জাতীয় পার্টির নাটাই এখন রওশনের হাতে
সাব্বির আহমেদ
প্রকাশ: রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৯, ১২:০০ এএম আপডেট: ২৪.০৩.২০১৯ ৭:২৩ পিএম

নির্বাচনের আগে থেকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। আর এতেই কেন্দ্র থেকে তৃণমূলÑ সর্বত্র এক হ-য-ব-র-ল অবস্থা সৃষ্টি হতে থাকে। ভোটের কিছুদিন আগে এর বহিঃপ্রকাশও ঘটে। কিন্তু গত শুক্রবার জিএম কাদেরকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর এ অবস্থা আরও স্পষ্ট হয়েছে। অনেকেই বলছেন, শয্যাশায়ী এরশাদকে বিছানায় রেখেই পার্টিতে এমন রদবদল হচ্ছে। আর এতেই দফায় দফায় সৃষ্টি হচ্ছে বিভক্তি। সৃষ্ট কোন্দল প্রকাশ্য হচ্ছে। দলে আবার ক্ষমতা ফিরে পেয়েছেন রওশন এরশাদ। দলের নাটাই এখন তার হাতে। এ অবস্থায় সংসদে বিরোধী দলে থাকা জাতীয় পার্টির ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দেখছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে দলের সিনিয়র নেতা এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন বাবলু এখন চুপ করে আছেন। এ বিষয়ে তারা মুখ খুলছেন না।

গত শুক্রবার রাতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দলের কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরকে অব্যাহতি দিয়েছেন। একই সঙ্গে সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকেও তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিরোধদলীয় উপনেতার পদ থেকেও তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে দলটির পার্লামেন্টারি পার্টির সিদ্ধান্তে। বিরোধদলীয় উপনেতা করা হয়েছে রওশন এরশাদকে। জিএম কাদেরের জায়গায় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান পদে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সেনাকর্মকর্তা মাসুদউদ্দিন চৌধুরীকে দেখা যেতে পারে।

গতকাল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ স্বাক্ষরিত এক সাংগঠনিক নির্দেশে সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতার পদ থেকে জিএম কাদেরকে অপসারণ করা হয়। নির্দেশে বলা হয়েছে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা এবং পার্লামেন্টারি পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে আমি প্রধান বিরোধী দলের উপনেতার পদ থেকে গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরকে অপসারণ করছি। এখন প্রধান বিরোধীদলের উপনেতার পদে বেগম রওশন এরশাদকে মনোনীত করা হলো। পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১/ক ধারা মোতাবেক এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংসদের স্পিকার সমীপে প্রস্তাব পেশ করা হলো।


সংসদ উপনেতার দায়িত্ব পাওয়ার পর জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান রওশদ এরশাদ সময়ের আলোকে বলেন, দায়িত্ব এখন আগের থেকে বেড়ে গেল। আগামী দিনে সবার সহযোগিতায় এগিয়ে যাবে জাতীয় পার্টি। যত চ্যালেঞ্জই আসুক, তা মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হবে জাতীয় পার্টিকে। জানান, অসুস্থতা অনেকটা কাটিয়ে উঠছেন পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

এই অব্যাহতির পর থেকে পার্টিতে পুরনো গুঞ্জন বেড়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পার্টির প্রভাবশালী এক নেতা সময়ের আলোকে জানান, চেয়ারম্যান এরশাদ মনে হয় আর বেশিদিন বাঁচবেন না। দলের হাল ধরবেন তার স্ত্রী রওশন এরশাদ। এ ছাড়া পার্টির বর্তমান মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙাকে আগামীতে দলের উচ্চপর্যায়ের পদে চান এরশাদের স্ত্রী। তাই ভাইয়ে ভাইয়ে একটা বিভেদ সৃষ্টির আগেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হুট করেই রাতে জিএম কাদেরকে সরিয়ে দেওয়ার পেছনে কাজ করেছেন রওশন এরশাদ।

তিনি বলেন, এরশাদ বিষয়টি জানতেন তবে আরও সময় নিতে চেয়েছিলেন। আর চেয়ারম্যান স্যার কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওই নোটিসে স্বাক্ষর দেননি। এটা স্যারের পুরনো সই। স্যারকে বলা হয়েছে। উনি বলেছেন, কয়েকদিন যাক, নিজে নোটিসে স্বাক্ষর করে দেবেন। যদিও এ বিষয়ে জিএম কাদেরের দাবি, এ সিদ্ধান্ত রহস্যজনক। জানি না, গতকালও এরশাদ সাহেবের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা হয়েছে। তিনি আমাকে বলেছেন, পার্টিটাকে ঠিকমতো দেখাশোনা করতে। আমি তাকে বললাম, এটা নিয়ে আমার একটু সন্দেহ হচ্ছে।

দুই ভাইয়ের মধ্যে এত ভালো সমঝোতা থাকার পর হঠাৎ কেন এমন হলোÑ জানতে চাইলে এরশাদের রাজনৈতিক সচিব সুনীল শুভরায় সময়ের আলোকে বলেন, শুরু থেকেই জিএম কাদেরের অহমিকা বেশি ছিল, যা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অনেকেই মানতে পারেনি। সমন্বয়হীনতার বিস্তর অভিযোগ ছিল। অনেককেই এড়িয়ে চলছেন তিনি। আর সবকিছু মিলিয়ে স্যারের সাংগঠনিক নির্দেশেই হয়েছে এটি। এই সিদ্ধান্তের আরেকটি কারণ, নির্বাচনের আগে ও পরে তার কর্মকাÐে নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ ছিলেন।

এ বিষয়টি নিয়ে আপাতত কথা বলতে নারাজ চেয়ারম্যানের বিশেষ সহকারী ও পার্টির সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার। সময়ের আলোকে তিনি বলেন, এ বিষয়ে পরে কথা হবে। এরশাদ সাহেব বিষয়টি ভালো জানেন। যা পার্টির ভবিষ্যতের জন্য ভালো হয় তা-ই তিনি করছেন।

জাতীয় পার্টির এক শীর্ষ নেতা জানান, পার্টির চেয়ারম্যান অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। হুইল চেয়ার ছাড়া চলতে পারেন না। অথচ এখন দলে চলছে রদবদলের নামে নাটক। আরও যে কত নাটক দেখতে হবে।

এ বিষয়ে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার বলেন, স্যার মাঝেমধ্যে দলের কাউকে কাউকে পদ-পদবি দিয়ে পরীক্ষা করেন। কিন্তু পদ-পদবি পেয়েই তারা নিজেকে স্যারের থেকে বড় নেতা মনে করেন। এর পরিণতি কখনও ভালো হয় না। সন্তান জন্মের পর যদি বাপকে ভুলে যায় তাহলে কি চলে। কারণ পল্লীবন্ধু যতদিন বেঁচে আছেন তিনি জাতীয় পার্টির সর্বময়ক্ষমতার অধিকারী। কেউ কেউ ভুল করে নিজেকে এরশাদ সাহেবের চেয়ে বড় নেতা ভাবেন। কিন্তু জাতীয় পার্টি থেকে গত ৩০ বছরে যারা এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন তা এরশাদ সাহেবেরই অবদান।

তিনি বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। এটাই সেই রাজনীতির খেলা। কে কখন কোথায় যাবে কেউ জানে না।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-২২৬৬৩৯০১৮, ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-২২৬৬৩৯০১৮, ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com