কথায়-কাজে অসঙ্গতি: মহান আল্লাহর কঠোর সতর্কবার্তা
ডেল্টা টাইমস্ ডেস্ক:
|
![]() কথায়-কাজে অসঙ্গতি: মহান আল্লাহর কঠোর সতর্কবার্তা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত ঘৃণার কাজ পবিত্র কোরআনের সুরা সফের ২ ও ৩ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে কথা ও কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا لِمَ تَقُوۡلُوۡنَ مَا لَا تَفۡعَلُوۡنَ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা কর না, তা কেন বল?’ (সুরা সফ: ২) পরবর্তী আয়াতে তিনি এর ভয়াবহতা স্পষ্ট করেছেন- كَبُرَ مَقۡتًا عِنۡدَ اللّٰهِ اَنۡ تَقُوۡلُوۡا مَا لَا تَفۡعَلُوۡنَ ‘তোমরা যা কর না, তা বলা আল্লাহর নিকট অত্যন্ত ঘৃণার কাজ।’ (সুরা সাফ: ৩) এই আয়াতগুলো মূলত সেই মুমিনদের উদ্দেশে নাজিল হয়েছিল, যারা মুখে আল্লাহর প্রিয় কাজ করার অঙ্গীকার করত, কিন্তু বাস্তবে অলসতা ও গাফিলতির কারণে তা পালন করত না। আল্লাহ এখানে স্পষ্ট বার্তা দিলেন— ‘কথা বললে তা বাস্তবে প্রয়োগ করো; মুখে কল্যাণের আহ্বান করো না যদি তা নিজে পালন না করো।’ জ্ঞানের অপমান ও আমলের ব্যর্থতা সুরা বাকারার ৪৪ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা একই সতর্কতা দিয়েছেন, যা মূলত ইহুদি আলেমদের উদ্দেশে নাজিল হয়েছিল- اَتَاۡمُرُوۡنَ النَّاسَ بِالۡبِرِّ وَ تَنۡسَوۡنَ اَنۡفُسَکُمۡ وَ اَنۡتُمۡ تَتۡلُوۡنَ الۡکِتٰبَ ؕ اَفَلَا تَعۡقِلُوۡنَ ‘তোমরা কি মানুষকে ভালো কাজের আদেশ দিচ্ছ আর নিজদেরকে ভুলে যাচ্ছ? অথচ তোমরা কিতাব তেলাওয়াত কর। তোমরা কি বুঝ না?’ (সুরা বাকারা: ৪৪) এই আয়াত শিক্ষা দেয় যে, কথা ও কাজের অমিল কেবল ভণ্ডামি নয়, বরং এটি জ্ঞানের অপমান ও আমলের ব্যর্থতা। কিতাবের জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ নিজে তা না মানে, তবে এর চেয়ে বড় নির্বুদ্ধিতা আর হতে পারে না। মুনাফিকির প্রথম চিহ্ন ইসলামের দৃষ্টিতে কথা ও কাজের অমিল সরাসরি মিথ্যাচার, যা একটি কবিরা গুনাহ এবং মুনাফিকির প্রধান চিহ্ন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘মুনাফিকের তিনটি লক্ষণ আছে—যখন কথা বলে মিথ্যা বলে; যখন ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে; এবং যখন আমানত রাখা হয়, খেয়ানত করে।’ (সহিহ বুখারি: ৩৩; সহিহ মুসলিম: ৫৯) এই হাদিস স্পষ্টভাবে দেখায় যে, কথার সঙ্গে কাজের অসঙ্গতি মুসলিম চরিত্রের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। একজন প্রকৃত মুমিন মুখে এক, আর কাজে আরেক হন না। জাহান্নামের টিকিট জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তর: আল্লাহ তাআলা সতর্ক করে বলেন: ‘নিশ্চয় মুনাফিকরা থাকবে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে।’ (সুরা নিসা: ১৪৫) মেরাজের রাতে কঠিন শাস্তি: মেরাজের রাতে রাসুলুল্লাহ (স.) এমন কিছু লোক দেখেছিলেন, যাদের জিহ্বা ও ঠোঁট আগুনের কাঁচি দিয়ে কাটা হচ্ছিল। জিব্রাইল (আ.) বললেন: ‘এরা আপনার উম্মতের সেই লোক, যারা অন্যকে সৎ কাজের আদেশ দিত কিন্তু নিজে তা পালন করত না।’ (মুসনাদে আহমদ: ১২২১১) কেয়ামতের দিনের লজ্জা: আরেক হাদিসে আছে, কেয়ামতের দিন এমন এক ব্যক্তিকে আনা হবে, যাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সে বলবে- ‘আমি মানুষকে সৎ কাজের নির্দেশ দিতাম কিন্তু নিজে করতাম না, অসৎ কাজে নিষেধ করতাম কিন্তু নিজেই তা করতাম।’ (বুখারি: ৩২৬৭; মুসলিম: ২৯৮৯) বর্তমান সমাজে প্রয়োগ ও করণীয় আজকের যুগে সামাজিক মাধ্যমে ইসলাম প্রচার এবং ব্যক্তিগত জীবনে উদাসীনতা ক্রমে বাড়ছে। ওয়ায়েজ, দাঈ, শিক্ষক, নেতা ও ধর্মীয় দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বিশেষ করে এই আয়াতগুলোর গুরুতর বার্তা যেন ভুলে না যান—‘নিজে না মানলে অন্যকে বলো না।’ ইসলামের দৃষ্টিতে এটি এক প্রকার আত্মপ্রবঞ্চনা। আমাদের করণীয় ১. নিজের আমল সংশোধন: প্রথমে নিজের আমলকে সংশোধন করা, তারপর অন্যকে নসিহত করা। ২. ইখলাস ও আমলের মিল: দ্বীন প্রচারে ইখলাস (একনিষ্ঠতা) এবং আমলের মিল বজায় রাখা। ৩. প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন: প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আগে তার বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নেওয়া। ৪. আত্মসমালোচনা: মুনাফিকির লক্ষণগুলো থেকে দূরে থাকতে আত্মসমালোচনার চর্চা করা। সুরা সফ ও সুরা বাকারার এই আয়াতগুলো এবং সহিহ হাদিসগুলো স্পষ্ট বার্তা দেয়—‘যা বলো, তা করো; যা করতে পারবে না, তা বলো না।’ মুমিনের মর্যাদা তার কথায় নয়, বরং সেই কথার বাস্তব প্রয়োগে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে কথা ও কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য স্থাপনের তাওফিক দিন। আমিন। ডেল্টা টাইমস্/আইইউ |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |