অশান্তির মূলে সাম্প্রদায়িকতা
মাইন উদ্দীন হাসান
|
পৃথিবীতে সবাই কোন না কোন সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত। অনেক ধরনের সম্প্রদায় পৃথিবীতে বিরাজমান। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান। তারা এক একটা সম্প্রদায়, যেটাকে বলা হয় ধর্মভিত্তিক সম্প্রদায়। কেউ কালো, কেউ সাদা এর মাঝে আমরা বর্ণভিত্তিক সম্প্রদায় দেখতে পাই। ছাত্র, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার যেটার মাঝে আমারা পেশাভিত্তিক সম্প্রদায় দেখতে পাই। এই যে একেকটা সম্প্রদায়, তাদের মধ্যে কেউ যদি নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তখন সেটাকে বলা হয় সাম্প্রদায়িকতা। এই শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে একজন-অপরজনের উপর জুলুম, নির্যাতন করে। একে অন্যকে ছোট চোখে দেখে। সবলরা দুর্বলদের উপর অত্যাচার চালায়। সাম্প্রদায়িকতা সবার কাছে একটা ঘৃণ্য বিষয় হিসেবে স্বীকৃত। কারণ, এই সাম্প্রদায়িকতার জের ধরে পৃথিবীতে নানা ধরণের অশান্তির দাবানল বেড়েই চলছে। ![]() অশান্তির মূলে সাম্প্রদায়িকতা মসজিদ, মন্দির, গীর্জায় হামলা সবই হয় সাম্প্রদায়িকতার জের ধরেই। ফিলিস্তিন, কাশ্মীর মৃত্যপুরীতে রুপ নেয়ার পিছনেও ছিলো এই সাম্প্রদায়িকতা। ইসলাম কোন অবস্থাতেই সাম্প্রদায়িকতা সমর্থন করে না। যার সুন্দরতম উদাহরণ মদিনার সনদ। এই সনদের মাধ্যমে ইহুদি, খ্রিষ্টান, পৌত্তলিক ও মুসলমানদের সমন্বয়ে একটি সাধারণ জাতি গঠিত হয়। যাতে সবার নাগরিক অধিকার ছিল সমান। সাম্প্রদায়িকতার সবচেয়ে খারাপ বৈশিষ্ট্য হলো, অন্য ধর্ম, জাতি বা অঞ্চলের ব্যাপারে অসহিষ্ণু হওয়া। সাম্প্রদায়িকতা মানুষকে দিন দিন কলুষিত পথের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। উচ্চ শ্রেণীর মানুষ সমাজে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এতে নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে নিম্নশ্রেণীর মানুষ গুলো। এছাড়া পশ্চিমা দেশ গুলোতে দেখা যায় বর্ণভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতা। যেটা কালো বর্ণের মানুষকে নিম্ন স্তরে নামিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় এই বর্ণভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতার জাল ভেঙ্গে নেলসন ম্যান্ডেলা সংগ্রাম করে গেছে কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার প্রতিষ্ঠায়। সাম্প্রদায়িকতা পৃথিবীর জন্য কখনো সুফল বয়ে আনতে পারে না। পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সবাইকে এক হতে হবে। কারো সাথে দাঙ্গা, হাঙ্গামা নয়। উদ্ভুদ্ধ হতে হবে অসাম্প্রদায়িক চেতনায়।যেটার বহিঃপ্রকাশ ছিলো ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। দল-মত সব ভুলে অংশগ্রহণ ছিলো সকল তরুণের। আন্দোলনের বক্তব্য, বিবৃতি ও স্লোগানগুলোতে ছিল অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চেতনার প্রকাশ। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবির পাশাপাশি 'রাজবন্দিদের মুক্তি চাই' স্লোগানে মুখরিত ছিলো পুরো রাজপথ। আমারা একজন অন্যের জন্য। যেভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালী দেশ স্বাধীন করেছে, সেভাবেই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার’ এ তিনটি আদর্শকে মনে ধারণ করে সকলের কল্যাণের চিন্তা করতে হবে। অসাম্প্রদায়িকতা আমাদের দেখাতে পারে একটি সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন যেন সাম্প্রদায়িক চেতনার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে হারিয়ে না যায়। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, ডেল্টা টাইমস্ কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার ডেল্টা টাইমস্ কর্তৃপক্ষ নেবে না। ) লেখক: মাইন উদ্দীন হাসান শিক্ষার্থী: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,কুষ্টিয়া ইমেইল: mayenmh004@gmail.com ডেল্টা টাইমস্/মাইন উদ্দীন হাসান/সিআর/জেড এইচ |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |