প্রতি ১০ জনে ৪ জন পরোক্ষ ধূমপানের শিকার
নিজস্ব প্রতিবেদক:
|
![]() প্রতি ১০ জনে ৪ জন পরোক্ষ ধূমপানের শিকার মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন: এফটিসি অনুচ্ছেদ ৫.৩ বাস্তবায়নে রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি। এসময় অধূমপায়ী ও তরুণ প্রজন্মকে তামাকের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাস এবং আইন সংশোধন প্রক্রিয়ায় তামাক কোম্পানির সম্পৃক্ততা সম্পূর্ণভাবে বন্ধের দাবি জানিয়েছে বিএইচআরএফ। লিখিত বক্তব্যে রাশেদ রাব্বি বলেন, উপদেষ্টা কমিটি সম্প্রতি এফসিটিসি অনুচ্ছেদ ৫.৩ লঙ্ঘন করে তামাক কোম্পানির সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার ধারাবাহিকতায় আগামীকাল (৮ অক্টোবর) এনবিআর কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসার পরিকল্পনা করেছে। তিনি আরও বলেন, ‘এফসিটিসি অনুচ্ছেদ ৫.৩ অনুযায়ী, কোনো দেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বা নীতি প্রণয়নে তামাক কোম্পানি বা তাদের সহযোগীদের মতামত গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে এ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে বাধ্য। তাই সরকারের সংশ্লিষ্টদের এফসিটিসি পুরোপুরি অনুসরণ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রক্রিয়ায় কোনোভাবেই তামাক কোম্পানিকে সম্পৃক্ত করা যাবে না বলেও উল্লেখ করেন এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, পরোক্ষ ধূমপানের স্বাস্থ্যক্ষতি থেকে অধূমপায়ীদের সুরক্ষা প্রদান এবং তরুণ প্রজন্মকে তামাকের বিষাক্ত ছোবল থেকে মুক্ত রাখতেই দ্রুততম সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত সংশোধনীর খসড়া উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন ও অনুমোদন করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও লেখক জান্নাতুল বাকেয়া কেকা বলেন, ধূমপান না করেও শিশু-কিশোরদের একটি বড় অংশ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে-পাবলিক প্লেসে ৫৯% এবং বাড়িতে ৩১%। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে ১৫ বছরের নিচের ৬১ হাজারেরও বেশি শিশু নানা রোগে ভুগছে। তাই অধুমপায়ী ও শিশুদের সুরক্ষায় ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান (ডিএসএ) বাতিল করে সকল পাবলিক স্থান ও পরিবহন শতভাগ ধূমপানমুক্ত করা জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, নির্ধারিত স্থানে করা হলেও তামাকের ধোঁয়া থেকে সুরক্ষা মেলে না। স্মোকিং জোনে প্রবেশ বা বের হওয়ার সময় সিগারেটের ধোঁয়া পুরো রেস্তোরাঁয় ছড়িয়ে পড়ে এবং নারী, শিশু এবং সেবা কর্মীসহ সবাই পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়। পরোক্ষ ধূমপান রোধে কোনো ভূমিকা রাখতে বার্থ হওয়ায় ইতোমধ্যে স্মোকিং জোন বাতিল করেছে ৭৯টি দেশ। সভাপতির বক্তব্যে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, হৃদরোগ, স্ট্রোক ও শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি রোগসহ নানা অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ তামাক। এর কারণে প্রতিবছর দেশে এক লাখ ৬১ হাজারেরও বেশি মানুষ অকালে মারা যায়। তরুণ প্রজন্মকে এই বিপদ থেকে রক্ষায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রস্তাবিত সংশোধনী পাস করতে হবে। ‘বাংলাদেশে ২০২২ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক কোম্পানিগুলো নগদ টাকা ও সরঞ্জামাদি প্রদানের মাধ্যমে রেস্টুরেন্টগুলোকে ডিএসএ স্থাপনে উৎসাহিত করে থাকে, যাতে তরুণরা তামাক ব্যবহারে প্রলুব্ধ হয়। বিদ্যমান আইনের দুর্বলতার (ডিএসএ স্থাপনের ঐচ্ছিক সুযোগ) কারণেই কোম্পানিগুলো এই কূটকৌশল অবলম্বনের সুযোগ পাচ্ছে’—যোগ করেন তিনি। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনীতে এফসিটিসির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ছয়টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো— ১. অধূমপায়ীদের সুরক্ষায় সব পাবলিক স্থান ও গণপরিবহনে ধূমপানের নির্ধারিত স্থান বাতিল; ২. বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকপণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ; ৩. তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ; ৪. ই-সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শিশু-কিশোরদের সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ; ৫. তামাকপণ্যের খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ এবং ৬. সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা। সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হাসান সোহেল। অনুষ্ঠানে বিএইচআরএফের সদস্য, তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিসহ অন্যান্য অংশীজন উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএইচআরএফ) আয়োজনে অনুষ্ঠান সহযোগিতায় ছিল ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ। ডেল্টা টাইমস্/আইইউ |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |