কপ-৩০: মেঘলা আকাশের নিচে শেষ সপ্তাহে জয়-পরাজয়
মো. শফিকুল ইসলাম :
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৫, ৪:০১ পিএম আপডেট: ১৯.১১.২০২৫ ১১:৫৮ এএম

কপ-৩০: মেঘলা আকাশের নিচে শেষ সপ্তাহে জয়-পরাজয়

কপ-৩০: মেঘলা আকাশের নিচে শেষ সপ্তাহে জয়-পরাজয়

ব্রাজিলের আমাজনের তীরে অবস্থিত বেলেম শহরে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-৩০ চলছে। ১০ নভেম্বর শুরু হওয়া এই দু’সপ্তাহের মহাসম্মেলন ২১ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। কিন্তু আট দিন পেরিয়েও আলোচনার আকাশ মেঘলা। হাজারো প্রতিনিধি, বিজ্ঞানী ও এনজিও কর্মী মিলিত হয়ে প্রতিশ্রুতির বৃষ্টি ছুঁড়ছেন, তবু অগ্রগতির রংধনু দেখা যাচ্ছে না। ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর প্রতিনিধিরা বলছেন, “এখনও সময় আছে, কিন্তু কমে যাচ্ছে।”

মধ্যবর্তী পর্যায়ে কপ-৩০ পৌঁছেছে জটিলতার। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উদ্বোধনী ভাষণে বলেছিলেন, “১.৫ ডিগ্রি লক্ষ্য অর্জনযোগ্য, কিন্তু তাৎক্ষণিক ও সাহসী পদক্ষেপ জরুরি।” ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা ‘কল অব বেলেম ফর দ্য ক্লাইমেট’ আহ্বানপত্রে দেশগুলোকে অভিযোজন তহবিল কমপক্ষে তিনগুণ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তবে উন্নত দেশগুলো টেকনোলজি হস্তান্তর, অর্থায়ন ও জীবাশ্ম জ্বালানি ফেজ-আউট নিয়ে কূটনৈতিক জটিলতায় আটকা পড়েছে।

বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল জানিয়েছে, “শেষ আশ্রয় হিসেবে দেখছি এই সম্মেলনকে। কিন্তু অর্ধেক পথ পেরিয়েও দাবিগুলো টেবিলে পড়ে আছে।” অভিযোজন তহবিল বৃদ্ধি, সহজ শর্তে ঋণ ও প্রযুক্তি প্রাপ্তিতে কোনো অগ্রগতি নেই। চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ ও ওয়াইপিএসএ-র যৌথ রিপোর্ট ‘ক্লাইমেট ডেটা রিস্ক ইনডেক্স ২০২৫’ দেখাচ্ছে, ৫৫টি ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে ৪৭টি উচ্চ ঝুঁকিতে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলো ঋণের ফাঁদে, যেখানে ২০২৩ সালে ৪৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ শোধ হয়েছে, আর জলবায়ু তহবিল এসেছে মাত্র ৩৩.৭৪ বিলিয়ন।

আদিবাসীদের প্রতিবাদ
১৪ নভেম্বর সম্মেলন কেন্দ্রের মূল প্রবেশপথে আমাজনের মুণ্ডুরুকু আদিবাসীরা শান্তিপূর্ণ অবরোধ করেন। প্রায় ৬০ জন বিক্ষোভকারী ঐতিহ্যবাহী পোশাকে ব্যানার নিয়ে বলেন, “আমাদের ভূমির লড়াই মানে জীবনের লড়াই।” তারা কপ-৩০ সভাপতি আন্দ্রে কোরেয়া দো লাগোর সঙ্গে বৈঠক দাবি করেন। পরে বাড়তি পাসের আশ্বাস পেলেও মূল আলোচনায় তাদের অংশগ্রহণ সীমিত। ব্রাজিলের আদিবাসী মন্ত্রী বলেছেন, “আদিবাসী ভূমি সীমানাকরণকে জলবায়ু নীতির অংশ করতে হবে।”

লবিস্টের চাপ ও জীবাশ্ম জ্বালানি

সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানির লবিস্টের সংখ্যা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ দেশের প্রতিনিধির চেয়ে বেশি। কপ-২৮-এর প্রতিশ্রুতির পরেও জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসা এবারের এজেন্ডায় নেই। উন্নত দেশ শত শত প্রতিনিধি পাঠিয়েছে, দরিদ্র দেশ দুই-ত্রিজন নিয়ে লড়ছে। ফলে সিদ্ধান্ত প্রভাবশালীদের পক্ষে ঝুঁকে পড়ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতি, চীনের উত্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের প্যারিস চুক্তি থেকে সরে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি পাঠায়নি—তিন দশকের ইতিহাসে এ প্রথম। শূন্যস্থান পূরণ করছে চীন, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে নেতৃত্ব দাবি করে পর্দার আড়ালে সক্রিয় কূটনীতি চালাচ্ছে।

স্বাস্থ্য সংকট ও সতর্কতা
১৪ নভেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও ব্রাজিল ‘বেলেম হেলথ অ্যাকশন প্ল্যান’ প্রকাশ করেছে। রিপোর্ট বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতি বছর ৫ লাখ ৪০ হাজার মানুষ চরম গরমে মারা যাচ্ছে। বিশ্বের ১২টি হাসপাতালের এক বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে। এটি স্বাস্থ্য সমতা ও জলবায়ু ন্যায়ের ওপর জোর দিচ্ছে।

বাইরে প্রতিবাদের জোর, ভিতরে আশার আলো
১৬ নভেম্বর বেলেমের রাস্তায় নামেন হাজার হাজার মানুষ। আদিবাসী গান, ব্রাজিলীয় ক্লাসিক সংগীত ও পরিবেশ ন্যায়ের স্লোগান রাস্তাকে কাঁপাচ্ছে। জাপানের জীবাশ্ম জ্বালানি অর্থায়ন বন্ধের দাবি তুলেছে পিকাচু পোশাকে বিক্ষোভকারীরা। ফিলিস্তিনের পতাকা ও ৩০ মিটার লম্বা ‘কোবরা’ মূর্তি প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

শেষ সপ্তাহের মন্ত্রী জুটি, লুলার ফিরে আসা
সাম্প্রতিক সপ্তাহে মন্ত্রী-জুটি গঠিত হয়েছে: জলবায়ু অর্থায়নে যুক্তরাজ্য-কেনিয়া, অভিযোজনে গাম্বিয়া-জার্মানি, প্রশমনে মিশর-স্পেন, প্রযুক্তি হস্তান্তরে অস্ট্রেলিয়া-ভারত। ভারত ঘোষণা করেছে, ২০২৬ সালে নয়াদিল্লিতে গ্লোবাল বিগ ক্যাটস সামিট হবে। লুলা আবার ফিরছেন বেলেমে জাতিসংঘের প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করতে।

বেলেমে বৃষ্টি থামছে না, প্রতিশ্রুতির বৃষ্টিও কমছে না। শেষ সপ্তাহে যদি দেশগুলো বাস্তব অগ্রগতি দেখায়, তাহলে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের ‘বাকু টু বেলেম রোডম্যাপ’ বাস্তবে রূপ নেবে। নইলে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো আবারও হতাশায় শেষ হবে। সময় আছে—কিন্তু কতক্ষণ?


ডেল্টা টাইমস্/সিআর/আইইউ

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-২২৬৬৩৯০১৮, ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-২২৬৬৩৯০১৮, ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com