে কার্বন নির্গমন অপেক্ষাকৃতভাবে হ্রাস পায়। ওজোন স্তর ওজোন একটি গ্যাস অণু যা তিনটি অক্সিজেন পরমাণু দ্বারা গঠিত। ওজোন স্তর পৃথিবীর স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের একটি অংশ, যেখানে বায়ুমণ্ডলে ৯০% ওজোন পাওয়া যায়। এই ওজোন স্তরটি পৃথিবীর জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনী বিকিরণ শোষণ করে। ১৯৭০-এর দশকে গবেষণায় দেখা গেছে যে ওজোন স্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে, পৃথিবীতে জীবনের জন্য সম্ভাব্য গুরুতর ঝুঁকি রয়েছে। সিএফসি এবং এইচসিএফসিসহ ওজোন স্তরের হ্রাসের জন্য দায়ী গ্যাসগুলি মন্ট্রিল প্রোটোকলের বৈশ্বিক পরিবেশ চুক্তির অধীনে পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হচ্ছে। এই রাসায়নিকের ব্যবহার সীমিত করার ক্ষেত্রে এই চুক্তির সাফল্যের কারণে, ওজোন স্তর এখন পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে। কার্বন ক্রেডিট এবং অফসেট কার্বন ক্রেডিট এবং কার্বন অফসেট দুটি ধরনের কার্বন ট্রেডিং বা কার্বন বাণিজ্য। কার্বন ক্রেডিটের মাধ্যমে সরকারসমূহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়। যেসব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান তাদের ‘নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম কার্বন নির্গত করে -তারা অতিরিক্ত কার্বন ক্রেডিট দ্বারা অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সাথে ব্যবসা করতে পারে। এর মাধ্যমে মূলত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্বন নির্গমন হ্রাসে উৎসাহিত করা হয়। কার্বন অফসেট সংক্রান্ত ধারনাটি মূলত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে মাথায় রেখে চালু করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যদি একটি প্রতিষ্ঠান বায়ুমণ্ডলে কার্বনের মাত্রা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বৃক্ষরোপন করে থাকে তাহলে তাকে কার্বন অফসেট হিসাবে গণনা করা হয়। পাশাপাশি এই প্রক্রিয়ায় সেই নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানটি অন্যান্য সমমনা প্রতিষ্ঠানের সাথে বাণিজ্য করতে পারে যারা একইভাবে কার্বন নির্গমনকে সহনীয় মাত্রায় রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ব্যক্তি পর্যায়েও কার্বন ‘অফসেট’ করা সম্ভব, যেমন যে কেউই উচ্চ কার্বন কার্যকলাপ বন্ধ করা অর্থাৎ বিমানে চড়া বন্ধ করে কিংবা কার্বন অপসারণ প্রকল্পে অর্থ দান করে এই প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত হতে পারে। ![]() ছবিতে ভারতের নয়াদিল্লির আকাশে উড়ছে বিমান। এয়ারলাইন কোম্পানিগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্তপ্ত গ্যাসের নির্গমনকে ‘অফসেট’ করতে কার্বন ক্রেডিট বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে। (ছবি: ডেভিডোভিচ মিখাইল /অ্যালামি) কার্বন ট্রেডিংকে অনেকেই বিতর্কিত একটি বিষয় বলে মনে করেন। সমালোচকদের যুক্তি, বাস্তবে কার্বন বাজার ধনী দেশ, কোম্পানি এবং ব্যক্তিদের নির্গমন হ্রাসের আপাত একটি উপায় হয়ত প্রদর্শন করে কিন্তু আসলে এটি প্রদর্শন করে তারা দূষণ কার্যক্রম কিন্তু একপ্রকারে চালিয়ে যায়।পাশাপাশি এই ট্রেডিং যথেষ্ট কার্যকরভাবে পরিচালিত হচ্ছে কিনা সেটি নির্ধারণ করা কিছুটা জটিল। কার্বন অফসেট প্রকল্পগুলির প্রকৃত অর্থে কার্বন অপসারণ করতে সক্ষম হচ্ছে কিনা তা নিয়েও যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। অনেকের মতে, এই প্রক্রিয়ায় যে জলবায়ু পরিবর্তনে যে ইতিবাচক বিষয়গুলোর কথা বলা হয় তা অনেকটাই অতিরঞ্জিত। কার্বন ক্যাপচার, ইউটিলাইজেশন এবং স্টোরেজ (সিসিএস এবং সিসিইউএস) কার্বন ক্যাপচার এবং স্টোরেজ (সিসিএস) প্রক্রিয়ায় শিল্প-কারখানায় উৎপাদিত কার্বন ডাই অক্সাইডকে সরাসরি ধরে রেখে ভূগর্ভে প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয় যাতে এটি বায়ুমণ্ডলে পৌঁছাতে না পারে। কার্বন ক্যাপচার, ইউটিলাইজেশন অ্যান্ড স্টোরেজ (সিসিইউএস) অ্যালকোহল, জৈব জ্বালানি, প্লাস্টিক বা কংক্রিটের মতো পণ্য উৎপাদনে ক্যাপচার করা কার্বন ব্যবহার করে আরও এক ধাপ এগিয়ে যায়। অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে,জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে কার্বন ক্যাপচার প্রযুক্তির যে বিশেষ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তা সঠিক নয়। বিশেষ করে শিল্প-কারখানায় জলবায়ু প্রভাব হ্রাস করে এই প্রক্রিয়ায় সহজেই দূষণকারী জ্বালানী বা উপকরণের ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব নয়। আইপিসিসির প্রতিবেদন অনুসারে সিসিএস প্রযুক্তিসমূহ হয়ত বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ সে. এর মধ্যে ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে আরো অনেকের মতে সিসিএস এবং সিসিইএস প্রযুক্তির কারনে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার থেকে সরে আসার প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হতে পারে এবং এই ধরনের প্রযুক্তির বেশিরভাগই যথেষ্ট পরীক্ষিত নয়। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জার্মানি, ফ্রান্স এবং নিউজিল্যান্ড সহ ১৭ টি দেশ এই মর্মে একমত হয় যে কার্বন ক্যাপচার প্রযুক্তির উপর নির্ভরতা সীমিত হওয়া উচিত কারণ এটি জীবাশ্ম জ্বালানি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার ক্ষেত্রে একটিমাত্র বিকল্প পহ্না হিসেবে পরীক্ষিত নয়। কার্বন ডাই অক্সাইডসম (CO2e) কার্বন ডাই অক্সাইড সম (CO2e) একটি পরিভাষা যার মাধ্যমে কেবল একটি একক ব্যবহার করে বিভিন্ন গ্রীনহাউস গ্যাসের প্রভাবকে তুলে ধরা হয়। একটি স্বল্প পরিমানে গ্যাস যা গ্রীনহাউস প্রভাবকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে যেমন, মিথেন। এতে কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়ে বহুগুণে বেশি CO2e থাকতে পারে। কার্বন ফুটপ্রিন্ট কার্বন ফুটপ্রিন্ট হচ্ছে একজন ব্যক্তি বা বস্তু প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কী গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপন্ন করে তাকে বুঝায়। অর্থাৎ তারা কী খায়, কীভাবে তারা ভ্রমণ করে, তারা কী ক্রয় করে এবং কীভাবে তাদের ব্যবহৃত বিদ্যুৎ পরিবেশে উঞ্চতা বৃদ্ধি করে থাকে সেসব বিষয়গুলোকেই মূলত কার্বন ফুটপ্রিন্টের মধ্যেম বিবেচনা করা হয়। কার্বন মার্কেট কার্বন ট্রেডিং মার্কেটের অধীনে, একটি দেশ বা কোম্পানি তার কার্বন নির্গমনকে একটি নির্দিষ্ট সম্মত স্তরের নিচে নামিয়ে অবশিষ্ট অংশ অন্যদের কাছে বিক্রি করতে পারে (কার্বন ক্রেডিট আকারে)। এটি তাদের কাছেই বিক্রি করা হয়ে থাকে যারা এখনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি নির্গমন করছে। বলতে গেলে এটি আসলে কার্বন নির্গমের এক ধরনের আর্থিক প্রণোদনা। কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণ (সিডিআর) এবং সিকোয়েস্টেশন কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণ (সিডিআর) এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইডকে বায়ু থেকে আটকে রাখা হয় যাতে এটি গ্রিনহাউস গ্যাস হিসাবে কাজ না করে। যখন এই কার্বন দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণ করা হয়, তখন একে বলা হয় কার্বন সিকোয়েস্ট্রেশন। কার্বন সিকোয়েস্টেশন মূলত প্রাকৃতিকভাবে ঘটে। জৈবিক প্রক্রিয়ায় মাটি, সমুদ্র, বন, তৃণভূমি এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড সঞ্চিত থাকে। তবে এটি কৃত্রিম প্রক্রিয়াতেও (কার্বন ক্যাপচার এবং স্টোরেজ প্রযুক্তি) সংরক্ষণ করা যেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে সিডিআর এবং কার্বন সিকোয়েস্টেশনএকটি অপরিহার্য হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত। আইপিসিসি তথ্য মতে, ” বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে ১.৫সে. এর মধ্যে সীমাবদ্ধ করতে সিডিআর প্রয়োজন”, বিশেষ করে ডিকার্বনাইজ করা কঠিন এমন “শিল্প, দূরপাল্লার পরিবহন এবং কৃষির মতো ক্ষেত্রে।” বেশিরভাগ দেশের জাতীয়নেট-জিরো পরিকল্পনাতে সিডিআর একটি প্রধানতম লক্ষ্য। কার্বন সিঙ্ক কার্বন সিঙ্ক প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম ভাবে কার্বন ডাই অক্সাইড সঞ্চয় করে থাকে। বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের অনুপাত নিয়ন্ত্রণে কার্বন সিঙ্কগুলি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রাকৃতিক বন, মহাসাগর, ভূমি, এবং জলাভূমি, এই সবই আসলে প্রাকৃতিক কার্বন সিঙ্ক। কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ প্রযুক্তি কৃত্রিম কার্বন সিঙ্ক হিসেবে কাজ করতে পারে। ক্লাইমেট চেঞ্জ (জলবায়ু পরিবর্তন) জাতিসংঘ অনুসারে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে তাপমাত্রা এবং আবহাওয়ার ধরণে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তন। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো এবং বনভূমি উজাড় করার মতো বিভিন্ন কর্মকান্ডের ফলে গ্রিনহাউস গ্যাস তৈরি হয়ে গড় বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ব্যাপক, যার মধ্যে রয়েছে অতি ঘন ঘন এবং তীব্র চরম আবহাওয়া, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা, চরম বা ব্যাহত বৃষ্টিপাত এবং মেরু ও পর্বত অঞ্চলে বরফ গলে যাওয়া। ক্লাইমেট জাস্টিস (জলবায়ু ন্যায্যতা) জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো ক্ষতিকর প্রভাবগুলো পৃথিবীর অনেক দেশেই বিদ্যমান যারা আসলে বৈশ্বিক নির্গমনে সর্বনিম্ন অবদান রেখেছে। অথচ এমন দেশগুলোই এখন জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর পরিণতির জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। জলবায়ু ন্যায়বিচার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে এক ধরনের ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবী তুলে ধরা হয়। কারণ এসব উন্নত দেশই জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে কার্বন নির্গমনের মাধ্যমে উন্নয়ন সাধন করেছে। ![]() ২০২২ সালের নভেম্বরে কপ২৭ সম্মেলনে প্রতিবাদকারীরা ধনী দেশগুলোর প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ জনগোষ্ঠিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আহ্বান জানায় । ছবি :ম্যারি জ্যাকমিন / গ্রিনপিস) ক্লাইমেট রেফিউজি (জলবায়ু উদ্বাস্তু) জলবায়ু উদ্বাস্তু হচ্ছে এমন ধরনের ব্যক্তি বা সম্প্রদায় যারা জলবায়ু পরিবর্তনের নানা নেতিবাচক প্রভাবের কারণে নিজ বাসস্থান ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়। এ ধরনের প্রভাবের মধ্য যেমন হতে পারে বন্যা বা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি। জলবায়ু উদ্বাস্তু সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক কোনো সংজ্ঞা নেই। জাতিসংঘের ব্যবহৃত শরণার্থীর সংজ্ঞা হচ্ছে – “যে ব্যক্তি যুদ্ধ, সহিংসতা, সংঘাত বা নিপীড়ন থেকে বাঁচতে পালিয়ে এসেছে এবং ভিন্ন একটি দেশে নিরাপত্তার আশায় আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করেছে।” প্রাকৃতিক বন্যা বা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে নিজ বাড়ি হারিয়ে অন্যত্র গমন করেছে তারা জাতিসংঘের এই সংজ্ঞার আওতায় পড়েন না। কপ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আলোচনায় ‘COP’ (কপ) বলতে জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের বার্ষিক সম্মলনকে বোঝানো হয়ে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বৈশ্বিক পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনার জন্য ১৯৯২ সালে ১৯৮টি সদস্য রাষ্ট্র এই কনভেনশনে স্বাক্ষর করে। কপ সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা আমাদের এই পৃথিবীর উষ্ণায়নের জন্য দায়ী গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসে কী পদক্ষেপ নিতে হবে এমন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকে। পাশপাশি এই সম্মলেন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে অভিযোজন এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলোর জন্য আরও সহনশীল হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে। সর্বশেষ কপ সম্মলেন (কপ ২৭) অনুষ্ঠিত হয় ২০২২ সালের নভেম্বরে মিশরের শার্ম আল-শেখ-এ। আর পরবর্তী কপ সম্মেলন (কপ ২৮) অনুষ্ঠিত হবে চলতি বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে (৩০ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর)। কিয়োটো প্রোটোকল জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসে ১৯৯৭ সালে কিয়োটো প্রোটোকল স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিটি ২০০৫ সালে কার্যকর হয় এবং ১৯২টি পক্ষ এতে স্বাক্ষর করে (যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিটি অনুমোদন করেনি)। কিয়োটো প্রোটোকল ঐতিহাসিক নির্গমন এবং অন্যান্য পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে শিল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক নির্গমন-হ্রাস লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। কিগালি সংশোধনী ওজোন স্তর সুরক্ষায় ১৯৮৭ সালে স্বাক্ষরিত হয় মন্ট্রিল প্রোটোকল যেটি পরে সংশোধন করা হয় ২০১৬ সালে রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালিতে। কিগালি সংশোধনীর লক্ষ্য হচ্ছে হাইড্রোফ্লুরোকার্বন (HFCs), শক্তিশালী গ্রীনহাউস গ্যাসের উৎপাদন ও ব্যবহার কমিয়ে আনা। ২০১৫ সালে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক পদক্ষেপের সমন্বয়ের জন্য প্রধান আন্তর্জাতিক চুক্তি হিসাবে প্যারিস চুক্তির দ্বারা কিয়োটো প্রোটোকলকে বাতিল করা হয়েছিল। ক্রায়োস্ফিয়ার ক্রায়োস্ফিয়ার শব্দটি গ্রহের সেই অঞ্চলগুকে বোঝায় যেখানে বেশিরভাগ পানি হিমায়িত আকারে থাকে, যেমন মেরু অঞ্চল এবং পার্বত্য অঞ্চল। বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশ্রেণী হিন্দুকুশ-হিমালয়য়ে হিমবাহ এবং নদী ও হ্রদে বরফের আকারে হিমায়িত পানি বিদ্যমান। গ্লসিয়াল লেক আউটবার্স্টসৃষ্ট বন্যা একটি হিমবাহী হ্রদ বিষ্ফােরণসৃষ্ট বন্যা হচ্ছে পর্বতে হিমবাহ থেকে গলিত পানি থেকে গঠিত একটি হ্রদ থেকে হঠাৎ করে পানির নির্গমন, যা বরফ (হিমবাহ দ্বারা বাহিত শিলা এবং পলি) দ্বারা আটকে থাকে। এই বন্যা ভূমিকম্প, তুষারপাত বা অত্যধিক জমে যাওয়ার বরফ উঞ্চ হয়ে যাবার কারণে হতে পারে। এই ধরনের প্রাকৃতিক ঘটনা প্রায়ই অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক, এবং হিমালয় অঞ্চলের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান হুমকি। গ্রিন হাইড্রোজেন এবং গ্রে হাইড্রোজেন যেহেতু ব্যবহারযোগ্য পরিমাণে গ্যাস হিসেবে প্রাকৃতিকভাবে হাইড্রোজেন পাওয়া যায় না, তাই এটিকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়। যে প্রক্রিয়ায় এটিকে তৈরি করা হয় তার নাম ইলেক্ট্রোলাইসিস। এর মাধ্যমে পানিকে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনে বিভক্ত করা হয়। যখন এই প্রক্রিয়াগুলো সৌর বা বায়ুচালিত শক্তির মতো বিশুদ্ধ উৎস ব্যবহার করে চালিত হয়, তখন একে সবুজ হাইড্রোজেন বলা হয়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে শক্তি ব্যবহার করে উৎপাদিত হাইড্রোজেনকে গ্রে হাইড্রোজেন বলা হয়। আরও জানতে এখানে পড়ুন। গ্রীনহাউস গ্যাস এবং গ্রীনহাউস প্রভাব কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রোজেন অক্সাইড, সিএফসি, এইচসিএফসি এবং এইচএফসি গ্রিনহাউস গ্যাস হিসাবে পরিচিত। এই গ্যাসগুলো বায়ুমণ্ডলে তাদের উপস্থিতির মাধ্যমে সূর্যের তাপকে আটকে রেখে গ্রিনহাউসের কাঁচের দেয়াল এবং ছাদের মতো পৃথিবীর চারপাশের বাতাসকে উষ্ণ করে। এটি গ্রিনহাউস প্রভাব। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর মতো কর্মকাণ্ডের ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের আধিক্য বাড়ছে। এটি গ্রিনহাউস প্রভাবকে শক্তিশালী করছে, আরও তাপ আটকে দিচ্ছে। ফলে পৃথিবী দিনকে দিন উষ্ণ হচ্ছে। গ্রীনওয়াশিং পরিবেশবাদী জে ওয়েস্টারভেল্ড ১৯৮৬ সালে গ্রীনওয়াশিং ধারনার প্রবর্তন করেন। এটি এমন একটি অনুশীলন যার মাধ্যমে একটি কারখানা বা কোম্পানি মনে করে যে তাদের পণ্য বা পরিষেবাগুলি পরিবেশ বান্ধব। অথচ বাস্তবে দেখা যায় সেগুলো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। ‘গ্রিনওয়াশিং’-এ জড়িত কারখানাগুলো পরিবেশ-বান্ধব পণ্য কেনার জন্য গ্রাহকদের মধ্যে এক ধরনের আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে। িকংবা সরকার বা সাধারন মানুষের ধারনাকে ধোঁকা দিতে নিজেদের উৎপাদনের ক্ষেত্রে তেমন কোনো পরিবর্তন না এনেই পরিবেশ বান্ধব পন্যের বাণিজ্য করে থাকে। জীববৈচিত্র্য একটি নির্দিষ্ট এলাকায় যত ধরনের প্রাণ বা জীবনের অস্তিত্ব পাওয়া যায় তাকে সেই অঞ্চলের বৈচিত্র্য বলে। এর মধ্যে থাকতে পারে যে কোনো ধরনের প্রাণী, গাছপালা এবং অণুজীব যা একটি বাস্তুতন্ত্রে একে অপরের সাথে সংযুক্ত, এবং এই সবগুলো অনুষঙ্গ মিলেই জীববৈচিত্র রচনা করে। পৃথিবীর সমস্ত প্রাণ এবং মানবতা রক্ষা করতে হলে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ খাদ্য, পানি এবং বিশুদ্ধ বায়ু সরবরাহ করার জন্য আমরা যে বাস্তুতন্ত্রের উপর নির্ভরশীল তা কেবলমাত্র তখনই কাজ করতে পারে যখন প্রকৃতিতে বিভিন্ন প্রজাতি পর্যাপ্ত সংখ্যকভাবে উপস্থিত থাকে। কিন্তু বর্তমানে জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন কেবলমাত্র মানুষের বিভিন্ন কর্মকান্ডের কারনে। গবেষণায় দেখা গেছে পৃথিবীতে প্রায় এক মিলিয়ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রজাতি বিলুপ্তির আশংকায় রয়েছে। পৃথিবীতে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পতিত হবার প্রধানতম কয়কেটি কারনের মধ্যে অন্যতম হলো ভূমি ব্যবহারে নেতিবাচক পরিবর্তন, যেমন বনভূমি উজাড় এবং কৃষি বা খনিজ সম্পদ আহরনের জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশকে যথেচ্ছ রূপান্তর; বন্য প্রাণী শিকার এবং নিধন, ভিন্ন পরিবেশ থেকে নিয়ে আসা কোনো প্রজাতির সংখ্যা বৃদ্ধি; এবং জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি। জৈবশক্তি এবং জৈব জ্বালানি জৈব জ্বালানী উৎপাদিত হয় মূলত উদ্ভিদ বা প্রাণীজ বর্জ্য থেকে যা প্রকৃতিতে কঠিন, তরল বা বায়বীয় অবস্থায় পাওয়া যায়। জৈব জ্বালানী হল তরল, কঠিন বা বায়বীয় জ্বালানী যা উদ্ভিদের উপাদান এবং প্রাণীর বর্জ্য থেকে উৎপন্ন হয়। বর্তমান সময়ে আখ, ভুট্টা এবং সয়াবিন থেকে জৈব জ্বালানি উৎপাদিত হচ্ছে। এই ধরনের জ্বালানি পুড়িয়ে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তাকে বায়োএনার্জি বলে। বিশেষজ্ঞদের মতে বায়োইথানল এবং বায়োডিজেলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে কার্বন নির্গমনের মাত্রা হ্রাস করা সম্ভব অর্থাৎ পরিবেশে কার্বনের মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব। ২০২২ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী জৈব জ্বালানির চাহিদা ২২ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা জৈব জ্বালানির জন্য ভূমি ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়ে সতর্ক করে বলেন এই সব ভূমি খাদ্য উৎপাদন এবং জীববৈচিত্র্যকে সূরক্ষার জন্য প্রয়োজন। সমালোচকদের মতে, জৈব জ্বালানীর ব্যবহার কিন্তু বিদ্যুত উৎপাদনে কার্বন নির্গমনের মাত্রাকে হ্রাস করে না। জীবাশ্ম জ্বালানি জীবাশ্ম জ্বালানীর মধ্যে রয়েছে কয়লা, তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস, যা লক্ষ লক্ষ বছর আগের মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষ থেকে তৈরি হয়। তাই মানুষের সময়কালে এগুলো নবায়নযোগ্য নয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানোর ফলে বায়ুমন্ডলে বিপুল পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করে এবং এটি জলবায়ু পরিবর্তনের একক বৃহত্তম কারণ। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি প্যানেল (আইপিসিসি) জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি প্যানেল, বা আইপিসিসি একটি বৈজ্ঞানিক সংস্থা যা ১৯৮৮ সালে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (WMO) এবং জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি সমন্বয়ে তৈরি হয়। এর লক্ষ্য হচ্ছে বিভিন্ন দেশের সরকারকে সর্বশেষ জলবায়ু বিজ্ঞান সম্পর্কে অবহিত করা এবং আগামী দশকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্বে কী হতে পারে তা ব্যাখ্যা করা। বর্তমানে, আইপিসিসির ১৯৫টি দেশের সঙ্গে কাজ করছে। এটি সারা বিশ্ব থেকে বিজ্ঞানীদের একত্রিত করে যারা এই কাজে স্বেচ্ছায় অবদান রাখে। আইপিসিসি কোনো মৌলিক গবেষণা পরিচালনা করে না। বরং শত শত বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা পরীক্ষা করে মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করে। এই প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তন, স্থলভাগে এর পরিণতি কী হতে পারে এবং কীভাবে প্রশমন (জলবায়ু পরিবর্তন সীমিত করা) এবং অভিযোজনের মাধ্যমে জনগণকে সবচেয়ে বিরুপ প্রভাব থেকে রক্ষা করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করে। জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এসডিসি) ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তির অধীনে সদস্য রাষ্ট্রগুলো তাদের জাতীয় নির্গমন কমাতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য একটি রূপরেখা প্রস্তুত করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। এই প্রতিশ্রুতিগুলো জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এনডিসিগুলো প্রতি পাঁচ বছরে জমা দেয়া হয়, এবং ধারাবাহিক এনডিসিগুলোকে পূর্ববর্তীগুলির থেকে আরও উচ্চাভিলাষী হিসেবে প্রস্তুত করা হয়। এই জাতীয় লক্ষ্যগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্রতা এবং প্রভাব হ্রাস করার জন্য একটি সমন্বিত বৈশ্বিক প্রচেষ্টারই একটি অংশ। সার্কুলার ইকোনমি একটি সার্কুলার ইকোনমি বা বৃত্তাকার অর্থনীতির দেশে সম্পদের পুনর্ব্যবহার এমনভাবে করা হয় যা বর্জ্য হ্রাস করে এবং সম্পদের দক্ষতা বাড়িয়ে দেয়। একটি ‘রৈখিক অর্থনীতির’ (লিনিয়ার মডেল) বিপরীত একটি দর্শন। লিনিয়ার মডেলে সম্পদ আহরণ করার পর ব্যবহার শেষে ফেলে দেয়া হয়। একটি সার্কুলার ইকোনমিতে এটি নিশ্চিত করা হয় যে ব্যবহৃত উপকরণগুলো উত্পাদন শৃঙ্খলে ফিরিয়ে দেয়া হয়। আগামীকাল থাকবে নিবন্ধটির শেষ পর্ব। সূত্র : দ্য থার্ড পোল লেখক : শালিনী কুমারী, সম্পাদকীয় সহকারী,দ্য থার্ড পোল ডেল্টা টাইমস/সিআর
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |