|
২৮ বছর পর সচল ডাকসু
আইনের ত্রুটি শুদ্ধ করেই জামায়াতের বিচার শুরু
|
|
১১১হিরা তালুকদার২২২ অন্যদিকে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ। তবে তখন নির্বাচন কমিশন থেকে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। তখন ইসি থেকে বলা হয়, ‘বিষয়টি আপিল বিভাগে বিচারাধীন। যে কারণে ইসি জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে না।’ এরপর হাইকোর্টের ওই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল করে জামায়াত, যা আপিল বিভাগে খারিজ হয়ে যায়। ২০১৩ সালের ২ নভেম্বর হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। এই অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর আওতায় রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছিল। দলটির নিবন্ধন নম্বর ছিল ১৪। ২০০৯ সালে হাইকোর্টে করা ৬৩০ নম্বর রিট পিটিশনের রায়ে আদালত জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০এইচ ধারা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করা হলো।’ প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ‘হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতের করা আপিল সর্বোচ্চ আদালত খারিজ করে দেওয়ায় তা আর সাবজুডিশ ম্যাটারও (বিচারাধীন বিষয়) নেই। তাই জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীক (দাঁড়িপাল্লা) বাতিল করা হলো।’ ইসির এই প্রজ্ঞাপনের পর থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াত বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ থেকে বিদায় নেয়। ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের বিষয়ে সংগঠন হিসেবে ৭ মাস ধরে জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে তদন্ত হয়েছে। সেই তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের প্রধানের কাছে জমা পড়ার পর সাতজন আইনজীবীর একটি দল আড়াই মাস ধরে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অভিযোগ তৈরির কাজ করছিলেন। এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ আবদুল হান্নান খান সময়ের আলোকে বলেন, ‘একটা প্রয়োজনে আমাদের বলা হয়েছিল জামায়াতের ব্যাপারে তদন্ত করতে। আমরা করেছি এবং তা প্রসিকিউশনে জমাও দিয়েছি। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলোÑ ট্রাইব্যুনালস আইন সংশোধন করে বিচার শুরু হবে। কারণ বর্তমান আইনে বিচার হলে সেখানে শাস্তির বিধান নেই।’ হান্নান খান বলেন, শাস্তির বিধান যুক্ত করে একটি আইন সংশোধন করতে পাঁচ বছর কেন লাগল সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। জামায়াতের বিষয়ে তদন্তে কী পাওয়া গেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা ও ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধগুলো সংঘটিত হয়েছে জামায়াত কর্তৃক এবং অনেক ক্ষেত্রে জামায়াতের পরামর্শে। তারাই রাজাকার বাহিনীর কর্তৃত্ব নেয় এবং আলবদর ব্রিগেড গঠন করে। যারা যুদ্ধের সময় দেশটাকে নরক বানিয়ে রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছিল।’ এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সদস্য সানাউল হক বলেন, আমরা ট্রাইব্যুনালের একটি মামলার (গোলাম আযম) রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতের বিচারের জন্য তদন্তে নামি এবং সঠিক সময়ে তদন্ত শেষ করি। অথচ তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের পাঁচ বছর পরও বিচার শুরু হলো না। এ বিষয়ে প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত বলেন, ‘আমরা তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই কাজ শুরু করে দেই। মামলাটি বিচারের জন্য প্রায় প্রস্তুতও করে ফেলেছিলাম। এরপরই আইন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হলো সেøা (ধীরে) কাজ করতে। ব্যস, থেমে গেল।’ তিনি বলেন, ‘এর আগে ট্রাইব্যুনালস আইন তিন দফা সংশোধন করা হয়েছে। ২০০৯ সালে প্রথম দফা সংশোধনীতে কয়েকটি স্থানে পরিবর্তন এনে মূলত হালনাগাদ করা হয়েছিল। ২০১২ সালে দ্বিতীয় সংশোধনীতে আসামির অনুপস্থিতিতে তাকে পলাতক ঘোষণা করে বিচার এবং এক ট্রাইব্যুনাল থেকে আরেক ট্রাইব্যুনালে মামলা স্থানান্তরের বিধান যুক্ত করা হয়।’ সর্বশেষ সংশোধনী আনা হয় ২০১৩ সালে। কেবল দল হিসেবে জামায়াতের বিচারের জন্য ২০১৪ সালে নেওয়া আইন সংশোধনের উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হয়নি। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, ‘দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ট্রাইব্যুনালস আইনটি সংশোধনের জন্য প্রক্রিয়াধীন। যে কারণে সব প্রস্তুতির পরও জামায়াতের বিচার করা সম্ভব হচ্ছে না। আশা করি দ্রুতই আইনটি সংশোধন করে যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের বিচার শুরু করা হবে।’ এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সময়ের আলোকে বলেন, আমরা সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইন সংশোধন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছিলাম। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ লেজিসলেটিভ ভাষা আবারও একটু ঠিকঠাক করার জন্য বলেছেন, আইনটি আমাদের কাছে আছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিয়ে আবারও আইনটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দেব, যাতে এটা মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয়। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট আইনে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সংগঠনের বিচার করার কথা থাকলেও শাস্তির ব্যবস্থা নেই। এটা একটা বড় ত্রæটি। তাই আইনের ত্রæটিগুলো শুদ্ধ করার পর বিচার কাজ শুরু করতে হবে। তা না হলে দেখা যাবে, বিচার হচ্ছে, কিন্তু সাজা হবে না। তখন সেটা হাস্যকর হবে। |
| « পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |