অধীনস্থদের সঙ্গে উত্তম আচরণ
মুশফিক হাবীব
|
অধীনস্থদের সঙ্গে উত্তম আচরণ অথচ রাসুল (সা.)-এর আদর্শ হলো, কাজের লোকদের সঙ্গে অত্যন্ত স্নেহপূর্ণ ও মানবিক আচরণ করা। তারা বড় ধরনের কোনো ভুল করে বসলে মমতার সঙ্গে সতর্ক করে শুধরে দিতে হবে আর ছোট ভুল প্রকাশ পেলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে হবে। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আনাস বিন মালেক (রা.) দীর্ঘ দশ বছর রাসুল (সা.)-এর ঘরে ও বাইরে নানা কাজ করেছেন। তার সঙ্গে রাসুল (সা.)-এর আচরণ কেমন ছিল সে বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মদিনায় দশ বছর রাসুল (সা.)-এর খেদমত করেছি। আমি ছিলাম অল্পবয়স্ক বালক। আমার সব কাজ রাসুলের মর্জি মাফিক হত না। কিন্তু এই দীর্ঘ সময় তিনি কখনও আমাকে ধমক দেননি এবং বলেননি যে, এটা কেন করেছ বা এটা কেন করনি?’ (আবু দাউদ : ৪৭৭৪) অনেক সময় দেখা যায়, কাজের লোকদেরকে অত্যন্ত নিচু দৃষ্টিতে দেখা হয়। নিজেদের আহারপর্ব শেষে খাবারের অবশিষ্টাংশ এদেরকে খেতে দেওয়া হয়। বা বাজার থেকে সরবরাহকৃত উন্নতমানের খাবার পরিবেশিত হয় মালিকপক্ষের দস্তরখানে আর বেচারি কাজের মেয়ের জন্য বরাদ্দ থাকে অনুন্নত দায়সারা গোছের কিছুর ব্যবস্থা। পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজ সন্তানের জন্য শহরের অত্যাধুনিক শপিংমল থেকে কেনা হয় নামিদামি ব্র্যান্ডের পোশাক, ঠিক সন্তানের বয়সি কাজের মেয়েটি বা ছেলেটির হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় ফুটপাথ থেকে কিনে আনা পুরনো ও ব্যবহৃত কাপড়ের সেট। অথচ ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে, তাদেরকেও নিজেদের মানের খাবার ও পোশাক প্রদান করা। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তারা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে তোমাদের অধীনস্ত করেছেন। অতএব, তোমরা যা খাও তাদেরকেও তা খাওয়াও আর তোমরা যা পর তাদেরকেও তা পরিধান করাও। তাদেরকে সাধ্যাতীত কোনো কাজের আদেশ কর না। যদি করেই থাক তবে তাদেরকে সহযোগিতা কর।’ (বুখারি : ২৫৪৫; মুসলিম : ১৬৬১) কাজের লোকরাও আমাদের মতোই মানুষ। তাই তাদের মানবীয় দুর্বলতাগুলো মেনে নেওয়া উচিত ও ভুল হয়ে গেলে ক্ষমা করা উচিত। একবার এক সাহাবি এসে রাসুলকে (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি আমার কাজের লোককে কতবার ক্ষমা করব? রাসুল (সা.) চুপ থাকলেন। সাহাবি আবার জিজ্ঞাসা করলেন। তারপর রাসুল (সা.) বললেন, ‘প্রতিদিন সত্তরবার।’ (তিরমিজি : ১৯৪৯) অধীনস্ত লোকদের সঙ্গে আমাদের আচরণ যদি রাসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুযায়ী হয় তাহলে এদের মুখে হাসি ফুটবে। আর এদের খুশিতে হেসে উঠবে আমাদের সমাজ ও চারপাশ। আমাদের ওপর খুশি হবেন আমাদের মহান প্রভু। লেখক : শিক্ষক, জামিয়া আরাবিয়া মিছবাহুল উলুম মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |