সেই রামও নেই, অযোধ্যাও নেই। নামগুলোই রয়ে গেছে। একসময়ের দোর্দÐ প্রতাপশালী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবও এখন কেবলই নামসর্বস্ব! লড়াইয়ের ময়দানে পড়ে পড়ে মার খাওয়াই যেন এখন দলটির নিয়তি! সোমবার ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের (ডিপিএল) ষষ্ঠ রাউন্ডেও একই দৃশ্যের অবতারণা হলো। রকিবুল হাসানের দলের ম্রিয়মাণ পারফরম্যান্স কালিমা লেপন করল আবাহনী-মোহামেডানের চিরায়ত দ্বৈরথে, ঐতিহ্যের লড়াইয়ে ৬ উইকেটের দাপুটে জয় তুলে দিল মোসাদ্দেক হোসেনের আবাহনী।
দেশের ক্রীড়াঙ্গনের ঐতিহ্য বহন করে চলা দুই ক্লাব আবাহনী আর মোহামেডানের ময়দানি লড়াই এখনও বাড়তি উত্তেজনা ছড়ায় ক্রীড়ামোদীদের মনে। কিন্তু মোহামেডানের নিয়ত পশ্চাৎপদতায় সেই উত্তেজনা প্রায় তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দুই দলের লড়াই, অথচ গ্যালারি খাঁ খাঁ করছে। শ-পাঁচেক দর্শক তবুও দেখা গেল, তা অবশ্য আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ বলেই। ব্যাট-বলের জমজমাট লড়াই হবে এমন প্রত্যাশা নিয়ে যারা গ্যালারিতে এসেছিলেন, তারা ফিরেছেন একরাশ হতাশা সঙ্গী করে।যারা আবাহনীর সমর্থক, তাদের মধ্যে ছিল দলের দাপুটে জয় দেখার উচ্ছ্বাস। আক্ষেপও ছিল, সেটা সেঞ্চুরি বঞ্চিত হওয়া জহুরুল ইসলামের জন্য। ৯৬ রানে আউট হন এই ওপেনার। তার সঙ্গে সৌম্য সরকারের ৪৩ আর ওয়াসিম জাফরের ৩৮ রানের সুবাদে ১৫ বল হাতে রেখে অনায়াসেই মোহামেডানের ২৪৮ রান টপকে যায় আবাহনী। অথচ ওই ২৪৮ রানের পুঁজি গড়তে মোহামেডানকে কত কাঠখড়ই না পোড়াতে হয়েছে।
দলে ফেরা লিটন দাস (২৭) ভালো করতে পারেননি। অন্যরা ব্যাট চালিয়েছেন টেস্ট মেজাজে। ইরফান শুক্কুর (৫৭) আর দলপতি রকিবুল (৫১) হাফসেঞ্চুরি করে বিদায় নেওয়ার পর ডি সিলভা (৩২) আর সোহাগ গাজীর (২৭) চেষ্টায় সম্মানজনক একটা অবস্থায় পৌঁছায় আগে ব্যাট করতে নামা মোহামেডান। এতেও শেষরক্ষা হয়নি। টানা তিন জয়ে ডিপিএল শুরুর পর টানা তৃতীয় পরাজয় দেখে মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাদের, আবাহনী মাঠ ছেড়েছে ষষ্ঠ ম্যাচে পঞ্চম জয় নিয়ে। যে জয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ স্থানটাও অক্ষুণ্ন রেখেছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা।এদিন পঞ্চম জয় পেয়েছে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জও। মেহেদী মারুফের টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতিকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে তারা। বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে রবিউল ইসলাম রবি (৫৩), মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন (৭৭) আর অশোক ম্যানারিয়ার (৮৭*) হাফসেঞ্চুরিতে ২৬৮ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজিই গড়ে খেলাঘর। কিন্তু মোহাম্মদ নাঈমকে (৭২) নিয়ে ১১৮ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ে সেই চ্যালেঞ্জ টপকানোর পথ বাতলে দেন মারুফ। আগের ম্যাচে ক্যারিয়ারসেরা ১৩৭ রানের ইনিংস খেলা এই ডানহাতি ষষ্ঠ ‘লিস্ট-এ’ সেঞ্চুরি তুলে থামেন ১০৮ রানে। জয় থেকে তখন মাত্র ২৫ রান দূরে ছিল রূপগঞ্জ। অধিনায়ক নাঈম ইসলাম সেই দূরত্ব ঘুচিয়েছেন সতীর্থদের নিয়ে।
ফতুল্লায় বৃথা গেছে মেহেদী হাসান (৬০) আর শামসুর রহমান শুভর (৮১) লড়াই। এই দুই ব্যাটসম্যানের লড়াকু হাফসেঞ্চুরিও গাজী ক্রিকেটার্সের জন্য যথেষ্ট হয়নি। শেখ জামালের ২৭৭ রান তাড়ায় দলটি অলআউট হয় ২৩৪ রানে। ফলে ৪৩ রানের পরাজয় সঙ্গী করেই মাঠ ছাড়তে হয় তাদের। চলতি ডিপিএলে এটি গাজী ক্রিকেটার্সের চতুর্থ পরাজয়। অন্যদিকে তৃতীয় জয় শেখ জামালের। দলটির এই জয়ের নায়ক দলপতি নুরুল হাসান সোহান। ৮১ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন তিনি। ৬৫ বলে ৭৯ রান করেন লঙ্কান রিক্রট আসেলা গুনারত্নে। তার হাতেই উঠেছে ম্যাচসেরার খেতাব।
