ইউটিউবে আজান শুনে জবাব দিলে কি সওয়াব হবে?
ডেল্টা টাইমস্ ডেস্ক:
|
![]() ইউটিউবে আজান শুনে জবাব দিলে কি সওয়াব হবে? উত্তর: মহানবী (সা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আজানের উত্তর দেওয়ার যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং যে বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে, তা ওই আজানের ব্যাপারে প্রযোজ্য যা প্রতি ওয়াক্তে মসজিদে নামাজের আগে দেওয়া হয় এবং শ্রোতা সরাসরি শুনতে পায়। ইউটিউবে রেকর্ডকৃত আজান অথবা রেডিও-টিভিতে যে রেকর্ডকৃত আজান প্রচার করা হয়, তা শুনে জবাব দেওয়া সুন্নত নয় এবং উল্লিখিত প্রতিদানও এ রকম আজানের জবাব দিলে পাওয়া যাবে না। তবে কেউ সওয়াবের আশায় আজান শুনলে ও নিজে আজানের বাক্যগুলো শুনে নিজে উচ্চারণ করলে জিকির শোনা ও জিকির করার সওয়াব নিশ্চয়ই পাবে। অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে বসবাসের কারণে আজানের ধ্বনি শুনতে না পাওয়ার বেদনা ও আজান শোনার আকুলতা অন্তরে থাকলে আল্লাহ তাআলা তার ইচ্ছা অনুযায়ী সওয়াব বাড়িয়েও দিতে পারেন। আল্লাহ তাআলা তার ইচ্ছায় বান্দার নেক আমলের সওয়াব বহু গুণ বৃদ্ধি করতে পারেন। আজানের জবাব দেওয়ার ফজিলত ও নিয়ম আজানের সময় অযথা কথাবার্তা না বলে আজান শোনা ও আজানের জবাব দেওয়া অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। আজানের জবাব দেওয়ার পদ্ধতি হলো মুআজ্জিন যা বলে তা বলা, শুধু ‘হাইয়া আলাস সালাহ, হাইয়া আলাল ফালাহ’ বললে এর জবাবে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ (অর্থাৎ কোনো উপায় বা ক্ষমতা নেই আল্লাহ ছাড়া) পড়তে হয়। ফজরের আজানে ‘আস-সালাতু খাইরুম মিনান নাওম’ (অর্থাৎ নামাজ ঘুমের চেয়ে উত্তম) বলা হলে, জবাবে বলতে হবে, ‘সাদাকতা ওয়া বারারতা’ (অর্থাৎ তুমি সত্য ও ন্যায় কথা বলেছ)। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমরা আজান শুনতে পাও তখন মুয়াজ্জিন যা বলে তোমরাও তার অনুরূপ বলো। (সহিহ বুখারি: ৬১১) ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, মুয়াজ্জিন যখন ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ বলে তখন তোমাদের কোনো ব্যক্তি যদি অন্তর থেকে তার জবাবে বলে, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’। মুয়াজ্জিন ‘আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বললে জবাবে ‘আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, মুয়াজ্জিন ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রসূলুল্লাহ’ বললে জবাবে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রাসূলুল্লাহ’ বলে, তারপর মুয়াজ্জিন ‘হাইয়্যা আলাস সলাহ’ বললে জবাবে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ পড়ে, মুয়াজ্জিন ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ বললে জবাবে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ পড়ে, তারপর মুয়াজ্জিন ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ বললে জবাবে ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ এবং ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বললে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে, সে জান্নাতে যাবে। (সহিহ মুসলিম: ৩৮৫) আজানের পর যে দোয়া পড়লে নবীজির (সা.) শাফাআত পাওয়া যাবে নবীজি (সা.) আজানের পর তার জন্য দুরুদ পাঠ ও ওসিলা প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যারা নবীজির (সা.) জন্য ওসিলা প্রার্থনা করবে, কেয়ামতের দিন তারা নবীজির শাফাআত বা সুপারিশ পাবে। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস থেকে বর্ণিত রয়েছে নবীজি (সা.) বলেন, যখন তোমরা মুয়াজ্জিনকে আজান দিতে শুনবে, তখন সে যা বলে, তা বলো। এরপর আমার ওপর সালাত পাঠ করো; যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার সালাত পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে ১০ বার রহম করবেন। এরপর আমার জন্য ওসিলা চাও। ওসিলা জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান। আল্লাহর একজন মাত্র বান্দাই এই মর্যাদা লাভ করবে এবং আমি আশা করি আমিই হব সেই বান্দা। যে ব্যক্তি আমার জন্য ওসিলা প্রার্থনা করবে, সে আমার সুপারিশের হকদার হবে। (সহিহ মুসলিম: ৭৪৮) হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে বলেছেন, যে ব্যক্তি আজান শুনে নিম্নোক্ত দোয়া পড়বে, কেয়ামতের দিন সে আমার সুপারিশ পাওয়ার হকদার হবে। দোয়াটি হলো, اللَّهُم ربِّ هذه الدَّعْوَة التَّامة، والصَّلاة القَائمة، آتِ مُحَمَّدًا الوَسِيلَةِ وَالفَضِيلة، وابْعَثْه مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذي وعَدْتَه উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বা হাজিহিদ্ দাওয়াতিত তাম্মাতি ওয়াস সালাতিল ক্বায়িমাহ, আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াসিলাতা ওয়াল ফাদিলাহ, ওয়াবাআছহু মাক্বামাম্ মাহমুদানিল্লাজি ওয়া আত্তাহ। অর্থ: হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহবান ও আসন্ন নামাজের তুমি মালিক। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ওসিলা ও বিশেষ মর্যাদার অধিকারী করুন এবং তাকে সেই প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত করুন যার ওয়াদা আপনি করেছেন। (সহিহ বুখারি) হাদিসে বর্ণিত এ দোয়াটিতেও নবীজির জন্য ওসিলা বা জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা প্রার্থনা করা হয়েছে। এ দুটি হাদিস থেকে বোঝা যায় আজান শুনে নবীজির জন্য ওসিলা প্রার্থনা করলে বা এই দোয়াটি পড়লে কেয়ামতের দিন নবীজির শাফাআত পাওয়ার আশা করা যেতে পারে। ডেল্টা টাইমস্/আইইউ |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |