ডাক্তার গড়ার কারখানায় মানসিক স্বাস্থ্যের অবহেলা
এস. এম. এম. মুসাব্বির উদ্দিন
|
![]() ডাক্তার গড়ার কারখানায় মানসিক স্বাস্থ্যের অবহেলা সমাজ এবং পরিবারও তাদের থেকে অস্বাভাবিক উচ্চ প্রত্যাশা রাখে। “তুমি তো ডাক্তার হবে”—এই কথার আড়ালে লুকিয়ে থাকে মানসিক বোঝা। ব্যর্থ হলে তা ‘অসম্মান’ হিসেবে ধরা হয়। মেডিকেল কলেজের লেকচাররুম অনেক সময় আতঙ্কের জায়গা হয়ে ওঠে। শিক্ষকরা প্রায়ই কঠোর; সামান্য ভুল উত্তরও শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাস ভেঙে দিতে পারে। ভুল ধারণার ভয়, ক্রমাগত প্রতিযোগিতা, ঘুমের অভাব, বিনোদনহীন জীবন—সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে নিঃশেষ হয়ে যায়। প্রতিযোগিতা ভয়ানক। স্কুল বা কলেজে যাঁরা ‘টপার’ ছিলেন, কলেজে এসে সবাই সমানভাবে মেধাবী। নিজের আগের সাফল্যের সঙ্গে বর্তমান পারফরম্যান্স মেলাতে না পারার হতাশা শিক্ষার্থীদের ডিপ্রেশনে ঠেলে দেয়। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ছুটি ও অবকাশ খুবই সীমিত। ঈদ বা দুর্গাপূজা ছাড়া কোনো বড় বন্ধ নেই। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সপ্তাহে দুই দিন ছুটি থাকলেও, মেডিকেল কলেজে মাত্র একদিন। এর ফলে মানসিক তাজা হওয়া বা পুনর্বাসন সম্ভব হয় না। পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা বিশেষভাবে ঝুঁকিতে থাকে। ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণে যারা সময়মতো পড়াশোনা শেষ করতে পারে না, তাদের প্রায়শই সমর্থন না দিয়ে অমানবিক আচরণ দেখা যায়। ফলে শেষ পর্যন্ত তারা বড় কষ্টসহ্য করতে বাধ্য হয়। মেডিকেল শিক্ষার্থীরা শুধুই বইয়ের বোঝা নয়, মানসিক বোঝাও বহন করে। কেউ তা সহ্য করতে পারে, কেউ পারে না। এখন সময় এসেছে—মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা, তাদের পাশে থাকা এবং শিক্ষকদের মানবিক আচরণ নিশ্চিত করা। মানুষ গড়ে ওঠে শুধু জ্ঞান দিয়ে নয়, মানসিক সহানুভূতির স্পর্শে। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো মানে সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মান উন্নত করা। লেখক: ইউএমসি ০৭, সেশন ২০২০-২১ ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ। ডেল্টা টাইমস্/এস. এম. এম. মুসাব্বির উদ্দিন/সিআর/আইইউ |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |