বিবর্ণ জীবনে...অদম্য নারী
রেহানা ফেরদৌসী:
প্রকাশ: শনিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৪০ এএম আপডেট: ১১.১০.২০২৫ ১১:৫১ এএম

বিবর্ণ জীবনে...অদম্য নারী

বিবর্ণ জীবনে...অদম্য নারী

বাংলাদেশের সমাজে স্বামীহারা বা বিধবা নারী এখনো সবচেয়ে অবহেলিত শ্রেণির একটি। পরিবারে তারা অনেক সময় সহানুভূতির নয়, করুণার পাত্রী হন। সমাজও যেন তাদের দেখে দূরত্ববোধ নিয়ে—যেন তারা অপ্রয়োজনীয় কেউ। অথচ একজন বিধবা নারীর কষ্ট কেবল অর্থনৈতিক নয়; মানসিক শূন্যতা, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এবং সন্তান প্রতিপালনের একক দায় মিলে তা বহুগুণে গভীর হয়।

বিধবাদের অনেক সময় সমাজের বোঝা মনে করা হয়, এমনকি ‘অপয়া’ হিসেবেও বিবেচনা করা হয়—যা তাদের মানসিক কষ্টকে আরও তীব্র করে। সন্তানদের মানুষ করতে গিয়ে তারা যেমন লড়াই করেন দারিদ্র্যের সঙ্গে, তেমনি লড়াই করেন সমাজের অবজ্ঞা ও কটূ মন্তব্যের সঙ্গে। তালাকপ্রাপ্ত নারীরাও একই ধরনের বৈষম্য ও অবিচারের শিকার হন। অথচ ইসলাম এসব নারীর মানবিক মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করেছে।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিধবা ও একক নারীর সামাজিক সম্মান প্রতিষ্ঠার বাস্তব দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি এবং কষ্ট ও মেহনতের কারণে বিবর্ণ হয়ে যাওয়া বিধবা কেয়ামতের দিন পাশাপাশি থাকব।” (আবু দাউদ: ৫০৫৯)। এই বাণী কেবল ধর্মীয় আশ্বাস নয়; এটি মানবিক মূল্যবোধের উচ্চতম স্বীকৃতি।

যে নারী স্বামীর মৃত্যুর পর নিজের রূপ-লাবণ্য, মর্যাদা ও জীবনের আনন্দ বিসর্জন দিয়ে সন্তানদের মানুষ করেন—তিনি সমাজে সবচেয়ে সম্মানিতদের একজন। ইসলাম এমন নারীর জন্য জান্নাতের বিশেষ পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, “আমি জান্নাতের দরজা খুললে এক নারী আমার আগে প্রবেশ করতে চাইবে। সে বলবে, আমি সেই নারী, যে নিজের এতিম সন্তানদের লালন-পালনের জন্য বিয়ে থেকে বিরত ছিলাম।” (মুসনাদে আবি ইয়ালা: ৬৬৫১)।

নবী (সা.) নিজ জীবনে বিধবা নারীদের সহায়তায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি একাধিক বিধবা নারীকে বিয়ে করেছেন তাদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে। তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি বিধবা ও মিসকিনদের প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট থাকে, সে আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদের মতো।” (বোখারি: ৪৯৬২)। এমন শিক্ষা কেবল ধর্মীয় অনুশাসন নয়; এটি সমাজের দায়িত্ববোধের প্রতিফলন।

আজও আমাদের সমাজে অসংখ্য নারী আছেন, যারা একা হাতে সন্তান মানুষ করছেন, সংসার চালাচ্ছেন, কিন্তু পান না সামান্য সামাজিক স্বীকৃতি। অনেক সময় তাদের সাফল্যকেও ‘অবস্থানগত দায়’ বলে হেয় করা হয়। অথচ এই নারীরাই আমাদের সমাজের সবচেয়ে দৃঢ় ও সাহসী মানুষ—যারা হারিয়ে যাওয়ার বদলে টিকে থাকেন, ভেঙে পড়ার বদলে দাঁড়িয়ে যান।

আমাদের সমাজ এখনো বিধবা নারীর জীবনকে দান বা করুণার বিষয় হিসেবে দেখে, মর্যাদা বা অধিকার হিসেবে নয়। অথচ একজন বিধবা নারীকে সম্মান করা মানে মানবিকতা, সামাজিক ন্যায় ও ধর্মীয় শিক্ষাকে একসঙ্গে প্রতিষ্ঠা করা। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র—সবাই যদি এই নারীদের পাশে মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে দাঁড়ায়, তাহলে তারা হতে পারেন প্রেরণার উৎস, আত্মনির্ভরতার প্রতীক।

বিধবা নারী মানেই দুঃখ নয়—তিনি এক অদম্য জীবনের প্রতীক। একসময়ের সঙ্গী হারিয়েও যিনি সন্তান, সংসার ও সমাজের জন্য জীবনকে আঁকড়ে রাখেন, তিনি সম্মানের দাবিদার।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে এমন নারীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও সহযোগিতাপূর্ণ হওয়ার তাওফিক দিন।


লেখক: সহ সম্পাদক,সমাজকল্যাণ বিভাগ, পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক)।

ডেল্টা টাইমস/রেহানা ফেরদৌসী/সিআর/এমই

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-২২৬৬৩৯০১৮, ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-২২৬৬৩৯০১৮, ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com