|
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে ইসলামিক রীতিনীতি
ডেল্টা টাইমস্ ডেস্ক:
|
![]() সংগৃহীত ছবি। সোশ্যাল মিডিয়ার বিস্তৃত প্রভাব- ফেসবুক, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার—এসব প্ল্যাটফর্ম এখন আর শুধু মানুষের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার মাধ্যম নয়। এগুলো হয়ে উঠেছে খবরের উৎস, বাজার–সদাইয়ের জায়গা, আবার নিজের পছন্দমতো ‘ডিজিটাল দুনিয়া’য় ডুবে থাকার একটি প্ল্যাটফর্মও। প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো ব্যবহারকারীর আচরণ বিশ্লেষণ করে এমন কনটেন্ট তুলে ধরে, যা ব্যবহারকারীর ভালো লাগবে বলে তারা মনে করেন। এতে আমাদের চারপাশে তৈরি হয় একধরনের ‘বাবল’। ফলে আমরা অজান্তেই বাস্তবতা থেকে দূরে সরে যাই—ঘুম ভাঙার পরই ফোন হাতে নেওয়া, বাস-ট্রেনের ভ্রমণে স্ক্রল করে সময় পার করা এখন নিত্যদিনের চিত্র। গবেষণা বলছে, প্রতিদিন গড়ে ৯০ শতাংশ মানুষ দু’ঘণ্টার বেশি সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যয় করেন। এতো বেশি তথ্যের ভিড়ে আমাদের চিন্তা, আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে যায় অজান্তেই। এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন দায়িত্বশীল ব্যবহার। এজন্য স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহারে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়ার পাঁচটি কার্যকর পরামর্শ তুলে ধরা হলো— ১. যাচাই-বাছাই করে তথ্য গ্রহণ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল পোস্ট দেখলেই আমরা তা সত্য ধরে নিই। ছবি, স্ক্রিনশট বা নাটকীয় ভাষ্যের কিছু দেখে অনেকেই প্রতারিত হন, ভুল তথ্য ছড়ান কিংবা অনলাইনে বুলিংয়ের শিকার হন। যে কোনো উত্তেজনাপূর্ণ বা ভাইরাল তথ্য দেখলে একটু থামুন। নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যমে খোঁজ নিন। পরিচিত কেউ থাকলে তাকে জিজ্ঞেস করুন। ইসলামের শিক্ষাও ঠিক এটাই বলে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, যে বিষয় তোমার জানা নাই তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয় কান, চোখ ও অন্তকরণ- এদের প্রতিটির ব্যাপারে সে জিজ্ঞাসিত হবে। (সুরা আল–ইসরা, আয়াত :৩৬) ২. লক্ষ্য ঠিক রেখে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার ফিডে একের পর এক কনটেন্ট দেখতে গিয়ে সময় কোথায় চলে যায় আমরা তা টেরই পাই না। এতে মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়, কোন কাজের জন্য ডিভাইজ হাতে নিয়েছিলাম তা ভুলে যাই। তাই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের উদ্দেশ্য ঠিক করুন। যেমন— আজকের খবর পড়তে গেলে শুধু তাই পড়ুন। রেসিপি খুঁজতে গেলে আগে তা দেখে শেষ করুন। তারপর অন্য পোস্ট দেখুন। এমন করলে সোশ্যাল মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতেই থাকবে। ৩. মনোযোগী ও সতর্ক থাকুন বন্ধু, পরিচিত ও অচেনা মানুষের পোস্ট আমাদের ওপর মানসিক প্রভাব ফেলতে পারে—ইর্ষা, দুঃখ বা বিরক্তি তৈরি করতে পারে। তাই নিজের মানসিক সুস্থতা রক্ষায় সচেতন থাকা জরুরি এবং আল্লাহর কাছে এই দোয়াটি পড়তে পারেন— اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ سَمْعِي وَمِنْ شَرِّ بَصَرِي وَمِنْ شَرِّ لِسَانِي وَمِنْ شَرِّ قَلْبِي وَمِنْ شَرِّ مَنِيِّي উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন শাররি সাময়ি, ওয়া মিন শাররি বাসারি, ওয়া মিন সাররি লিসানি, ওয়া মিন সাররি ক্বালবি, ওয়া মিন সাররি মানিয়্যি। অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আমার কানের অপকারিতা, চোখের অপকারিতা, জবানের অপকারিতা, অন্তরের অপকারিতা এবং বীর্জের অপকারিতা থেকে আশ্রয় চাই। (আবু দাউদ) ৪. ইতিবাচক কনটেন্ট শেয়ার করুন আমরা যা পোস্ট করি, তা অন্যের ওপরও প্রভাব ফেলে। ব্যক্তিগত ক্ষোভ, রাগ বা গুজব ছড়ানোর পরিবর্তে ইতিবাচক, উপকারী এবং গঠনমূলক বিষয় শেয়ার করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পোস্ট করার আগে নেতিবাচক কিছু থেকে রক্ষা পেতে আরেকটি দোয়া পড়তে পারেন। দোয়াটি হলো— أُعِيذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لامَّةٍ উচ্চারণ : উঈযুকুমা বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাহ, মিন কুল্লি শায়ত্ব-নিউ অ হা-ম্মাহ, অমিন কুল্লি আইনিল লা-ম্মাহ।। অর্থ : আমি তোমাদেরকে আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণীসমূহের অসীলায় প্রত্যেক শয়তান ও কষ্টদায়ক জন্তু হতে এবং প্রত্যেক ক্ষতিকারক (বদ) নজর হতে আল্লাহর পানাহ দিচ্ছি। (বুখারি) ৫. বাস্তব জীবনকে সবসময় অনুভব করুন সোশ্যাল মিডিয়া কখনোই বাস্তব জীবনের বিকল্প নয়। কিন্তু আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়ে গেছে। অনলাইন দুনিয়ায় ডুবে থাকার ফলে মানুষ বাস্তব জীবন ও নিজের আশপাশের মানুষদের থেকে কেমন যেন উদাসীন হয়ে গেছে। অথচ মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা, সময় কাটানো আর সম্পর্ক রক্ষা—এসবই আসল জীবন। তাই নিয়মিত বিরতি নিন, ফোন সরিয়ে রাখুন এবং বর্তমান বাস্তবতা উপভোগ করুন। মনে রাখুন সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবন সহজ করেছে এটা সত্য। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে থাকবে, না কি প্ল্যাটফর্ম আমাদের নিয়ন্ত্রণ করবে এটা ভাবার সময় এখনই। আমরা কেন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করি, কী উদ্দেশ্যে করি এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাওয়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সূত্র : মুসলিম ডট এসজি ডেল্টা টাইমস্/আইইউ |
| « পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |