|
শীত মানেই পথশিশুদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম
মিনহাজ বিন মাহবুব
|
![]() শীত মানেই পথশিশুদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম তাদের ঠিকমতো খাবার জুটে কিনা। ভেবেছেন কি, তাদের বিয়ে-শাদি'ই বা কিভাবে হয়? তাদের রাত কেমন কাটে? তারা কালবৈশাখের রাতে কোথায় ঘুমায়? ঝুম রর্ষায় নগর যখন সাগর হয়, তখন তারা কোথায় থাকে? হাড় কাঁপানো শীতে অন্য দশজন শিশুর মা-বাব যখন সন্ধার পর শিশুদের ঘর বন্ধি করে, তখন পথশিশুরা কি করে? কোথায় আশ্রয় নেয় তারা, কিভাবেই বা নিজেদের শরীরে উষ্ণতার ছোঁয়া লাগায়? দেশে ঠিক কতজন পথশিশু আছে তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, দেশে প্রায় ৬ লক্ষ পথশিশু রয়েছে। তবে বেসরকারি কয়েকটি সংস্থার জরিপ বলছে, দেশে প্রায় ২০ লাখের অধিক পথশিশু রয়েছে। এদের বেশিরভাগই জানেন না তাদের পিতৃ পরিচয় বা মাতৃ পরিচয় , কেউ কেউ জানলেও ফিরতে চান পরিবারে, এরা পরিবারে না ফেরার বেশ কিছু যৌক্তিক কারণ ও রয়েছে। পরিবারহীন এসব পথশিশুরা আক্ষরিক অর্থে ই পথেই বসবাস করেন, পথেই তাদের শুরু থেকে অন্তিম। বিশেষ করে বাস স্টেশন, রেল স্টেশন, ফ্লাইওভার ও ফুটফাতে তাদের থাকতে দেখা যায়। বছরের অন্যান্য সময়ে তাদের পথে থাকতে যতটা না কষ্ট হয়, সে কষ্টটা কয়েক গুন বেড়ে যায় মূলত শীতকালে। ডিসেম্বর শুরু থেকে দেশে শৈত্য প্রবাহ বইতে শুরু করছে। দিন দিন শীতের তীব্রতা বেড়েই চলছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে তীব্র শীতে জন-জীবনের স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কনকনে শীতে, শীত বস্ত্রহীন পথশিশুরা শীত নিবারণ করছেন শত সংগ্রাম করে। দিনের বেলায় পূরোনো জুতা, প্লাস্টিকের বোতল, প্লাস্টিকের বস্তা সহ নানা রকম জিনিস পত্র জুগাড় করে রাখতে দেখা যায়, এসব মূলত আরামে ঘুমানোর জন্য নয়, কোন রকম রাতটি পার করে সূর্যের আলোর অপেক্ষার জন্য। অনেকের ত আবার ঘুমের কাছে হার মানে শীতের এমন তীব্রতাও, কোন রকম পাটের বস্তা নয়তো পরিত্যক্ত কোন কিছু মুড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েন খোলা আাকাশের নিচে। এভাবেই কোন রকম পার করে দেন একটি রাত। পরদিন বিকাল হলেই আবারো চিন্তা করতে হয় আরেকটি শীতের রাত মুখাবেলা করার জন্য। শীত এলেই কত যে পথশিশু ঠান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত হয় আর মৃত্যু বরণ করে তার পরিসংখ্যান হয়তো পাওয়া যাবে না। তবে হলফ করে বলা যায়, যেখানে দেশে সাধারণ মানুষ শীতে ঠান্ডা জনিত রোগ আক্রান্ত হয়ে মারা যায় হাজার হাজার, সেখানে পথশিশুর পরিসংখ্যান হয়তো চমকে উঠার মতই হবে। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশু মৃত্যুর হার বেড়ে যায় শীতে। এমন বাস্তবতায় প্রয়োজন তাদের প্রতি একটু সহানুভূতি। সরকার এবং সমাজের বিত্তশালীরা যদি একটু সুনজর দেন তাহলে হয়তো এ সমস্যা সমাধান করা যাবে। দেশের গরীব অসহায় মানুষদের শীতবস্ত্র বিতরণের মাধ্যমে তাদের মুখে হাসি ফুটানো ও তাদের শীতের সাথে এ যুদ্ধ থেকে রেহায় দেওয়া উচিৎ। বিশেষত শিশু ও প্রবীণ এবং ছিন্নমূল মানুষদের প্রতি আমাদের নজর দিতে হবে। মানবিকতাই একজন মানুষকে উদার ও বড় করে তোলে মানুষকে বলা হয় আশরাফুল মাখলুকাত, তাই আমাদের উচিত সমগ্র সৃষ্টির প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া। গরীব অসহায়দের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা ও তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া আমাদের কর্তব্য। সমাজের বিত্তশালীরা সহ যে যার অবস্থান থেকে সবাই যদি এগিয়ে আসে তাহলে এই শীতে কাউকে শীতের সাথে সংগ্রাম করতে হবেনা। দেশের সর্বস্তরের ধনাঢ্য, বিত্তবান, শিল্পপতি ব্যবসায়ীদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি, আপনারা চলতি শীত মৌসুমে শীতার্ত গরিব, অসহায়, দুঃখী মানুষকে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী পাড়া-মহল্লায় নতুন বা পুরোনো কিছু শীতবস্ত্র বিতরণে অকাতরে সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করুণ। শীতে উঞ্চতার ছোঁয়ায় সবাই হবে আনন্দিত, শীত হবে সবার জন্য উপভোগ্য এক মৌসুম। সমাজের সামর্থ্যবান ও বিত্তশালীরা এসব শীতার্ত মানুষের প্রতি সাহায্য ও সহানুভূতির হাত বাড়ালে হাড় কাঁপুনি শীত থেকে তারা মুক্তি পেতে পারে পথশিশুরা । পর্যাপ্ত পরিমাণে শীতবস্ত্র প্রদান করে সাধ্যমতো শীতার্তদের পাশে এসে মানবিক সহায়তায় এগিয়ে আসলেই শীত নিবারণের পাশাপাশি তাদের মুখে হাসি ফোটানো সম্ভব। আসুন, আমরা সাধ্যমতো শীতার্তদের পাশে দাঁড়াই। এটি আমাদের মানবিক দায়িত্ব। আমাদের দায়িত্ববোধই হতে পারে অসহায়ের সহায়। লেখক : প্রবাসী, দোহা, কাতার। ডেল্টা টাইমস/মিনহাজ বিন মাহবুব/সিআর/জেএইচ |
| « পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |