|
বিল্ডিং ব্যাকরণ ও বৈদ্যুতিক গলদে বাড়ছে অগ্নিকান্ড
সাব্বির আহমেদ
|
|
ফায়ার সার্ভিসের দিক থেকেও আগুন নেভানোর কাজে একই ধরনের সমস্যার কথার পুনরাবৃত্তি করা হয়। ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকায় সরু রাস্তায় ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি ঢুকতে না পারা এবং অগ্নিকাÐস্থলের কাছাকাছি পানির অভাবের কথাই উঠে আসে বেশি। এ বিষয়ে বুয়েটের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. জহুরুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, বুয়েটের ৫টি বিভাগ মিলে আমরা স্টাডি করে দেখেছি অগ্নি দুর্ঘটনার ৭০-৮০ ভাগ হয় বৈদ্যুতিক ত্রæটির কারণে। ফায়ার সার্ভিসও সার্ভে করে তাই বলছে। আর বিল্ডিং ‘প্লানেবল গ্যাপ’ তো রয়েছেই। সিলিন্ডার থেকে লিকিং হয়। যা কখনও ইন্সট্রল করা হয় না। সচরাচর আমরা দেখেছি কারখানা ও বাসা বাড়িতে ইলেকট্রনিক স্পার্কিং অর্থাৎ স্ফ‚লিঙ্গ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। অন্যদিকে আইনের প্রয়োগ নেই। আর প্রয়োগ করাও যায় না। কারণ সরকারি-বেসরকারি মনিটরিং সংস্থাগুলোর কর্মকান্ড পর্যাপ্ত ও যথার্থ নয়। ঢাকার সিংহভাগ বিল্ডিংয়ে নির্মাণ ত্রুটি রয়েছে দাবি করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসএম জুলফিকার রহমান সময়ের আলোকে বলেন, দালানগুলোতে বিশেষ করে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ক্যালকুলেশনে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। প্রধানত আগুন লাগছে দুটি কারণে। হয় ইলেকট্রনিক না হয় ম্যানুয়ালি সৃষ্ট। অনেক সময় কম অভিজ্ঞ ও দুর্বল লোকদের দিয়ে স্থাপনার প্রকৃতি নির্ণয় করা হয়। দেখা যায়Ñ যে জিনিস প্রথমে করতে চায়, সেটা পরবর্তী সময়ে আর ইন্সট্রল করা হয় না। তিনি বলেন, বিদ্যুতের শটসার্কিটে তো বড় গলদ থাকে। বিল্ডিংগুলো ব্যাকরণ না মানায় ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটছে। মনে রাখতে হবে ক্ষুদ্র কয়েলও বড় অগ্নিকাÐ ঘটাতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, নতুন দুর্ঘটনা না ঘটার আগে কেউ কর্ণপাত করে না। আমি বাড়ি বানাব, আগুন লাগবে, নেভাবে ফায়ার সার্ভিস এই মানসিকতা থেকে বের হতে হবে। নিজেই ফায়ার যুদ্ধ করতে হবে। আগুন লাগার আগে সচেতনতা জরুরি। অন্যদিকে আমরা বস্তির আগুন নির্বাপণের জন্য বস্তিবাসীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের মধ্য থেকে গড়ে তুলেছি প্রায় ৬০০ স্বেচ্ছাসেবক।বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সহিদুল ইসলাম খান বলেন, চাহিদা বেশি হওয়ায় আমাদের দেশে যত্রতত্র অনিরাপদ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। মাঝে-মধ্যে বিদ্যুতের তার চেক করতে হয়, কেননা একই তার দিয়ে অনেক জিনিস ব্যবহার করলে তা লোড হয়ে যায়। ফলে হরহামেশাই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম নুরুল আমিন বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় শিল্প-কারখানা থাকলে সেখানে কেমিক্যাল থাকাই স্বাভাবিক। আর এসবে কিছু ফ্লেভার আইটেম থাকে যা আগুন দাউদাউ করে জ্বলতে সহায়তা করে। আর গ্যাস সিলিন্ডারের লিক থেকে অহরহই ঘটে দুর্ঘটনা। উন্নত দেশে তাৎক্ষণিকভাবে আগুন প্রতিরোধের সব যন্ত্রপাতি পর্যাপ্ত থাকলেও আমাদের দেশে তা নেই। আগুন লাগার পর মনে হয় এটা দরকার, যা তখন পাওয়া যায় না। আর আগুন লাগার পর প্রাথমিক ব্যবস্থাগুলোও আমাদের জানা নেই। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ড. তারিক বিন ইউসুফ সময়ের আলোকে জানান, সিটি করপোরেশন ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতিটি দুর্ঘটনায় কাজ করছে। অগ্নি দুর্ঘটনারোধে একটি যৌথ অপারেশন সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে। এলাকাভিত্তিক পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ত্রুটি ও আগুন লাগার পোর্টগুলো নির্ণয় করে জনসচেতনতায় জোর দেওয়া হচ্ছে। |
| « পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |