সুবর্ণ জয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ: প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি
মোঃ আব্দুর রহমান
প্রকাশ: সোমবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১১:৫৮ এএম

সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশ। দেশি-বিদেশি অনেক কবি, সাহিত্যিক, গীতিকার, পর্যটক এ দেশের প্রতি মুগ্ধ হয়ে গুণকীর্তন গেয়েছেন। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর অর্জিত এই দেশ সুবর্ণ জয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে। এ দেশের প্রতিটি মানুষ হৃদয়ে লালন করে দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে দেশের জন্য, ভাষার জন্য অকাতরে সালাম, রফিক, বরকতসহ অনেকই ঢেলে দিয়েছেন বুকের তাজা রক্ত।

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের সারকথা ছিল দেশের মানুষের পরাধীনতা শৃঙ্খল থেকে মুক্তি। সাধারণ মানুষের চাওয়াটাও ছিল ঠিক তাই। তাই নির্বিঘ্নে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিতে কুণ্ঠাবোধ করেনি। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, ৩০ লাখ শহীদ, হাজারো মায়ের ইজ্জত এবং ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা। বিজয় অর্জনের প্রায় অর্ধশতাব্দী পূর্ণ হওয়ার পথে বাংলাদেশ। কিন্তু আজও স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ মিলেনি। বিশ্ব মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণিত, বর্বর ও নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের একটি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা। কিন্তু তাতেও ক্ষান্ত হয়নি অপরাধীরা। আজও নানা অপরাধের ছোবলে সোনার বাংলাদেশ।

পত্রিকার পাতা উল্টালেই গুম, খুন, ছিনতাই, রাহাজানি, অপহরণ, নারী ও শিশু পাচার, মাদক চোরাচালান, ধর্ষণসহ ন্যাক্কারজনক অসংখ্য ঘটনা চোখে পড়ে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ এবং এমসি কলেজের ধর্ষণের ঘটনাটি প্রতিটি বিবেকবান মানুষের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বিষয়টি সমালোচনায় এসেছে। প্রতিনিয়ত দেশের কোথাও না কোথাও ধর্ষণ কিংবা শ্লীলতাহানীর শিকার হচ্ছে নারীরা। ৫ বছরের শিশু থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধা কেউই রেহাই পাচ্ছে না। স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ, শিক্ষক ছাত্রীকে ধর্ষণ, চলন্ত বাসে তরুণীকে ধর্ষণ কিংবা শ্লীলতাহানীর শিকার, প্রেমিকের দ্বারা প্রেমিকা ধর্ষণ—এজাতীয় নানারকম সংবাদে ভরপুর পত্রিকাগুলো। নারী যেন ভোগ-বিলাসের পণ্য।  বাবা তার মেয়েকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে সর্বক্ষণই নিরাপত্তার ব্যাপারে দুশ্চিন্তায় ভোগে।

আজকের শিশু, কিশোরেরা আগামীর ভবিষ্যত। কিন্তু দেশের অসংখ্য কিশোর বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। যা একটি জাতির জন্য অত্যন্ত হতাশার। উত্তরোত্তর অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। ইতোমধ্যে সরকার এসব অপরাধ দমনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও অপরাধী বেড়েই চলেছে। দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হলেও আজ পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নানাবিধ সমস্যা সমাধানে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হচ্ছে সরকারকে।
  মোঃ আব্দুর রহমান

মোঃ আব্দুর রহমান


সংস্কৃতি একটি জাতির প্রাণ। যে জাতির সংস্কৃতি যত বেশি সমৃদ্ধ, সে জাতি তত উন্নত। কিন্তু দেশীয় সংস্কৃতির মধ্যে যখন বিজাতীয় সংস্কৃতি প্রবেশ করে, তখন সে জাতি দিশেহারা হয়ে পড়ে। অপরাধ বৃদ্ধির আরেকটি অন্যতম কারণ এটি। এছাড়াও দৃষ্টান্তমূলক বিচার ব্যবস্থার অনুপস্থিতির ফলেও কিছুটা অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সকল ক্ষেত্রেই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন; যা দেখে অপরাধীদের হৃদয় আঁতকে উঠবে। অনেক ক্ষেত্রে শাস্তির ব্যবস্থা থাকলেও আইনের ফাঁক-ফোকর কিংবা ক্ষমতাসীনদের আশ্রয়ে অপরাধীরা বেরিয়ে যাচ্ছে। যে স্বপ্ন নিয়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন আজও তা পূরণ হয়নি স্বপ্ন।

এসব অপরাধ দমন করতে হলে প্রথমত অপরাধ সংঘটিত হওয়ার কারণ এবং সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কিংবা পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। নৈতিক শিক্ষার অভাবে শিশু কিশোরেরা বিভিন্ন অপরাধে ধাবিত হচ্ছে। বিবেক জাগানিয়া, নৈতিকতাসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা, কর্মশালা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একজন ব্যক্তিকে ছোট থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা প্রয়োজন। তবেই দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব।  
(প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, ডেল্টা টাইমস্ কর্তৃপক্ষের নয়।  লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার ডেল্টা টাইমস্ কর্তৃপক্ষ নেবে না। )

মোঃ আব্দুর রহমান
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
সদস্য, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।





ডেল্টা টাইমস্/মোঃ আব্দুর রহমান/সিআর/জেড এইচ

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-২২৬৬৩৯০১৮, ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-২২৬৬৩৯০১৮, ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com