বিআইবিএমের গবেষণা প্রতিবেদনে তথ্য
গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো গলা টিপে মারার শামিল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০১৯, ১২:০০ এএম

ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদ, চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় বাড়ছে উৎপাদন খরচ। বাড়ানো হয়েছে শ্রমিকদের মজুরিও। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের কাক্সিক্ষত মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে তৈরি পোশাক খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীদের রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এমন সময় গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো মানে গলা টিপে মারার শামিল।
বুধবার বিজিএমইএ’র অ্যাপারেল ক্লাবে ‘শিল্পের জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব’ সম্পর্কিত বিষয়ের ওপর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে তৈরি পোশাক খাতসংশ্লিষ্ট তিনটি সংগঠন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, বিকেএমইএ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনসুর আহমেদ ও বিটিএমএ’র প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকন।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বিশ্ববাজারে পোশাকের দাম না বাড়লেও প্রতিবছর ৮ শতাংশ হারে শিল্পের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। গত বছরের জুনে ব্যাংকের সুদহার ছয়-নয় বাস্তবায়নের কথা থাকলেও এর সুবিধা এখনও পাওয়া যায়নি। ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের কারণে আমরা কোণঠাসা। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ন্যূনতম মজুরি ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ফলে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে ২৫ থেকে ৩৯ শতাংশ। বেতনের চাপ সামাল দিতে পারছি না, এর মধ্যে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বাড়ালে তার চাপ সামাল দেব কীভাবে?

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর সময় সরকার আমাদের আশ্বস্ত করেছিল, পোশাক খাতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। এ অবস্থায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কোনো যৌক্তিকতা নেই বরং এটি হাস্যকর।

তিনি বলেন, এখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমছে। সারা বিশ্বের কোথাও জ্বালানির দাম আমাদের মতো বাড়ানো হয় না। কিন্তু হঠাৎ করে ১৩২ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত এ দাম বাড়লে এ খাতে উৎপাদন খরচ বাড়বে ৫ শতাংশ, যা এ খাতের উদ্যোক্তাদের পক্ষে মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। এটি বাস্তবায়ন হলে বস্ত্র শিল্পের উদ্যোক্তারা গভীর সংকটে পড়বেন।

বিজিএমইএ সভাপতি অভিযোগ করে বলেন, শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের চাপ পাচ্ছি না। আবার অনেক ক্ষেত্রে গ্যাস পেলেও পর্যাপ্ত নয়; আবার যতটুকু গ্যাস ব্যবহার করছি তার চেয়ে বেশি বিল পরিশোধ করছি। অর্থাৎ গ্যাস ব্যবহার না করে তিতাস গ্যাস কোম্পানিকে বাতাসের মূল্য দিচ্ছি!

আগামী দুই বছর গ্যাস-বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর দাবি জানিয়ে পোশাক শিল্পের মালিকদের এ নেতা বলেন, অবকাঠামোগত সমস্যা, কর্মপরিবেশ নিশ্চিতসহ বিভিন্ন কারণে বিগত সময়ে ব্যবসায়ীরা যে লোকসান গুনছেন, তা পূরণে ব্যবসায়ীদের সময় দিতে হবে। এ জন্য আরও দুই বছর সময় চান ব্যবসায়ীরা। এ সময় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা গ্রহণে সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।

বিকেএমইএ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ২০১৯ সালকে এ খাতের টার্নিং পয়েন্ট আখ্যা দিয়ে বলেন, এ সময় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ালে এ শিল্পে মহামারী রূপ ধারণ করবে, যা সামাল দেয়া কঠিন হবে। শিল্পের কথা বিবেচনা করে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ১০ বছরে ছয়বার গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ক্যাপটিভ ও যানবাহনের সিএনজির দাম। দুই চুলার গ্যাস বিল ছিল ৪৫০ টাকা, যা এখন ৮০০ টাকা। নতুন প্রস্তাবে তা ১ হাজার ৪৪০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। এক চুলার ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত দর ১ হাজার ৩৫০ টাকা।

২০০৮ সালের এপ্রিলে প্রতি ঘনমিটার সিএনজির দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৬ টাকা ৭৫ পয়সা। এখন তা ৪০ টাকা, যা বাড়িয়ে ৫৪ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। নতুন প্রস্তাবে বিদ্যুতে ২০৮ শতাংশ, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ৯৬ শতাংশ, শিল্পে ১৩২ শতাংশ ও বাণিজ্যিক খাতে ৪১ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-২২৬৬৩৯০১৮, ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-২২৬৬৩৯০১৮, ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com