শিশুদের জন্য সুস্থ বিনোদন নিশ্চিত করুন !
আসাদুল্লাহ আল-গালিব
|
আগে স্কুলের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে গল্পের বই কিংবা শখের স্ট্যাম্প কেনার প্রতিযোগিতা হতো৷ আর এখন টাকা জমানোর প্রতিযোগিতা চলে ভিডিও গেম কেনা বা খেলার জন্য। যখন একটা শিশু কোন খেলনা ছুড়ে ফেলে; এর মানে সে অবহেলা করলো, তা নয়৷ এর মানে হলো, খেলনাটা কত দূরে গিয়ে পড়ে, কিভাবে পড়ে, কিভাবে শব্দ হয় – এই জিনিসগুলো শিশুর মস্তিষ্কে নাড়া দেয়৷ শিশুর সঠিক বিনোদনই তার পরিপূর্ণ বিকাশে সহায়তা করে৷ আর এই বিনোদন ঘরে-বাইরে-স্কুলে সবখানেই তাকে দিতে হয়৷ এখন বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, ফার্স্টফুড সেন্টার বা এই ধরনের জায়গাগুলোতে শিশুদের জন্য প্লে-জোন রয়েছে। সেখানে শিশুদের জন্য রয়েছে নানা ধরণের ভার্চুয়াল গেম৷ গাড়ি চালানো, বিমানে চড়া, শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করা অথবা সাফারি পার্কে প্রাণীদের জগতে ঘুরে বেড়ানো – সবই আছে সেখানে৷ তবে এ সব কিছুই ভার্চুয়াল। শিশুরা বাবা-মায়ের সঙ্গে এই প্লে-জোনে গিয়ে বেশ ভালো অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এই খেলায় মত্ত হয়ে পড়ে৷ আর তখন বাবা-মা থাকেন মোবাইল ফোনে অথবা নিজেদের মধ্যে গল্পে ব্যস্ত৷ শিশুদের প্লে-জোনে ছেড়ে দিয়ে তারা নিজেদের বিনোদনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন৷ শিশুরা ঠিক কি করছে সেদিকে তাদের খেয়াল থাকে না৷ এত কম বয়সে বাচ্চারা যে খেলাগুলো খেলছে, ওই খেলাগুলো তাদের বয়স উপযোগী কিনা তা তারা বিবেচনাই করেন না। ![]() আসাদুল্লাহ আল-গালিব কিছুদিন আগে একজন অভিভাবক অভিযোগ করেন, শিশুদের এমন কিছু খেলা আছে যেগুলো অনেকটা জুয়ার মতো৷ এক ধাপের পর আরেক ধাপে যেতে পারলে ডিসকাউন্ট৷ অপরদিকে গেম স্টোর বা প্লে জোনের সার্ভিসম্যানদের অধিকাংশেরই নেই কোনো প্রশিক্ষণ৷ তারা জানে না কোন বয়সের শিশুদের জন্য কোন ধরনের খেলা উপযোগী৷ তাদের কাজ হলো কোনো বিবেচনাবোধ ছাড়াই যে কোনো বয়সের শিশুদের যে কোনো গেমস খেলতে উদ্বুদ্ধ করা৷ অভিভাবকরাও অনেক সময় কোন শিশুর জন্য কোন ধরণের গেম উপযোগী সে বিষয়ে সচেতন নন আর ঐ সব গেম আদৌ শিশুদের খেলার উপযোগী কিনা সেটা তারা বিবেচনা করেন না। শিশুরা ঘরে হিন্দি-বাংলা সিরিয়াল দেখছে, যেটা মোটেই সমীচীন নয়। এই ধরণের সিরিয়াল বা সিনেমায় শিশুদের জন্য অসামঞ্জস্যপূর্ণ দৃশ্য ও সংলাপ থাকে। আবার হরর কিংবা সাইকো থ্রিলার সিনেমা দেখে তাদের শিশুমন আতঙ্কিত হতে পারে। তবে শুধু শিশুদের এমন বিনোদন থেকে দূরে রাখলেই সমস্যার সমাধান হবে না। তার জন্য চাই সুস্থ শিক্ষামূলক বিনোদন। সেই বিনোদন মোবাইল ফোনে ইউটিউবের কার্টুন কিংবা অ্যানিমেশন ছবি না। যেখানে সে দিনভর নেশায় বুঁদ হয়ে থাকবে। তাকে ডাকলেও সারা দেবে না, কোথাও খেলতে বা ঘুরতে যাবে না। চোখ সারাক্ষণ আটকে থাকবে স্ক্রিনের জাদুতে। টিভিতে, কম্পিউটারে, মোবাইলের স্ক্রিনে অভ্যস্ত হচ্ছে আমাদের শিশুরা। এভাবেই ভুল বিনোদনের ফাঁদে আটকে যাচ্ছে শিশুদের শৈশব। বর্তমানে বেশিরভাগ স্কুল শিক্ষার্থীদের বিনোদনের প্রধান মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে মুঠোফোন। শিশুদের মোবাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে অধিকাংশ মা-বাবারাই সতর্ক নন৷ তাই শিশুরা এখন চাইলেই আধুনিক মোবাইল ব্যবহার করে কুরুচিপূর্ণ বিজ্ঞাপন কিংবা পর্নোগ্রাফির মতো খারাপ ভিডিও পাচ্ছে৷ যার ফলে, শিশু-কিশোররা লালন করছে বিকৃত অসুস্থ মানসিকতা৷ 'শিশু বিনোদন' নামে বর্তমানে যা কিছু হচ্ছে সেসবের সুদূরপ্রসারী ফলাফল যে মোটেও শুভকর হবে না তা কিন্তু আমরা ঠিকই জানি। তবুও এসব নিয়ে ভাবি না। এখন সময় এসেছে এসব নিয়ে চিন্তা করার। এসব থেকে শিশুদের দূরে রাখতে চাইলে, বিকল্প বিনোদনের ব্যবস্থা করে তাদের ব্যস্ত রাখতে হবে। শিশু কি দেখবে আর কি দেখবে না, তা সুচিন্তিতভাবে নির্ধারণ করতে হবে। এড়াতে হবে অশ্লীলতা, সহিংসতা, লিঙ্গবৈষম্যমূলক বিনোদন উপকরণ। তার সাথে সাথে নির্মল বিনোদন ও শিক্ষণীয় উপকরণ বাড়াতে হবে। পরিবারের সবাই মিলে শিশুকে সময় দিতে হবে, গল্প করতে হবে তার সাথে। শিশুর বয়স উপযোগী খেলাও খেলতে হবে তার সঙ্গে। এমন সব খেলা তালিকায় রাখতে হবে, যা বুদ্ধি, কল্পনাশক্তি, পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা, কায়িক শ্রম, অন্যের সঙ্গে যোগাযোগে বাচ্চাদের উৎসাহিত করে। বাচ্চাদেরকে দলবদ্ধ খেলা খেলতে অভ্যাস করাতে হবে। এতে যোগাযোগ করার ক্ষমতা বাড়বে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, যেহেতু বই পড়ার চেয়ে ভালো অভ্যাস আর কিছু হতে পারে না,তাই শিশুদের মধ্যে ছোট থেকেই বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। তাদের সামনে মুঠোফোনে ব্যস্ত না থেকে তাদেরকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। তাদের বিনোদনের উপকরণ নির্বাচনে সচেতন হতে হবে। তবেই শিশুদের জন্য সুস্থ বিনোদন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। আসাদুল্লাহ আল-গালিব শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইমেইল: aaghalib.disdu@gmail.com ডেল্টা টাইমস্/আসাদুল্লাহ আল-গালিব/সিআ/জেডএইচ
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |