সব বাধা পেছনে ফেলে
প্রকাশ: রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৯, ১২:০০ এএম

১১১খোকন সাহা২২২

দীর্ঘ ২৮ বছর পর গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গত ১১ মার্চ। ছোটখাটো ত্রæটিবিচ্যুতি ছাড়া সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ‘ডাকসু’ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। কোনোরকম সন্ত্রাস, অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই এক নজিরবিহীন সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে যে সুষ্ঠু নির্বাচন শেষ হয়েছে। সেটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে উঠে পড়ে লেগেছিল কতিপয় ছাত্র সংগঠন। সব ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিয়েই ডাকসু নেতাদের অভিষেক সম্পন্ন হয়েছে। অথচ ডাকসু নির্বাচনের বিরোধিতাকারী কতিপয় ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পর থেকেই নির্বাচনকে সামনে রেখে একটা বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা হয়েছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্থান ছিল চোখে পড়ার মতো। সেই সুষ্ঠু নির্বাচনকে বিতর্কিত করার লক্ষ্যে কতিপয় ছাত্র সংগঠন করার হীন উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশাসনকে প্রশ্নের মধ্যে ফেলারও অপচেষ্টা করেছে। পাশাপাশি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, ভিপি প্রার্থী রেজওয়ানুল হক চৌধুরী (শোভন) তার পরাজয় হাসিমুখে মেনে নিয়ে বিজয়ী ভিপি নুরুল হক নুরকে বরণ করে নিয়ে অভিনন্দন জানিয়ে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এখন প্রশ্ন হলোÑ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশসেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভিপি হয়ে যাওয়াটা খুব সহজ ব্যাপার নয়। অতীতের দিকে দৃষ্টি ফেরালে আমরা কি দেখতে পাই? বিশেষ করে ডাকসু নির্বাচনে ‘ছাত্রদল’ বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে নির্বাচনে সশস্ত্র অবস্থান নিয়ে ছাত্রীদের মিছিলে হামলা চালিয়ে ক্ষমতা দখল করে ডাকসুর মতো ঐতিহ্যবাহী একটি প্রতিষ্ঠানের ইমেজকে ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়ার ইতিহাসও এ দেশবাসী জানে। পক্ষান্তরে ২৮ বছর পর এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গণতান্ত্রিক সরকার এ নির্বাচনে যেমন কোনোরকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে গণতান্ত্রিক রীতিকে এগিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা করেছে। তেমনি সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগও গণতান্ত্রিক ধারার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নির্বাচন যাতে আনন্দমুখর পরিবেশে হতে পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছিল। আর সে জন্য সরকার এবং ছাত্রলীগ নেতাদের প্রাণঢালা অভিনন্দন।

একটা সময় ছিল যখন ডাকসু নির্বাচনে জয়লাভ করত এন্টি স্টাবলিস্টমেন্ট ছাত্র শক্তি। তখন মনে করা হতো সরকার মানেই গণবিরোধী। কিন্তু সেই ধারার রাজনীতি এখন আর দেশে বিদ্যমান নেই। প্রথমত ১০ বছর ধরে জননেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার তখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গণতন্ত্রবান্ধব সরকার বর্তমানে রাষ্ট্র ক্ষমতায়। দ্বিতীয়ত বর্তমানে স্কুল, কলেজ এবং ইউনিভার্সিটিতে পড়–য়ারা অনেক সচেতন এবং প্রবলভাবে রাজনীতি সচেতন। তাদরে চোখে ধুলো দিয়ে ছাত্ররাজনীতি কিংবা জাতীয় রাজনীতি কোনোটা করাই সম্ভব নয়। কাজেই যেসব ছাত্র সংগঠনের নেতারা ডাকসু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে অহেতুক ‘অচল’ করে দেওয়ার পথে পা বাড়াতে চাচ্ছে। তাদের উচিত নির্বাচনে কী কী অসঙ্গতি ছিল সেটা মিডিয়ার মাধ্যমে প্রমাণ করা। দেশবাসী ও ছাত্রছাত্রীদের অন্ধকারে রেখে ‘এটা হয়েছিল, এটা হতে পার’ এ রকম বায়বীয় অভিযোগ না তুলে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কথা বলা সমীচীন। কেননা, মনে রাখতে হবে বিগত ১০-১২ বছর ধরে অনেক প্রচেষ্টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গণমুখী শিক্ষাবান্ধব সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘সেশন জটের’ কবল থেকে উদ্ধার করে একটা সুষ্ঠু শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করেছে এবং ‘ডাকসু’ নির্বাচন সম্পন্নের সার্বিক সহযোগিতা করেছে। সেই সরকার এবং ঢাবি প্রশাসনকে কথায় কথায় আন্দোলনের হুমকি দিয়ে কিছু ছাত্র সংগঠনের কতিপয় নেতা অহেতুক আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে সেটা যেমন বোধগম্য নয়, তেমনি এও মনে হয় যে তারা আন্দোলনে ডাক দিলেই যে সচেতন ছাত্রছাত্রীরা তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ঢাবিকে উত্তাল করে তুলবে সে ইতিহাসও কি নিকট অতীতে রয়েছে?

পরিশেষে আবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাদের ধন্যবাদ এজন্য যেÑ তারা কতটা উদার এবং গণতন্ত্রমুখী ও সংযমের মধ্যদিয়ে নির্বাচনকে অতিক্রম করার সাফল্য দেখিয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সাধুবাদ দিয়ে বলতে হয় তারা ঐতিহাসিক ডাকসু নির্বাচনকে সব অনিয়ম, পক্ষপাতিত্বের ঊর্ধ্বে উঠে সম্পন্ন করার কৃতিত্ব অর্জনে সফল হয়েছে। এখন প্রয়োজন নির্বাচিতদেরকে পরবর্তী মেয়াদ পর্যন্ত ছাত্র সংসদ পরিচালনায় সার্বিকভাবে সহযোগিতা প্রদান।

লেখক : আইনজীবী, সাধারণ সম্পাদক, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগ


« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-২২৬৬৩৯০১৮, ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-২২৬৬৩৯০১৮, ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com