কালীগঞ্জের বিনিরাইলে শীতকালীন ও জামাইদের মাছের মেলা
তৈয়বুর রহমান (কালীগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
|
![]() কালীগঞ্জের বিনিরাইলে শীতকালীন ও জামাইদের মাছের মেলা একটা মাছকে ঘিরে ক্রেতা জামাইদের জটলা লেগে আছে। মাছের নাম বাঘাড়। বিক্রেতা দাম হেঁকেছেন ১২০ হাজার টাকা। ক্রেতাদের মধ্যে স্থানীয় ভাটিরা এলাকার জামাই আলমগীর হোসেন ভূইয়া মাছটির দাম সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা বলছেন। কিন্তু বিক্রেতা আরো বেশি দাম পাবার আশায় মাছটি ছাড়ছেন না। চলছে দর কষাকষি। যতনা ক্রেতা তার চেয়ে অনেক বেশি উৎসুক জনতা ভীড় জমিয়েছেন মাছটি দেখার জন্য। পৌষ মাসের শেষে মাঘ মাসের দ্বিতীয় দিন বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে উপজেলার জামালপুর, বক্তারপুর ও জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের মধ্যে বিনিরাইল গ্রামে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলায় গিয়ে দেখা যায় এই দৃশ্য। উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন তো এসেছেনই। এর বাইরে থেকেও অনেকে এসেছেন উপজেলার সর্ববৃহৎ এই মাছের মেলায়। গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে অনেক মানুষ কেবল এই মেলা উপলক্ষেই কালীগঞ্জে এসেছেন। প্রতি বছর পৌষ-সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা। এবারের মেলায় প্রায় ৮ শতাধিক মাছ ব্যবসায়ী বাহারি মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। মেলায় মাছ ছাড়াও আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টি ইত্যাদির পসরাও বসেছে। মাছের মেলায় সামদ্রিক চিতল, বাঘাড়, আইড়, বোয়াল, ইলিশ, কালী বাউশ, পাবদা, গুলসা, গলদা চিংড়ি, বাইম, কাইকলা, রূপচাঁদা মাছের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে নানা রকমের দেশী মাছও। বিনিরাইলের মাছের মেলার আয়োজকরা জানান, এই মেলাটি প্রথম অনুষ্ঠিত হতো খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে এটি অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ-সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবে আয়োজন করা হতো। প্রায় ২৫২ বছর যাবৎ মেলাটি আয়োজন হয়ে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলাটি একটি সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম নুরু মাঝি ও সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন শেখ, মুশফিকুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান শেখ ও ব্যবসায়ী রঞ্জিত বর্মণ, সুলতান মিয়া, আলমগীর হোসেন, রুহুল আমিন দর্জী জানান, বৃটিশ শাসনামল থেকে শুরু হওয়া বিনিরাইলের মাছের মেলা এখন ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। এ মেলা গাজীপুর জেলার সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবে স¦ীকৃত। এলাকার জামাইরা বলেন, শশুরবাড়ীতে মাছ নিয়ে যাওয়া বলে কথা। তাই এলাকার সকল জামাইদের নজর বিনিরাইলের মাছের মেলার বড় মাছটার দিকেই। তাই স্থানীয় বড় বড় মাছ ব্যবসায়ীরা সপ্তাহখানেক ধরে বড় বড় মাছ সংগ্রহ করে থাকেন। সেই অনুযায়ী মাছের দামও হাঁকানো হয়। বিনিরাইলের মাছের মেলা নিয়ে কথা হয় বক্তারপুর গ্রমের আলমগীর হোসেন, তৈয়বুর রহমাান, জিল্লু রহমার মোল্লা, সিজেন নন্দী ও রাজেন্দ্রপুরের রমজানের সাথে তিনি জানান, এবার ৪৫ হাজার টাকার বাঘাড়, ২৫ টাকার রুই, চিতল, আইড়সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কিনেছেন বাড়ীতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। মাছের মেলা সংলগ্ন জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম দর্জী জানান, মাছের মেলাটি এ অঞ্চলের ঐতিহ্যের ধারক। মেলায় বেচাকেনা যতই হউক, এ মেলা আমাদের ঐতিহ্য আর কৃষ্টি-কালচারকে বহন করছে এটাই সবচেয়ে বড় কথা। তিনি আরো জানান, শুরুতে এ মেলা শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য হলেও, বর্তমানে এটা সকল ধর্মের মানুষের কাছে ঐতিহ্যর উৎসবে পরিননত হয়েছে। |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |