খসড়া আইনে সাংবাদিকরা বিপদে, থানার সাহায্য নেই
ডেল্টা টাইমস ডেস্ক:
প্রকাশ: রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫, ৮:০৬ পিএম আপডেট: ১২.১০.২০২৫ ৮:২৩ পিএম

খসড়া আইনে সাংবাদিকরা বিপদে, থানার সাহায্য নেই

খসড়া আইনে সাংবাদিকরা বিপদে, থানার সাহায্য নেই

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তা বিধানে ‘সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৫’ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে, প্রস্তাবিত এই আইনের খসড়ায় বেশ কিছু বিতর্কিত বিধান রয়েছে, যা সাংবাদিকদের সুরক্ষার বদলে বাড়িয়ে দিতে পারে হয়রানি ও ঝুঁকি। থানায় অভিযোগ দায়েরের সরাসরি বিধান না থাকা, অপরাধসমূহ জামিনযোগ্য হওয়া এবং মিথ্যা অভিযোগের কঠোর শাস্তির বিধান রাখায় সাংবাদিক সংগঠনগুলো আইনটির বর্তমান রূপে সংশোধনের দাবি জানিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, সংশোধনী ছাড়া এই অধ্যাদেশ পাস হলে তা হিতের বিপরীত হয়ে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও পেশাগত নিরাপত্তাকে আরও সংকুচিত করতে পারে।

ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টদের মতামতের আলোকে খসড়াটি চূড়ান্ত করবে সরকার। কমিশনের সুপারিশের আলোকে প্রণীত খসড়ায় সাংবাদিকগণ পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সহিংসতার শিকার হলে আদালতে অভিযোগ দাখিল করতে হবে। এতে থানায় অভিযোগ দায়েরের বিধান না থাকায় সাংবাদিকরা বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হতে পারেন। অপরদিকে, এ আইনের অপরাধের ধারাটি জামিনযোগ্য হওয়ায় অপরাধীরা গ্রেফতার হওয়ার পরই আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে আসবে। আর ভিকটিম সাংবাদিক বা সংবাদকর্মীর অভিযোগ সত্য প্রমাণ করতে না পারলে তার ভাগ্যে জেল ও জরিমানা রয়েছে।

অপরদিকে, সংবাদ প্রকাশের জেরে কেউ যদি সংবাদের সোর্স জানতে চাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে, তাহলে তাকে শাস্তির আওতায় আনার কোনো বিধান নেই খসড়ায়। এসব বিষয়ে সংশোধন করেই আইনটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করতে হবে। অন্যথায়, সুরক্ষার পরিবর্তে সাংবাদিকরা হয়রানির শিকার হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সাংবাদিক সংগঠনগুলো।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়ায় ৬টি অধ্যায় ও ২০টি ধারা রয়েছে। খসড়ায় বেশ কিছু সংশোধনী জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যথায়, সংশোধনী ছাড়া কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী হুবহু অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হলে তা হিতের বিপরীত হতে পারে। সাংবাদিকতার সুরক্ষার বদলে হয়রানি বাড়তে পারে। আবার তদন্তের দুর্বলতার কারণে সাংবাদিকদের হয়রানির অভিযোগ অসত্য প্রমাণিত হলে উল্টো সাংবাদিকের জেল ও জরিমানা হতে পারে। এ জন্য অধ্যাদেশ জারি হওয়ার পর বিতর্ক এড়াতে বা নতুন সমস্যা এড়াতে অধ্যাদেশ পাসের আগে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা জরুরি বলে মনে করছেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)-এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন বলেন, সাংবাদিক নির্যাতনের বিচার হয় না। আইনটি এমনভাবে করতে হবে যাতে কেউ সাংবাদিকদের হুমকি, ধমকি, হয়রানি ও নির্যাতন করতে সাহস না পায়। আর সাংবাদিকদের বিচার পাওয়ার পথটি সহজ করতে হবে। এ জন্য আইনে থানায় অভিযোগ দায়েরের বিধান রাখতে হবে এবং সাংবাদিক নির্যাতনের অপরাধ অজামিনযোগ্য করতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন নির্যাতনকারীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকদের সুরক্ষার অন্যতম বিষয় হলো কর্মস্থলে নানাভাবে হয়রানি: নিয়োগপত্র না দেওয়া, কথায় কথায় চাকরি চলে যাওয়া, মাসের পর মাস বেতন বকেয়া থাকা, ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন না করা। এ বিষয়গুলো আইনের মধ্যে নিয়ে আসা প্রয়োজন। পেশাগত সুরক্ষার মধ্যে অবশ্যই এসব বিষয়ে সুরক্ষা দেওয়া প্রয়োজন।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি আবু সালেহ আকন বলেন, ৫ আগস্টের পরও অসংখ্য সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। একটি ঘটনারও বিচার হয়নি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার এখনো তদন্ত শেষ হয়নি। সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছে; কখনো কখনো নির্যাতন, মিথ্যা মামলা ও সহিংসতার শিকার হচ্ছে। সুরক্ষা আইনে এমন বিধান থাকতে হবে যাতে কেউ সাংবাদিকের হয়রানি করতে সাহস না পায়। অভিযোগ থেকে বিচার শেষ হওয়া পর্যন্ত পদ্ধতিটি সহজ ও বিনামূল্যে হওয়া উচিত। আর নির্যাতনকারী যেন কঠোর শাস্তি পায়।

ডিআরইউ’র সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল বলেন, সাংবাদিকগণ পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পদে পদে সহিংসতার শিকার হচ্ছে। হামলা মামলার শিকার হচ্ছেন। আইনে এমন কিছু বিধান থাকা প্রয়োজন যাতে সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ হয়। কেউ যেন কোনো সাংবাদিকের গায়ে হাত দেয়ার সাহস না পায়। প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় এ বিধানগুলো অনুপস্থিত। দায়সারাভাবে আইন করলে লাভ হবে না। সাংবাদিক নির্যাতন অজামিনযোগ্য রেখে কঠোর শাস্তির বিধান রাখতে হবে। তাহলেই সাংবাদিকরা আইনের সুফল ভোগ করতে পারবে।

বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম মহসিন বলেন, সাংবাদিকদের শারীরিক নিরাপত্তার পাশাপাশি পেশাগত নিরাপত্তা দেওয়া প্রয়োজন। ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নে সরকারকে জোর দিতে হবে এবং আইনী বিধান করতে হবে। সাংবাদিকদের চাকরির সুরক্ষা আইনের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। সাংবাদিক নির্যাতনের আইনও কঠোর হওয়া প্রয়োজন। যাতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোনো সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার না হন।

গণমাধ্যম সংস্কার নিয়ে কাজ করা সংগঠন জার্নালিস্ট কমিউনিটি অব বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়ায় বেশ কিছু সংশোধনী সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। এ বিষয়ে সংগঠনটির আহ্বায়ক, প্রবীণ সাংবাদিক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষার জন্য পৃথক আইন প্রণয়ন করা নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু খসড়ায় বেশ কিছু বিধান রয়েছে, যা সংশোধন করা জরুরি। এর মধ্যে যেমন: থানায় অভিযোগ দাখিলের বিধান, সহিংসতা বা হয়রানির পরিমাণ অনুযায়ী সাজা নির্ধারণ এবং সাংবাদিক নির্যাতনের অপরাধ অজামিনযোগ্য করা। তিনি বলেন, বিশেষ আইন করতে গেলে যেন এমন পরিস্থিতি না হয় যে নির্যাতনের পরও সাংবাদিকরা প্রতিকার না পায় বা অভিযোগ করতে সাহস না পায়। এ জন্য স্বাভাবিক আইনের মতোই বিচার প্রাপ্তির পথ সহজ করতে হবে এবং দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার বিধান রাখতে হবে।

খসড়ার তৃতীয় অধ্যায়ের ধারা ৮-এ বলা হয়েছে:
“ধারা ৮। অভিযোগ দায়ের- (১) পেশাগত কর্মে নিয়োজিত কোন সাংবাদিক/সংবাদকর্মী সহিংসতার শিকার হলে তিনি এখতিয়ারাধীন কোন প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে লিখিতভাবে বা অনলাইনের মাধ্যমে বা তার কোন প্রতিনিধির মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। (২) উপধারা (১)-এ দায়েরকৃত অভিযোগ প্রাপ্তির পর প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত উক্ত অভিযোগটি সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারের নিকট প্রেরণ করে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেবেন এবং ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ জারি করবেন। (৩) যুক্তিসংগত কারণে উপধারা (২)-এ উল্লেখিত সময়ের মধ্যে তদন্ত কার্য সম্পন্ন করা সম্ভব না হলে তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে উপস্থিত হয়ে বিলম্বের কারণ ব্যাখ্যা করবেন এবং আদালত সহিংসতার শিকার সাংবাদিক/সংবাদকর্মীর শুনানি গ্রহণ করে তদন্তের জন্য আরও ৩০ কার্যদিবস বৃদ্ধি করতে পারবেন।”

সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, উল্লেখিত ধারায় অভিযোগ দায়েরের জন্য আদালতে যাওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। বর্তমানে কোনো সাংবাদিক সহিংসতার শিকার হলে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এ আইনের বিধানে থানায় অভিযোগ দায়েরের বিধান না থাকায় পুলিশ সাংবাদিকের কোনো অভিযোগ গ্রহণ না করার আশঙ্কা রয়েছে। থানায় অভিযোগ দায়ের করলে সহজে ও বিনা খরচে প্রতিকার পাওয়া যায়। এ জন্য উক্ত ধারায় থানায় অভিযোগ দায়েরের বিধান রাখতে হবে। আর তদন্ত কাজটি সহজ করতে হবে। এখানে অভিযোগ তদন্তের জন্য ৩০ দিনের সময়সীমার কথা বলা হলেও তা বাস্তবে সম্ভব হবে না। দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার জন্য সময়সীমা বেধে দেওয়া প্রয়োজন।

জার্নালিস্ট কমিউনিটি অব বাংলাদেশ-এর সংশোধনী প্রস্তাবে ধারা ৮-এর সংশোধিত রূপ হতে পারে:
“ধারা ৮। অভিযোগ দায়ের- (১) পেশাগত কর্মে নিয়োজিত কোনো সাংবাদিক/সংবাদকর্মী সহিংসতার শিকার হলে তিনি এখতিয়ারাধীন থানায় অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন অথবা এখতিয়ারাধীন কোনো প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে লিখিতভাবে নিজে বা তার কোন প্রতিনিধির মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। (২) উক্ত অভিযোগ ফৌজদারী কার্যবিধি অনুযায়ী যে কোনো তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত সম্পন্ন করে অথবা তদন্ত ছাড়াই ম্যাজিস্ট্রেট উভয় পক্ষের শুনানি গ্রহণ করে ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করবেন।”

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের খসড়ার ধারা ৯-এ বলা হয়েছে:
“ধারা ৯। অপরাধ ও শাস্তি- কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ, কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান পেশাগত কর্মে নিয়োজিত কোনো সাংবাদিক/সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, হুমকি ও হয়রানি করলে, তা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি মাত্রা ভেদে ন্যূনতম ১ বৎসর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫ বৎসর কারাদণ্ড অথবা ন্যূনতম ১,০০,০০০ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।”

সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, এই একমাত্র ধারায় সকল প্রকার অপরাধের শাস্তি বলা হয়েছে। সহিংসতার মাত্রা অনুযায়ী শাস্তির উল্লেখ নেই। অনেক ক্ষেত্রে সহিংসতা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়, অঙ্গহানি হতে পারে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাই ধারা ৯-এর শাস্তির বিধান যথেষ্ট শক্ত নয়। সহিংসতার ধরন অনুযায়ী ধারা ৯-এ আরও কয়েক প্রকার শাস্তির বিধান রাখা যেতে পারে।

অত্র অধ্যাদেশের খসড়ার ধারা ৪ ও ৫-এ সাংবাদিকতার পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় বাধা প্রদান বা সোর্স জানতে চাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ না করার বিধান রয়েছে। কিন্তু এই ধারা লঙ্ঘন করলে কী ধরনের শাস্তি হবে তা ধারা ৯-এ বলা হয়নি। জার্নালিস্ট কমিউনিটি অব বাংলাদেশ-এর সংশোধনী প্রস্তাবে ধারা ৯-এর সংশোধিত রূপ হতে পারে:

“ধারা ৯। (১) ধারা ৪ ও ৫ লঙ্ঘন করে কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকের সংবাদের উৎস প্রকাশ করতে চাপ প্রয়োগ করলে বা তথ্য সংগ্রহ ও পেশাগত কাজে বাধা প্রদান করলে, তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি ১ বৎসর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। (২) সাংবাদিককে প্রাণনাশের হুমকিসহ ক্ষতি করার হুমকি প্রদান করলে বা হেনস্থা ও লাঞ্ছিত করলে, অভিযুক্ত ব্যক্তি ন্যূনতম ১ বৎসর এবং সর্বোচ্চ ৩ বৎসর বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। (৩) সাংবাদিককে মারধোর, যৌন হয়রানি বা সহিংসতা করলে, ন্যূনতম ২ বৎসর এবং সর্বোচ্চ ৭ বৎসর বিনাশ্রম বা স্বশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অর্থদণ্ড প্রযোজ্য হবে। (৪) আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় অস্ত্র বা বিষাক্ত পদার্থ ব্যবহার করে আহত করলে, ন্যূনতম ৫ এবং সর্বোচ্চ ১০ বৎসর বিনাশ্রম বা স্বশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অর্থদণ্ড প্রযোজ্য হবে। (৫) হত্যা বা হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত দিলে, দন্ডবিধির সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী বিচার হবে।”

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের ধারা ১৩-এ বলা হয়েছে:
“ধারা ১৩। আমলযোগ্যতা, জামিনযোগ্যতা এবং আপোষযোগ্যতা- এই অধ্যাদেশের অধীন সংঘটিত কোনো অপরাধ আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য এবং আপোষযোগ্য হবে।”

সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, এই বিধান সংশোধন না হলে অধ্যাদেশ পাস হলে সাংবাদিকদের হয়রানি বা নির্যাতন করলে পুলিশ আসামীকে গ্রেফতার করে আদালতে চালান করার সাথে সাথেই জামিনে মুক্তি পাবে। ফলে আসামীরা সাংবাদিক নির্যাতনে আরো উৎসাহিত হবে। ধারা ৯-এ সংহিসতার প্রকারভেদ অনুযায়ী কয়েক দফা শাস্তির বিধান থাকলে, কম গুরুতর অপরাধে জামিনযোগ্য রেখে গুরুতর অপরাধ অজামিনযোগ্য রাখা যেতে পারে।

সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, অধ্যাদেশের অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে ধারা ১৪-এ বলা হয়েছে:
“ধারা ১৪। তদন্ত।- (১) এই অধ্যাদেশের অধীন দায়েরকৃত অভিযোগ ও মামলা সহকারী পুলিশ সুপারের নীচে নয়; পুলিশের উচ্চতর কর্মকর্তা কর্তৃক তদন্ত করা হবে।”

ফলে তদন্তে জটিলতা দেখা দিতে পারে। সাধারণত পুলিশের এসআই বা ইন্সপেক্টর পর্যায়ের কর্মকর্তারা ফৌজদারী অপরাধের তদন্ত করেন। আদালত প্রয়োজনে সিআইডিসহ অন্যান্য সংস্থা দিয়ে তদন্ত করাতে পারেন। এজন্য তদন্ত প্রক্রিয়া সহজ করা প্রয়োজন।

সাংবাদিক সংগঠনের সংশোধনী প্রস্তাবে ধারা ১৪-এর সংশোধিত রূপ হতে পারে:

“ধারা ১৪। তদন্ত।- (১) অভিযোগ ফৌজদারী কার্যবিধি অনুযায়ী আদালতের নির্দেশে ক্ষমতাপ্রাপ্ত যে কোনো কর্মকর্তা কর্তৃক তদন্ত করা যাবে। প্রয়োজনে প্রেস কাউন্সিল বা কমিশনের কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্ত করা যাবে। (২) তদন্ত পরিচালনায় ফৌজদারী কার্যবিধির সকল বিধি প্রযোজ্য হবে।”

অধ্যাদেশের ধারা ১৫-এ বলা হয়েছে:
“ধারা ১৫। মিথ্যা অভিযোগের শাস্তি- যদি কোনো সাংবাদিক/সংবাদকর্মী অন্য ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে এই অধ্যাদেশের অধীন অভিযোগ করেন, আইনানুগ কারণ ছাড়াই, তবে তিনি সর্বোচ্চ ১ বৎসর কারাদণ্ড অথবা ৫০,০০০ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।”

সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এ আইনের বিধান অনুসারে, প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে সাংবাদিকদের ভাগ্যে জেল ও জরিমানা রয়েছে। সাধারণ মানুষ সাংবাদিকদের হুমকি ও হয়রানি করে না; প্রভাবশালীরাই করে। এ ক্ষেত্রে প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া প্রভাবশালীরা প্রভাব বিস্তার করে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করার চেষ্টা করতে পারে। অনেক সময় সাক্ষীও দিতে চাইবে না। ফলে নির্যাতিত সাংবাদিকরা ভয়ে অভিযোগ করতে পারবেন না। এ কারণে ধারা ১৫ বাতিল করা প্রয়োজন। সূত্র : দৈনিক সংগ্রাম


ডেল্টা টাইমস্/সিআর/আইইউ

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-২২৬৬৩৯০১৮, ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-২২৬৬৩৯০১৮, ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com