|
রাতে একজন চিকিৎসক দিনে নাপা ইবি মেডিকেলের করুণ বাস্তবতা
মাহফুজুল হক পিয়াস, ইবি :
|
![]() রাতে একজন চিকিৎসক দিনে নাপা ইবি মেডিকেলের করুণ বাস্তবতা শিক্ষার্থীরা জানান, চিকিৎসা নিতে গেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ‘নাপা’ ছাড়া কোনো ওষুধ পাওয়া যায় না। এমনকি বমি, মাথাব্যথা, সর্দি-কাশি, অ্যালার্জি—সব ক্ষেত্রে প্রায় একই ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এজন্য অনেকেই কেন্দ্রে ‘নাপা সেন্টার’ বলে ঠাট্টা করেন। জানা যায়, ইবিতে বর্তমানে ১৯ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। তাদের চিকিৎসাসেবায় পুরো কেন্দ্রজুড়ে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ১৪ জন। দিনভর কয়েকজন চিকিৎসক থাকলেও রাতে দায়িত্বে থাকেন মাত্র একজন। ফলে রাতের জরুরি মুহূর্তগুলোতে শিক্ষার্থীরা মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েন। এদিকে চিকিৎসাকেন্দ্রে নেই কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। দন্ত বিভাগে খণ্ডকালীন দুই চিকিৎসক সপ্তাহে তিন দিন সেবা দেন—এদের একজন আবার সপ্তাহে মাত্র একদিন থাকেন। চক্ষু বিভাগেও আছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রয়োজনের তুলনায় এসব কাঠামো অত্যন্ত অপ্রতুল। চিকিৎসাকেন্দ্রে কিছু আধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি রয়েছে। কিন্তু দক্ষ টেকনিশিয়ান না থাকায় এসব যন্ত্রপাতি অচল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের সামান্য পরীক্ষার জন্যও বাইরে যেতে হয়, যা খরচ বাড়ায় এবং হয়রানিও বাড়ায়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, চিকিৎসা নিতে গেলে কর্মচারী ও চিকিৎসকদের কাছ থেকে অসৌজন্যমূলক আচরণ প্রায় নিয়মিত ঘটনা। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, ডাক্তার রোগীর কথা ঠিকমতো শোনেন না, তড়িঘড়ি করে প্রেসক্রিপশন লিখে দেন বা ওষুধ নেই বলে ফিরিয়ে দেন। জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিতেও ভোগান্তিতে পড়তে হয় বলে দাবি অনেক শিক্ষার্থীর। এ ছাড়া বহিরাগত রোগীর ঢল থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রাপ্য সেবা থেকে আরও বঞ্চিত হচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী নূর মোহাম্মদ বলেন, “চিকিৎসকরা আমাদের ছাত্র হিসেবেও গুরুত্ব দেন না। কথা ঠিকমতো না শুনেই শুধু নাপা লিখে দেন। ওষুধ চাইলে বলেন, নেই। কয়েক দিন আগে দেখি একজন মহিলা চিকিৎসক সাজগোজ করছেন, ফোনে কথা বলছেন। চিকিৎসা চাইতে গেলে বিরক্তির ভাব দেখালেন; শেষে আবার নাপাই লিখে দিলেন।” পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের শিক্ষার্থী তানিশা ফারজানা বলেন, “ইবি মেডিকেলের অবস্থা খুবই খারাপ। নাপা ছাড়া অন্য কোনো ওষুধই মেলে না। পরীক্ষার সুবিধাও সীমিত। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দাবি—চিকিৎসা খাতে বাজেট বাড়িয়ে ব্যবস্থা উন্নত করা হোক।” ইবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রাফিজ আহম্মেদ বলেন, “ইবির মেডিকেল শিক্ষার্থীদের কাছে এখন ‘নাপা সেন্টার’। নেই আধুনিক চিকিৎসা, নেই ডিজিটাল যন্ত্রপাতি। রাতে চিকিৎসা পাওয়া সবচেয়ে কঠিন। দ্রুত সংস্কার চাই।” ইবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক এস এম সুইট বলেন, “পর্যাপ্ত টেকনিশিয়ান নেই, যন্ত্রপাতি নেই। গুরুতর অসুস্থকে কুষ্টিয়ায় পাঠাতে হয়—সময়ে চিকিৎসা না পেয়ে ঝুঁকি তৈরি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিনে দাবি—পূর্ণাঙ্গ ও মানসম্মত চিকিৎসাসেবা চালু করা হোক।” চিকিৎসাকেন্দ্রের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. সিরাজুল ইসলাম বলেন, “ইবি মেডিকেল সেন্টার মূলত প্রাথমিক পর্যায়ের সেবা দেয়। মেডিকেল কলেজের মতো পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা দেওয়া এখানে সম্ভব নয়। বরাদ্দ সীমিত—তার মধ্যেই সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। প্রয়োজন হলে রোগীদের কুষ্টিয়া বা ঝিনাইদহে রেফার করা হয়।” ডেল্টা টাইমস্/মাহফুজুল হক পিয়াস/সিআর/আইইউ |
| « পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |