আঙ্কেল-আন্টি নয়, কাকা-খালা সম্বোধন করবো
জুবায়ের আহমেদ
প্রকাশ: বুধবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২০, ১১:৫৫ এএম

আমরা বাঙ্গালী জাতি, আমাদের আছে ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিয়ে বিশ্বের বুকে মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠিত করার গৌরব। পৃথিবীর বুকে ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রাণ দেয়া একমাত্র জাতি আমরাই। ৫২ মানেই আমাদের অধিকার আদায়ের গৌরবান্বিত অধ্যায়। আমাদের পূর্ব পুরুষেরা বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত করেছে রক্ত দিয়ে। তাদের আত্মত্যাগের ফলে বাংলা এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভাষা। ১৯৫২ থেকে ২০২০, এর মাঝে কেটেছে ৬৮ বছর। আর এই ৬৮ বছরের মধ্যেই বাঙ্গালী জাতির মধ্যে ইংরেজী ভাষার প্রচলণ এতো বেশিই হয়ে গেছে যে, ইংরেজী না জানাকে আজকাল মূর্খ্যতার সাথেও তুলনা করে অনেকে। ইংরেজী বিদেশী ভাষা নয়, যেনো আমাদের মাতৃভাষা, এমন অবস্থা চলছে এখন তরুণ সমাজের মাঝে।

আমাদের শৈশবে আমরা মামাকে মামা ডেকেছি, মামু ডেকেছি। কাকাকে কাকু ডেকেছি, চাচা ডেকেছি। খালাকে খালা-খালাম্মা, ফুফুফে ফুফু-ফুফি ডেকেছি। দাদাকে দাদা, নানাকে নানা, নানিকে নানি, দাদিকে দাদি ডেকেছি। সনাতন সমাজেও তাদের রীতিমত বাংলাতেই আত্মীয় স্বজনদের সম্পর্ক অনুযায়ী সম্বোধন করা হতো। আপনজন কিংবা দূরের মানুষ, যাকে যেভাবে বাংলায় সম্বোধন করা দরকার, আমরা সেভাবেই ডেকেছি। সেভাবে ডাকার শিক্ষাই পেয়েছি পরিবার ও গুরুজনদের কাছ থেকে। 
আঙ্কেল-আন্টি নয়, কাকা-খালা সম্বোধন করবো

আঙ্কেল-আন্টি নয়, কাকা-খালা সম্বোধন করবো

সময়ের বিবর্তনে দেশে শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। একই হারে শিক্ষিত বিবেক, নীতিবান মানুষ না বাড়লেও ইংরেজী চর্চা করা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে অনেক, যাদের অধিকাংশই আজকাল চাচা, মামা, ফুফা, খালু, এই সম্পর্কের সবাইকে ইংরেজীতে আংকেল ডাকে, ফুফু, খালা, চাচি, মামি এই সম্পর্কের সবাইকে ইংরেজীতে আন্টি ডাকে। দাদা-নানাকে ডাকে গ্র্যান্ডপা, দাদি-নানিকে ডাকে গ্র্যান্ডমা। পরিবারের ঘনিষ্ঠজন কিংবা দূরের মানুষ সব সম্পর্ককেই ইংরেজীতে সম্বোধনের ফলে আঙ্কেলটা আসলে কার কি হয় কিংবা আন্টিটা কার কি হয়, তা বুঝা যায় না। তারা কি রক্তসম্পর্কীয় চাচা, ফুফু, দাদা-দাদি, মামা-খালা, নানা-নানি কিছুই বুঝা যায় না। সম্পর্কগুলোর গভীরতাকে উড়িয়ে দিয়ে শুধুই আঙ্কেল-আন্টি সম্বোধন করা হয়। তাতে মনে হয় কোথাকার কোন আঙ্কেল-আন্টি যেনো তারা। এছাড়াও বাবাকে ড্যাডি, মাকে মাম্মি, ভাইকে ব্রো, বোনকে সিস সহ বাংলায় মধুর ও সুগভীর ডাকগুলোকে ইংরেজীতে বিকৃত করে ডাকার অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে দেশে।  

বাসায় যদি নিজের ফুফুও বেড়াতে আসে, তাকে আন্টি বলে ডাকার কারনে, অপরিচিত কোন মানুষ বুঝতেও পারে না যে এই আন্টিটাই এই পরিবারের সন্তান, যিনি বিবাহের আগে এই পরিবারের মধ্যমণি ছিলেন, এটিই তাহার শেকড়। আন্টি বলে পরিচয় দেওয়ার কারনে তিনি কোথাকার আন্টি, কার কি হয়, কত প্রশ্নই না চলে আসতে পারে অপরিচিতজনের সামনে। অথচ তিনি আমার ফুফু বললেই চেনা যায় যায় তিনি কে। এভাবে প্রত্যেকটি সম্পর্ককে বাংলায় সম্বোধন করলে কতই না গভীরভাবে উপলব্ধি করা যায় মানুষটির সাথে পরিবারের ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কে। 

ইংরেজীতে সম্বোধনটাকে যদি স্বাভাবিক ধরেও নেই। বিষয়টা আসলেই স্বাভাবিকের পর্যায়ে নেই বর্তমানে। আমাদের শৈশবে আমরা পাড়ার যেকোন বড় ভাই, চাচা-গুরুজনদের সম্মান, শ্রদ্ধার চোখে দেখেছি, নিজেরা শত দুষ্টমি করলেও তাদের সামনে পরলেই তাদের সম্মানটুকু দিয়েছি, দিতে চেষ্টা করেছি। তাদের শাসন মাথা পেতে নিয়েছি, তাদের ধমকে তটস্থ হয়েছি, এই বুঝি বাবাকে বলে দেবে দুষ্টমি, মন্দ কাজের কথা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি পুরোটাই ভিন্ন, আঙ্কেল-আন্টি ডাকা প্রজন্ম ভুলে গেছে গুরুজনদের সম্মান করতে। কিসের পাড়াতো চাচা-বড় ভাই, তাদেরকে ডেনো গুণার টাইমই নাই। ঘরের মানুষই তো এই প্রজন্মের অনেকের কাছে তুচ্ছ, সেখানে পাড়ার বড়-গুরুজন আবার কে। পশ্চিমা সংষ্কৃতিতে আকৃষ্ট হয়ে জীবনযাপনেও পরিবর্তন আনা প্রজন্ম ইংরেজী চর্চার আড়ালে সামাজিক-মূল্যবোধকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। পারিবারিক-সামাজিক সম্পর্ককে ঠুনকো করে ফেলছে অনাসায়ে।

বাঙ্গালী ও বাংলা ভাষাবাসী হিসেবে আমাদের ঐতিহ্য আছে, গৌরব আছে। আমরা কিছুতেই অন্য দেশের ভাষা কিংবা সংস্কৃতিকে আকড়ে ধরতে গিয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবেই তো নয়ই, অনিচ্ছায়ও বাংলাকে ছোট করতে পারি না, ছোট হবে এমন কোন কাজ করতে পারি না, করা কাম্য নয়। অফিস আদালত কিংবা বিদেশে যোগাযোগের বেলায় কিংবা ধর্মীয় সংস্কৃতির চর্চার লক্ষ্যে অন্য ভাষা শেখা আবশ্যক হলেও বাংলা ভাষার চর্চা করতে হবে প্রতি মুহুর্তে, প্রতিনিয়ত। সেই সাথে পারিবারিক সম্পর্কের গভীরতা উপলবিদ্ধ করতে এবং গভীরতা বুঝাতে কাকাকে কাকু-চাচা, মামাকে, মামা-মামু, ফুফুকে ফুফু-ফুফি, খালাকে খালা-খালাম্মাই ডাকবো, আঙ্কেল-আন্টি নয়। রক্তে কেনা বাংলার ভাষার চর্চাটা আমাদের পারিবারিক সহ সববিষয়ে করা জরুরী।  

জুবায়ের আহমেদ
শিক্ষার্থী
ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া (বিজেম)
কাটাবন, ঢাকা




ডেল্টা টাইমস্/জুবায়ের আহমেদ/সিআর/জেড এইচ

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-২২৬৬৩৯০১৮, ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-২২৬৬৩৯০১৮, ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com