|
দল মনোনয়ন দিলেও দুর্নীতিবাজকে ভোট দেবেন না
রহমান মৃধা
|
![]() দল মনোনয়ন দিলেও দুর্নীতিবাজকে ভোট দেবেন না এ কষ্ট আর মেনে নেওয়া যাবে না। দুর্নীতি, অনিয়ম, চাঁদাবাজি কিংবা ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠলে তার নিরপেক্ষ তদন্ত ও প্রমাণভিত্তিক বিচার নিশ্চিত করতে হবে। প্রভাব, দর–কষাকষি বা রাজনৈতিক সুবিধার নামে বিচারপ্রক্রিয়া বিকৃত হওয়ার দিন শেষ করতে হবে—এটাই জনগণের প্রধান দাবি। কিন্তু কেবল অভিযোগ নয়—বদলাতে হবে কাঠামো। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে স্বচ্ছতা, স্বাধীনতা, যোগ্যতা, প্রযুক্তি ও জনসম্পৃক্ততার সুসমন্বিত সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। কাঠামোগত পরিবর্তনের জন্য করণীয় ১) স্বচ্ছতা ও তথ্য অধিকার সম্প্রসারণ সরকারি প্রকল্পের ব্যয়, উন্নয়ন বাজেট ও লেনদেনের তথ্য জনগণের সামনে উন্মুক্ত করতে হবে। তথ্য গোপন থাকলে অনিয়ম বাড়ে; তথ্য উন্মুক্ত হলে দুর্নীতির মৃত্যু ঘটে। ২) স্বাধীন তদন্ত ও অডিট ব্যবস্থা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, দ্রুত, পেশাদার তদন্ত ও অডিট প্রতিষ্ঠান গঠন করতে হবে। তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ বাধ্যতামূলক ও কার্যকর পদক্ষেপনির্ভর হতে হবে। ৩) যোগ্যতা ও সততার ভিত্তিতে নিয়োগ দলবাজ বা কোটা–মাফিয়া মানসিকতার নিয়োগ বন্ধ করতে হবে। দক্ষতা, নৈতিকতা, প্রশিক্ষণ ও জবাবদিহি—এসবের ভিত্তিতে নিয়োগ ও মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে। ৪) নাগরিক অংশগ্রহণ ও স্থানীয় তত্ত্বাবধান প্রশাসন ও উন্নয়ন কার্যক্রমে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের নজরদারি শক্তিশালী হলে কাঠামোগত দুর্নীতি কমে যায়। ৫) ডিজিটাল রেকর্ড ও ট্রেসেবল সেবার বিস্তার সরকারি নথি, লেনদেন ও সেবাকে ডিজিটাল রেকর্ডে আনলে অনিয়ম আড়াল করা যায় না; সেবা দ্রুত হয়, জবাবদিহি নিশ্চিত হয়। এসব শুধু নীতি নয়—সততা ও দায়িত্ববোধের সংস্কৃতি গড়ে তোলার পথ। এটি একদিনের কাজ নয়; এটি দীর্ঘমেয়াদি সংগ্রাম, যেখানে প্রতিদিন ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে হবে। গণতন্ত্র চাইলে সর্বপ্রথম নিশ্চিত করতে হবে ভোটাধিকার। আর ভোটাধিকার মানে দায়িত্ব—দুর্নীতিবাজকে প্রত্যাখ্যান করার দায়িত্ব। দল যাকেই মনোনয়ন দিক—যদি সে দুর্নীতিবাজ হয়, তাকে সমর্থন করা যাবে না। হোক সে আপনার নিজের দলের—তাকে ভোট দেওয়া মানে দুর্নীতিকে বৈধতা দেওয়া। হ্যাঁ, আমি বলছি আঠারো কোটি মানুষের প্রতি। আমরা যদি বিশ্ববাসীর কাছে মর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে দাঁড়াতে চাই, তবে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের হাতে দেশকে জিম্মি রেখে উন্নয়ন সম্ভব নয়। বিশ্বজুড়ে দেড় কোটিরও বেশি রেমিট্যান্সযোদ্ধা যে টাকা পাঠান—সেটি দুর্নীতির পকেটে না যাওয়া নিশ্চিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা চাই—মানবিক, সৎ, নিষ্ঠাবান ও জনকল্যাণে নিবেদিত নেতৃত্ব। কোনো দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তির রাষ্ট্র পরিচালনার নৈতিক অধিকার নেই—এবং ভুল করেও আমরা যেন তাকে সেই সুযোগ না দিই। এটি শুধু অধিকার নয়, জাতিগত দায়িত্ব। তবু প্রশ্ন: এত আন্দোলন, এত আহ্বান, এত ত্যাগের পরও পরিবর্তন কেন আসে না? কেন বারবার সেই পুরোনো নেতৃত্ব, সেই পুরোনো দুর্নীতির চক্র ফিরে আসে? এই প্রশ্ন আমাদের ইতিহাসের আয়নায় তাকাতে বাধ্য করে। দীর্ঘ ৫৪ বছরে আমরা কি পেয়েছি? এক রোগ থেকে মুক্ত হয়ে আরেক রোগে আক্রান্ত হয়েছি—কলেরা থেকে যক্ষ্মা; কিন্তু সুস্থ হতে পারিনি। কারণ আমরা বারবার দুর্নীতিগ্রস্ত নেতৃত্ব ও বিকৃত রাজনৈতিক সংস্কৃতির কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। এবার যদি আবারও ব্যর্থ হই, তবে হারাবে আমাদের মনুষ্যত্ব—হারাবে বাংলাদেশও। আমি-আপনি—আমরাই বাংলাদেশ। আমাদের আছে সততা এবং সততার সঙ্গে লড়াই করার সাহস। অসততার সঙ্গে কোনো আপস নয়। অসততা অন্ধকারে জন্ম নেয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্বৈরশাসন তৈরি করে—বাংলাদেশের মানুষ তা বহুবার দেখেছে। তাই এ অপকর্মের প্রশ্রয় আর দেওয়া চলবে না। করণীয় একটাই: সততার পাশে দাঁড়ানো, অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খোলা, এবং দুর্নীতিকে ঘৃণা করা। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই দেশ আবারও একটি নতুন সুযোগ পেয়েছে। সময় এসেছে—দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর। জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন বাণিজ্যের যে নগ্ন প্রদর্শনী চলছে, তা স্পষ্ট করে দেয়—মানুষের মুখোশধারী রাক্ষসরা আবারও গণতন্ত্র গ্রাস করতে প্রস্তুত। কিন্তু মনে রাখতে হবে—এ দেশ কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। এটি আঠারো কোটি মানুষের দেশ। নাগরিক হিসেবে বাঁচতে চাইলে এখনই সময়—সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের, এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ন্যায়কেন্দ্রিক বাংলাদেশ গড়ার। আসুন, সত্যের পথে চলার শপথ নিই।সত্য বললে ক্ষমতাধররা শঙ্কিত হতে পারে—কিন্তু ন্যায়ের পথে দাঁড়াতে এ শক্তিই প্রয়োজন। আমাদের কণ্ঠ হতে হবে যুক্তিনির্ভর, প্রমাণসমৃদ্ধ ও দায়িত্বশীল। সংগ্রাম কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়—এটি এক জাতির ভবিষ্যৎ পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম। আমাদের লক্ষ্য—একটি দুর্নীতিমুক্ত, মানবিক ও জবাবদিহিমূলক বাংলাদেশ। আমি বলি—প্রশ্ন করুন, তথ্য চান, বিচার দাবি করুন। আমাদের সন্তানদের জন্য, আমাদের স্বপ্নের জন্য, আমাদের দেশের জন্য—এখনই সময়। নিজের কণ্ঠ তুলুন, সত্যের পক্ষে লড়ুন, রক্ষা করুন ভবিষ্যৎ। রক্ষা করুন বাংলাদেশ। লেখক: গবেষক ও লেখক; সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। ডেল্টা টাইমস্/রহমান মৃধা/আইইউ |
| « পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |