আজ ২৬ মার্চ। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস। বাঙালি জাতির গর্বের দিন, গৌরবের দিন। ‘স্বাধীনতা’ আল্লাহ প্রদত্ত একটি নেয়ামত। যারা পরাধীনÑ তারা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পারে স্বাধীনতা কত বড় মাপের নেয়ামত। তাই এর শোকর আদায় করে শেষ করা যায় না!
মানুষ প্রকৃতিগতভাবে স্বাধীন। প্রত্যেক মানুষ মাতগর্ভ থেকে স্বাধীনভাবে জন্মগ্রহণ করে। আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে সহজাত এমন প্রকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন যে, সে সৃষ্টিকর্তা ছাড়া অন্য কারও কাছে নতি স্বীকার করতে চায় না। তা ছাড়া ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কোনো প্রকারের, কোনো ধরনের পরাধীনতা ইসলাম সমর্থন করে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে মুক্ত করে তাদের, তাদের গুরুভার হতে ও শৃঙ্খল হতে যা তাদের ওপর ছিল, সুতরাং যারা তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং যে নূর তার সঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে এর অনুসরণ করে তারাই সফলকাম।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ১৫৭)
একাত্তরে পাকিস্তানি শোষকদের কবল থেকে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে। এই স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে ত্রিশ লাখ শহীদের জীবনদান ও ভালোবাসার মাধ্যমে। নিজেদের জীবন বাজি রেখে প্রাণপণ লড়াই করে এ দেশের মাটি ও মানুষকে স্বাধীন করেছেন তারা। যারা দেশের ভালোবাসা হৃদয়ে ধারণ করে মজলুম জনতার দাবি আদায়ের স্বার্থে লড়াই করেছিল, তাদের লড়াই ছিল আল্লাহর পথে লড়াই করারই নামান্তর। আল্লাহ তায়ালা তাদের সম্মানার্থে কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তাদের তোমরা মৃত বল না, বরং তারা জীবিত। কিন্তু তোমরা তা উপলব্ধি করতে পার না। (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৪)
এই স্বাধীনতা ধরে রাখতে হবে। শহীদদের আত্মদানকে চির সমুন্নত রাখতে হলে দেশের সার্বভৌমত্বের হেফাজত করতে হবে। আর ইসলামী রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যারা নিয়োজিত থাকেন, তাদের মর্যাদা অনেক বেশি। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘একদিন ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা দেওয়া পৃথিবী ও তার অন্তর্গত সবকিছুর চেয়ে উত্তম।’ অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘মৃত ব্যক্তির সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, ফলে তার আমল আর বৃদ্ধি পেতে পারে না। তবে ওই ব্যক্তির কথা ভিন্ন যে কোনো ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত প্রহরায় নিয়োজিত থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তার আমল কেয়ামত পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং কবরের প্রশ্নোত্তর থেকেও সে মুক্ত থাকবে।’ (তিরমিজি ও আবু দাউদ)সার্বভৌমত্ব ধরে রাখার পাশাপাশি দেশ গঠন, এর উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্যও কাজ করতে হবে আমাদের। এ জন্য দেশপ্রেমের বিকল্প নেই। প্রত্যেক নাগরিককে নিজ নিজ স্থান থেকে দেশের কল্যাণ, নিরাপত্তা ও সুনামের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য ত্যাগের মানসিকতা অর্জন করতে হয়। আর এমন মানসিকতা সৃষ্টির অন্যতম উপাদান হলো স্বদেশপ্রেম। আরবি ভাষায় প্রবচন আছেÑ ‘হব্বুল ওয়াতান মিনাল ঈমান’। যার অর্থÑ দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ।

আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিজ মাতভ‚মিকে খুব ভালোবাসতেন। জন্মভ‚মি মক্কার প্রতি তার অপরিসীম ভালোবাসার কথা আমাদের জানা। প্রতিপক্ষ মুশরিকদের হিংস্রতায় রাসুল (সা.) মক্কা ছেড়ে মদিনায় চলে যেতে বাধ্য হন। তিনি যখন পবিত্র মদিনার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন তখন পেছন ফিরে প্রিয় মাতৃভ‚মির দিকে তাকাচ্ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘হে মক্কা প্রিয় জন্মভ‚মি আমার! যদি তোমার অধিবাসীরা আমাকে বাধ্য না করত আমি কোনোদিন তোমাকে ছেড়ে যেতাম না।’ (বুখারি ও মুসলিম)
নিজ দেশের প্রতি নবীজি (সা.)-এর এই অকৃত্রিম ভালোবাসা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরাও আমাদের দেশের প্রতি শ্রদ্ধাসহ ভালোবাসা রাখব। যোগ্য, সৎ ও নিষ্ঠাবান নাগরিক তৈরি করে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠনে অঙ্গীকারবদ্ধ হব। তবেই স্বার্থক ও সফল হবে একাত্তরে লাখো বাঙালির জীবন দান।
আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া দরুত পড়া আমাদের দায়িত্ব। সম্ভব হলে বীর শহীদদের কবর জিয়ারত করতে যাব। আল্লাহ তায়ালা আমাদের দেশ ও জাতিকে সব ধরনের বিপদ আপদ থেকে মুক্ত রাখুন। আমিন।
লেখক : আলেম লেখক ও সাংবাদিক