|
ইসলামী ব্যাংক থেকে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতে দুদকের মামলা
ডেল্টা টাইমস্ ডেস্ক:
|
![]() ইসলামী ব্যাংক থেকে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতে দুদকের মামলা রোববার (৯ নভেম্বর) দুদকের সহকারী পরিচালক মো. তানজির আহমেদ মামলা অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এটি দুদকের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ মামলা। দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধি-বিধান উপেক্ষা করে এস আলম রিফাইন্ড সুগার, এস আলম স্টিলস লিমিটেড ও এস আলম ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেডের নামে অনিয়মিতভাবে ৯ হাজার ২৮৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ঋণ অনুমোদন করা হয়, যা বর্তমানে লভ্যাংশ ও সুদসহ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৪৭৯ কোটি ৬২ লাখ টাকায়। পরে এর একটি অংশ সিঙ্গাপুরসহ বিদেশে পাচার করা হয়। মামলায় এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম ছাড়াও গ্রুপের বেশ কয়েকটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও ইসলামী ব্যাংকের কিছু বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর বিপুল অঙ্কের এই অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায় নির্ধারণে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। দুদকের অভিযোগে বলা হয়, ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পর থেকেই ব্যাংকের বিনিয়োগ কার্যক্রমে ব্যাপক অনিয়ম দেখা দেয়। ২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এস আলম রিফাইনড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ঋণসীমা ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা থেকে ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করে, যা ব্যাংকের মূলধনের ৩৫ শতাংশ অতিক্রম করে, যা ব্যাংক আইন বিরোধী। সিআইবি রিপোর্টে ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের দায় অনেক বেশি থাকা এবং আইআরআরএস স্কোর ৫০ শতাংশের নিচে থাকায় নতুন ঋণ অনুমোদন অনুপযুক্ত হলেও নিয়মবহির্ভূতভাবে বারবার ঋণসীমা বৃদ্ধি করা হয়। ব্যবসায়িক আয় ও টার্নওভার ঋণসীমার সাথে সামঞ্জস্যহীন থাকা এবং জামানত অনুপাতে মাত্র ৪০-৭০% থাকার পরও ঋণ নবায়ন করা হয়, ফলে ব্যাংক ও আমানতকারীদের অর্থ ঝুঁকির মুখে পড়ে। দুদকের তদন্তে আরও জানা যায়, চেয়ারম্যান সাইফুল আলম ব্যাংকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে বিনিয়োগ প্রশাসন, আইটি বিভাগ ও পরিচালনা পর্ষদে প্রভাব বিস্তার করেন। তার ঘনিষ্ঠ সাবেক ডিএমডি তাহের আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে আইসিটিডব্লিউ শাখায় টর্চ ব্যাংকিং সফটওয়্যার ম্যানিপুলেশন করে অনুমোদনবিহীনভাবে ঋণসীমা বৃদ্ধি ও মেয়াদ পরিবর্তন করা হয়, যার মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়। রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, মোট ১৩৪টি লেনদেনের মাধ্যমে ৯ হাজার ২৮৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা আহসান এন্টারপ্রাইজ, ইমপ্রেস কর্পোরেশন, ইউনিক ট্রেডার্স, এগ্রোকর্ণ ইন্টারন্যাশনাল, দুলারী এন্টারপ্রাইজসহ নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করা হয়। যেসব প্রতিষ্ঠানে পরে অর্থ স্থানান্তর করা হয় সেগুলো সাইফুল আলমের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে রয়েছে সোনালী ট্রেডার্স (স্বত্বাধিকারী: মো. শহিদুল আলম, ভাই), গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশন (স্বত্বাধিকারী: মো. রাশেদুল আলম, ভাই), এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এস এস পাওয়ার লিমিটেড, এস আলম স্টিলস, এস আলম সিমেন্ট, এস আলম ভেজিটেবল অয়েল ও সোনালী কার্গো লজিস্টিকস লিমিটেড। অভিযোগে আরও জানানো হয়, ২০২৩ সালের ৪ ডিসেম্বর ইসলামী ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখার এস আলম ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে ৩৭ কোটি টাকা রূপালী ব্যাংক ওআর নিজাম রোড শাখার গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশনে স্থানান্তর করা হয়। পরদিন ৫ ডিসেম্বর ওই অর্থসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে এস এস পাওয়ার-১ লিমিটেডের একটি ব্যাংক হিসাবে জমা হয়, পরে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে ২৩,৫৮০,০০০ মার্কিন ডলার (প্রায় ২৯০ কোটি টাকা) ব্যাংক অব চায়না, সিঙ্গাপুর শাখায় এস এস পাওয়ার-১ লিমিটেডের অফশোর অ্যাকাউন্টে পাচার করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময়ে সময়ে ইস্যুকৃত বিধি, পলিসি ও সার্কুলার উপেক্ষা করে, ক্ষমতার অপব্যবহার, অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের অপরাধে জড়িয়েছেন। ডেল্টা টাইমস্/আইইউ |
| « পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |