সাত গোলের রোমাঞ্চের ম্যাচে হেরে গেল বাংলাদেশ
ডেল্টা টাইমস ডেস্ক:
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:১০ পিএম

সাত গোলের রোমাঞ্চের ম্যাচে হেরে গেল বাংলাদেশ

সাত গোলের রোমাঞ্চের ম্যাচে হেরে গেল বাংলাদেশ

ম্যাচের শুরুর দিকেই চোখ ধাঁধানো এক গোলে পুরো গ্যালারি নাচিয়ে তুলেছিলেন হামজা চৌধুরী। নিশ্চিতভাবেই ফ্রি-কিক থেকে করা এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের গোলটি অনেক দিন মনে রাখবেন বাংলাদেশের মানুষ। মনে রাখবেন রোমাঞ্চের বাঁকে ভরা ম্যাচটিও। কিন্তু এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডে হংকং চায়নার বিপক্ষে ম্যাচটিতে শেষ হাসি হাসা হয়নি স্বাগতিকদের।


জাতীয় স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার (৯অক্টোবর) ‘সি’ গ্রুপে ম্যাচটি ৪-৩ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ। বদলি নেমে হ্যাটট্রিক করে হংকং চায়নার জয়ের নায়ক রাফায়েল মার্কিস। দলটির পক্ষে অন্য গোলটি করেন এভারটন কামারগো। বাংলাদেশের পক্ষে গোল করেছেন হামজা, শেখ মোরছালিন ও সামিত সোম।
বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরার ফুটবল দর্শন নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই। তবে যত সমালোচনাই হোক, তিনি তার দর্শনে বরাবরই অবিচল। ভারত ও সিঙ্গাপুর ম্যাচের ধারাবাহিকতায় এ ম্যাচের আগেও যেমন তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ২৩ সদস্যের দল ঘোষণা করেননি। কোন ২৩ জন এই ম্যাচের জন্য নির্বাচিত ছিলেন, সেটি খেলোয়াড়রা জানতেন কি না কে জানে!

এ ম্যাচের আগে ২৮ জন খেলোয়াড় ক্যাম্পে ছিলেন। তাদের মধ্যে প্রাবাসী ছিলেন সাতজন। এদের মধ্যে শাহ কাজেম কিরমানি ২৩ সদস্যের চূড়ান্ত স্কোয়াডে সুযোগ পাননি। বাকি ছয়জনের মধ্যে হামজা চৌধুরী ও তারিক কাজীকে শুরুর একাদশে রাখা হয়। অধিনায়ক হলেও ভারত ও সিঙ্গাপুর ম্যাচের ধারাবাহিকতায় শুরুর একাদশে জায়গা পাননি জামাল ভূঁইয়া। এ ছাড়া ফাহামেদুল ইসলাম, জায়ান আহামেদ ও সামিত সোমকেও একাদশের বাইরে রাখা হয়। চোট থাকায় অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার তপু বর্মণও ছিলেন না। জামাল-তপুর অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের আর্ম ব্যান্ড নিয়ে মাঠে নামেন সোহেল রানা সিনিয়র।


ম্যাচে প্রথম ছাপ রাখে হংকং চায়না। সপ্তম মিনিটে বক্সের বাঁ প্রান্ত থেকে দারুণ এক প্লেসিং শটে বাংলাদেশের রক্ষণে কাঁপন ধরান ম্যাট অর। তার বাঁ পায়ের শটটি দূরের পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। বাংলাদেশের প্রথম ভালো আক্রমণটি ছিল নবম মিনিটে। তাজ উদ্দিনের ব্যাক পাস থেকে বল পেয়ে চিপ শট নিয়েছিলেন ফরোয়ার্ড রাকিব। বক্সের বাইরে থেকে তার ওই প্রচেষ্টাটি ছিল দেখার মতো। তবে হংকং গোলরক্ষক ইয়াপ হুং ফাই সহজেই বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন।

এরপর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। হামজা-জাদু। ম্যাচের বয়স তখন ১৩ মিনিট। প্রায় ২০ গজ দূর থেকে ডান পায়ের ফ্রি-কিকে গোল আদায় করে নেন বাংলাদেশের মানুষের আশা-ভরসার প্রতীক। কাছের পোস্টকে লক্ষ্য করে বেশ জোরের সঙ্গে শটটি নেন হামজা, যা হংকং চায়নার ম্যাট ওরের মাথায় হালকা ছোঁয়া লেগে জালে জড়ায়। এর আগে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমকে লিওন জোন্স ফাউল করায় ফ্রি-কিকটি পেয়েছিল বাংলাদেশ।


বাংলাদেশের হয়ে চতুর্থ ম্যাচে হামজার এটি দ্বিতীয় গোল। গত জুনে ভুটানের বিপক্ষে এই মাঠেই বাংলাদেশের জার্সিতে প্রথম গোলটি পেয়েছিলেন হামজা। জামাল ভূঁইয়ার ফ্রি-কিক থেকে হেডে গোলটি করেছিলেন তিনি। সেটি ছিল লাল-সবুজ জার্সিতে তার দ্বিতীয় ম্যাচ।

এগিয়ে যাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচে বেশ খানিকটা সময় দাপট ছিল বাংলাদেশের। তবে ধীরে ধীরে নিজেদের গুটিয়ে নেয় জার্মান, ব্রাজিলিয়ান বংশোদ্ভূত ফুটবলারে ঠাসা হংকং চায়না। ৩৯ মিনিটে ডান প্রান্ত দিয়ে এভারটন বেশ বিপজ্জনভাবে ঢুকে পড়েন। বাংলাদেশের রক্ষণকে পরাস্ত করে শট নিতে পারলেও সেটি পোস্টে ছিল না। ৪২ মিনিটে নিকোলাস মেদেইরোস বল জালে জড়ালেও অফসাইডের কারণে বাতিল হয় সেটি।

তবে প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে সেট পিস থেকে গোল আদায় করে ম্যাচে সমতা ফেরায় হংকং চায়না (১-১)। গোলটি করেন ব্রাজিলে জন্ম নেওয়া এভারটন কামারগো। দূরের পোস্ট লক্ষ্য করে ইউ জয়ের নেওয়া ফ্রি-কিক অনেকটা নির্মহই ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা বল ক্লিয়ার করতে সময় নিয়ে ফেলেন। একপর্যায়ের ফাহিমের মাথা ছুঁয়ে বল এসে পড়ে কামারগোর পায়ে। তিনি একেবারে অরক্ষিত ছিলেন। গোল করতে কোনো কষ্টই হয়নি তার।


দ্বিতীয়ার্ধে খেলা শুরু হওয়ার ৫ মিনিটের মধ্যে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। বদলি নেমে ৫০তম মিনিটে গোলটি করেন রাফায়েল মার্কিস (২-১)। যে গোলেও দায় আছে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের। বক্সের বেশ বাইরে হংকংয়ের একটি আক্রমণ রুখতে গিয়ে ব্যাকপাস দিয়ে বসেন সোহেল রানা জুনিয়র, যা অরক্ষিত অবস্থায় থাকা মার্কিস পেয়ে যান। গোল করতে ভুল করেননি ফ্রান্সে জন্ম নেওয়া এই ফরোয়ার্ড।

২-১ গোলে পিছিয়ে পড়ার পর কোণঠাসাই হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। হাভিয়ের কাবরেরা অবশ্য দ্বিতীয় গোল হজমের পর একসঙ্গে তিনটি পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ। ৫৯ মিনিটে সোহেল রানা সিনিয়র, সোহেল রানা জুনিয়র ও ফয়সাল আহমেদ ফাহিমকে তুলে নিয়ে সামিত সোম, জামাল ভূঁইয়া ও ফাহামেদুলকে মাঠে নামাম। কিন্তু তাতে বাংলাদেশের খেলার ছন্দে খুব একটা বদল আসেনি। উল্টো ৭৪ মিনিটে মার্কিস তার দ্বিতীয় গোল আদায় করেন। ৩-১ গোলে পিছিয়ে পড়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ ম্যাচ থেকেও এক রকম ছিটকে যায়। তবে ৮৪ মিনিটে হংকং গোলরক্ষকের ভুলের সুযোগ নিয়ে গোল আদায় করেন শেখ মোরছালিন (৩-২)। তাতে ম্যাচে জাগে রোমাঞ্চ। এরপর ৯ মিনিটের যোগ করা সময়ে সামিত সোমের গোলে স্কোরলাইন ৩-৩ করে বাংলাদেশ। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে রাফায়েল হ্যাটট্রিক তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে হতাশায় পোড়ান।


এই হারের ফলে এশিয়ান কাপের মূল পর্বের আশা কার্যত শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশের। তিন ম্যাচে মাত্র ১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে সবার তলানিতে হাভিয়ের কাবরেরার দল।


ডেল্টা টাইমস/সিআর

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-২২৬৬৩৯০১৮, ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-২২৬৬৩৯০১৮, ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com