সব নবীর ধর্ম এক, পার্থক্য শুধু শরিয়তে
ডেল্টা টাইমস্ ডেস্ক:
|
![]() সব নবীর ধর্ম এক, পার্থক্য শুধু শরিয়তে নবী-রাসুল পরিচয় ইসলামি পরিভাষায়, আল্লাহর মনোনীত সব মহামানবই নবী; আর যাদের নতুন কিতাব ও শরিয়ত প্রদান করা হয়েছে, তাঁদের বলা হয় রাসুল। রাসুলরা নিজ নিজ শরিয়ত অনুযায়ী দ্বীনের কাজ করতেন। যেসব নবীর প্রতি কিতাব নাজিল হয়নি, তারা আগের রাসুলদের প্রচারিত শরিয়তের অনুসরণ করতেন। কোরআনের সাক্ষ্য পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে পূর্ববর্তী নবী ও তাঁর অনুসারীদের ব্যাপারে ‘মুসলিম’ শব্দের ব্যবহার রয়েছে। সুরা বাকারার ১৩২ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- ‘ইবরাহিম ও ইয়াকুব এ বিষয়ে তাদের পুত্রদের নির্দেশ দিয়ে বলেছিল, হে পুত্ররা! আল্লাহ তোমাদের জন্য এ দ্বীনকে মনোনীত করেছেন। সুতরাং তোমরা মুসলিম (আত্মসমর্পণকারী) না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’ অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- ‘তোমরা বলো আমরা ঈমান রাখি আল্লাহতে এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের প্রতি ও ইবরাহিম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাঁর বংশধরদের প্রতি... আমরা তাঁদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করি না এবং আমরা মুসলিম (তাঁর অনুগত)।’ (সুরা বাকারা: ১৩৬) হাদিসের আলোকে অভিন্ন দ্বীন রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন- ‘আমি দুনিয়া ও আখিরাতে ঈসা ইবনে মরিয়মের ঘনিষ্ঠতম। নবীগণ একে অন্যের বৈমাত্রেয় ভাই। তাঁদের মা ভিন্ন ভিন্ন কিন্তু দ্বীন হলো এক।’ (সহিহ বুখারি: ৩৪৪৩) নবীদের অভিন্ন মিশন সুরা নাহলের ৩৬ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- ‘আমি প্রত্যেক সম্প্রদায় থেকে রাসুল প্রেরণ করেছি—(যেন তারা নির্দেশ দেয়) তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুতকে পরিহার করো।’ অন্য আয়াতে এসেছে- ‘তিনি তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন দ্বীন, যার নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন নুহকে আর যা আমি অবতীর্ণ করেছি তোমাকে এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইবরাহিম, মুসা ও ঈসাকে এই বলে যে, তোমরা দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করো এবং তাতে মতভেদ করো না।’ (সুরা আশ-শুরা: ১৩) তাফসির প্রখ্যাত মুফাসসির ইবনে কাসির (রহ.) উল্লেখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন- ‘নবীদের মধ্যে অভিন্ন বিষয় হলো এক আল্লাহর ইবাদত করা এবং তাঁর সঙ্গে কারো শরিক না করা। যদিও তাদের শরিয়ত ও কর্মপদ্ধতি ভিন্ন ছিল।’ ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) তাঁর মাজমুউল ফতোয়া গ্রন্থে লেখেন- ‘নবী-রাসুলগণ দ্বীনের মূল বিষয়ে একমত ছিলেন। তাঁরা সবাই তাওহিদের দাওয়াত দিয়েছেন এবং শিরকের বিরোধিতা করেছেন। শরিয়তের বিধানগুলোতেই ছিল পার্থক্য।’ ইমাম নববী (রহ.) উল্লেখ করেন- ‘নবীগণ সবাই একই দ্বীনের উপর ছিলেন। তাঁদের দ্বীন ছিল ইসলাম, অর্থাৎ আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ। শরিয়তের বিধি-বিধানে যে পার্থক্য ছিল, তা সময় ও পরিস্থিতির প্রয়োজনে।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির, মাজমুউল ফতোয়া, শারহু মুসলিম) ধর্মে বিভেদের কারণ মূলত ধর্মের ভিন্নতা সৃষ্টি হয়েছে আল্লাহর নির্দেশনা অস্বীকার ও অন্ধ অনুকরণের কারণে। সুরা আলে ইমরানের ১৯ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- ‘নিঃসন্দেহে ইসলামই আল্লাহর কাছে একমাত্র দ্বীন। যাদের কিতাব দেওয়া হয়েছিল তারা পরস্পর বিদ্বেষবশত তাদের কাছে জ্ঞান আসার পরও মতবিরোধ করেছিল।’ বর্তমান শরিয়তের মর্যাদা ইসলামিক বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট করেন, কোরআন নাজিলের মাধ্যমে আগের রাসুলদের শরিয়ত রহিত হয়ে গেছে। এখন মুহাম্মদ (স.)-এর শরিয়তই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য। সুরা মায়িদার ৪৮ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- ‘আর আমি আপনার প্রতি সত্যসহ কিতাব নাজিল করেছি ইতোপূর্বেকার কিতাবসমূহের সত্যতা প্রতিপন্নকারী ও সেগুলোর তদারককারীরূপে। সুতরাং আল্লাহ যা নাজিল করেছেন সে অনুযায়ী আপনি তাদের বিচার নিষ্পত্তি করুন।’ শেষ কথা, ইসলামের দৃষ্টিতে সব নবী-রাসুলের দ্বীন এক ‘আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ’। সময়ের ভিন্নতায় শরিয়ত পরিবর্তিত হলেও আল্লাহর একত্ব ও আনুগত্যের মূল বার্তা চিরকাল অপরিবর্তিত থেকেছে। কোরআন নাজিলের মাধ্যমে পূর্ববর্তী সব শরিয়ত রহিত হয়েছে এবং এখন শুধুমাত্র মুহাম্মদ (স.)-এর শরিয়তই অনুসরণীয়। ডেল্টা টাইমস্/আইইউ |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |