অব্যবস্থাপনা পেরিয়ে সাফল্যের পথে এসেনসিয়াল ড্রাগস
নিজস্ব প্রতিবেদক:
|
![]() অব্যবস্থাপনা পেরিয়ে সাফল্যের পথে এসেনসিয়াল ড্রাগস জানা গেছে, একসময় রাষ্ট্রীয় ওষুধ খাতের স্থবির প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ইডিসিএল আজ সফলতার পথে। দক্ষ ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছ ক্রয়নীতি ও আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে বইছে পরিবর্তনের হাওয়া। দেশীয় ওষুধ শিল্পে এই রূপান্তর নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে। ইডিসিএল হয়ে উঠছে সুশাসনের উদাহরণ। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটি অর্জন করেছে চোখে পড়ার মতো সাফল্য। কর্মঘণ্টা বৃদ্ধি, ওভারটাইম ব্যয় হ্রাস, অদক্ষ জনবল কমানো ও উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি এখন নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে। ইডিসিএলের উৎপাদন যন্ত্র এখন প্রতিদিন ৩০ মিনিট বেশি সময় চালানো হচ্ছে। এতে দৈনিক ১ হাজার ২৬১ কর্মঘণ্টা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বছরে মোট ৩ লাখ ১০ হাজার ২০৬ অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করছে। এই বাড়তি দক্ষতা বছরে প্রায় ৪ কোটি ৬৫ লাখ ৩০ হাজার ৯০০ টাকা সাশ্রয় এনে দিয়েছে। ফলে প্রতিদিনের কাজ এখন নির্ধারিত অফিস সময়ের মধ্যেই শেষ হচ্ছে, ওভারটাইমের প্রয়োজনও অনেক কমে গেছে। ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের ফলে পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় ওভারটাইম ব্যয় ৪ কোটি ১৩ লাখ ৫২ হাজার ২৮৩ টাকা কমেছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, কর্মঘণ্টা বৃদ্ধি ও সময় ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা আনার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। একাধিক কর্মকর্তা জানান, আগে রাতে কাজ শেষ হতো, এখন সময়মতো সব সম্পন্ন হয়। কর্মীরা এখন আরও দায়িত্বশীল। অতিরিক্ত ও অদক্ষ ৭২২ জন কর্মী কমানো হলেও উৎপাদন বেড়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ওষুধ উৎপাদন বেড়েছে ৫৯ কোটি টাকার, আর বেতন বাবদ সাশ্রয় হয়েছে প্রায় ২৪ কোটি টাকা। ফলে কোম্পানিটি আর্থিক সংকট থেকে বেরিয়ে এসে স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরেছে। উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে টোল ম্যানুফ্যাকচারিং আগের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশে নামানো হয়েছে। আগে ৩৩টি আইটেম বাইরের কারখানায় উৎপাদন করা হতো, এখন হচ্ছে মাত্র ১২টি। এর ফলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩০ কোটি ৬৭ লাখ টাকার সাশ্রয় হয়েছে। ইডিসিএল জানিয়েছে, ধীরে ধীরে নিজেদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে সম্পূর্ণভাবে টোল ম্যানুফ্যাকচারিং বন্ধ করা হবে। গোপালগঞ্জ শাখায় ইতিমধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ও স্যালাইন উৎপাদনের ট্রায়েল চলছে। পাশাপাশি আইভি ফ্লুইড (৫০০ ও ১০০০ মি.লি.) উৎপাদনের জন্যও মেশিন ট্রায়াল শুরু হয়েছে। প্রকল্পটি পুরোপুরি চালু হলে দেশে স্যালাইন সরবরাহে বড় পরিবর্তন আসবে। ইডিসিএলের ক্রয় প্রক্রিয়ায় সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ায় এখন টেন্ডারে বেশি দরদাতা অংশ নিচ্ছেন। এতে প্রতিযোগিতামূলক দামে কাঁচামাল ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে চলতি অর্থবছরে ২৬ কোটি ৬৮ লাখ ৫৮ হাজার ৯৯৭ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। আগে দরদাতারা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াতেন, এখন প্রতিযোগিতামূলক দর নিশ্চিত হওয়ায় ভালো উৎস থেকে কম দামে কাঁচামাল পাওয়া যাচ্ছে। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে ভ্যাক্সিন প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। তিন বছরের মধ্যে এটি সম্পন্ন হলে দেশের ভ্যাক্সিনের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে। একই এলাকায় এফডিএ গাইডলাইন অনুযায়ী আধুনিক ফার্মাসিউটিক্যাল কারখানা নির্মাণাধীন রয়েছে, যেখানে আন্তর্জাতিক মানের ওষুধ উৎপাদন সম্ভব হবে। ইডিসিএলের ঢাকা ফ্যাক্টরির পাশে ৬৭.১০৯ ডেসিমেল জমিতে একটি বহুতল ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে। এতে জিএমপি মানোন্নয়ন ছাড়াও উৎপাদন সক্ষমতা বাড়বে এবং ভাড়াকৃত গুদামের খরচ বছরে প্রায় ১৩ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। মোটিভেশন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের উৎপাদনমুখী করা হয়েছে। আগে যেখানে অনেক শ্রমিক কর্মবিমুখ ছিলেন, এখন তাঁরা সময়মতো দায়িত্ব পালন করছেন। এতে কাজের গতি ও মান দুটোই বেড়েছে। ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. এ সামাদ মৃধা বলেন, “ইডিসিএলের মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে নতুন টিকা উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ প্রক্রিয়া পুরোদমে চলছে, যা ২০২৭ সালের মধ্যে চালু হবে। গোপালগঞ্জে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ও স্যালাইন উৎপাদন শুরু হতে যাচ্ছে, শীঘ্রই উদ্বোধনের মাধ্যমে বাজারজাত করা হবে।” তিনি আরও বলেন, “অতিরিক্ত জনবল কমানোয় বেতন-ভাতার ব্যয় কমে এসেছে। পাশাপাশি ক্রয়সংক্রান্ত নজরদারি জোরদার করায় স্থানীয় ও আমদানি উভয়ক্ষেত্রেই মোড়ক, কাঁচামাল, প্রকৌশল সামগ্রী, স্টেশনারি, ডাইনিং এবং অন্যান্য খাতে ব্যয়সহ সার্বিক খরচের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব হয়েছে।” মো. এ সামাদ মৃধা আরও জানান, “ঢাকা, খুলনা ও বগুড়া প্রকল্পের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের কাজ চলছে। প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন হলে ইডিসিএল সরকারের ওষুধের চাহিদা পূর্ণমাত্রায় মেটাতে সক্ষম হবে।” ডেল্টা টাইমস্/সিআর/আইইউ |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |