রাজধানীসহ দেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলা–হুমকি বৃদ্ধি
ডেল্টা টাইমস্ ডেস্ক:
প্রকাশ: সোমবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৫, ৮:০৭ পিএম

রাজধানীসহ দেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলা–হুমকি বৃদ্ধি

রাজধানীসহ দেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলা–হুমকি বৃদ্ধি

রাজধানী ঢাকাসহ দেশে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে একের পর এক সাংবাদিক খুন, হামলা, মারধর, গুলি এবং হুমকির শিকার হচ্ছেন। এক কথায় বলতে গেলে, অপরাধীদের টার্গেটই যেন সাংবাদিকদের নির্যাতন, নিপীড়ন এবং হত্যা। এর পেছনে মূল কারণগুলো হলো—মাদক, চাঁদাবাজি, জমি দখল এবং অপরাধ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ। অনেক ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে বা প্রকাশিত সংবাদের কারণে এসব হামলার শিকার হচ্ছেন।

সাংবাদিক সমাজ এসব হামলা–মামলার প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) এবং দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বিচার চেয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ এখনও নেওয়া হয়নি। গত ৫ আগস্টের পর থেকে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, মারধর, হুমকি এবং হত্যার ঘটনা ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশ সাংবাদিকদের জন্য বিপজ্জনক দেশের তালিকায়

সাংবাদিকদের কাজের জন্য বিপজ্জনক দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম এসেছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে তালিকায় পাকিস্তানও রয়েছে। তবে এ বছর সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক নয়টি দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিন। আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে। সবচেয়ে বিপজ্জনক নয়টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। আরএসএফের বার্ষিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে।

গত ৩ মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে আরএসএফের গণমাধ্যম স্বাধীনতার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৫তম, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০২৩ সালে এই অবস্থান ছিল ১৬৩তম। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বিভিন্ন ঘটনায় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, সাংবাদিকতা এবং গণমাধ্যমের অধিকার নিয়ে আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ) বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে গত তিন মাসে একাধিক বিবৃতি দিয়েছে।

হামলা ও হয়রানির পরিসংখ্যান

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত দেশে ৪৯৬ জন সাংবাদিক হয়রানির শিকার হয়েছেন। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিবেদনে জানা গেছে, সাত মাসে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ২৭৪ জন সাংবাদিক বাধা ও হামলার শিকার হয়েছেন। টিআইবির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনজন সাংবাদিক দায়িত্ব পালনকালে হামলায় নিহত হয়েছেন। টিআইবি জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়নি।

মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)-এর প্রতিবেদনে আগস্ট মাসে দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ৩৩টি ঘটনায় ৯৬ সাংবাদিক হামলা, আইনি হয়রানি, হুমকি, হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আগস্টে আক্রান্ত সাংবাদিকের সংখ্যা জুলাইয়ের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সাংবাদিকদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে

দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, চলতি বছর ১৩ জন সাংবাদিক গ্রেফতার রয়েছেন। তারা যদি অপরাধ করে থাকেন, অবশ্যই তাদের বিচার হওয়া উচিত। তবে সাত-আট মাস ধরে কারাগারে থাকার পরও তারা জামিন পাচ্ছেন না এবং আইনি কোনো প্রক্রিয়া কার্যকর হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, বর্তমান মামলার প্রবণতায় একাধিক মামলার মধ্যে একজন সাংবাদিককে উদ্দেশ্যমূলকভাবে নাম জড়ানো হচ্ছে।

চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দুর্নীতি উন্মোচন করতে গিয়ে দেশের সাংবাদিকরা চরম বিপদের মুখোমুখি হচ্ছেন। সত্য প্রকাশের ক্ষেত্রে পদে পদে বাধা দেওয়া হচ্ছে। সন্ত্রাসীরা প্রায়ই প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। পুলিশ সদস্য বা সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির প্রতিবেদন প্রকাশ করলে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সর্বশেষ, ৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নের জঙ্গল সলিমপুর অলিনগর এলাকায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দুই সাংবাদিক হামলার শিকার হন। হামলায় চট্টগ্রাম টেলিভিশনের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান ও বিশেষ প্রতিনিধি হোসাইন জিয়াদ এবং ক্যামেরাপারসন মো. পারভেজ গুরুতর আহত হন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংগঠন এই ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে।

এর আগে ৩ অক্টোবর কুমিল্লার দেবীদ্বারে, ২৪ সেপ্টেম্বর গাইবান্ধা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরে, ২৫ সেপ্টেম্বর শৈলকুপায়, এবং ৩০ সেপ্টেম্বর উত্তরা সেক্টর-৭ এলাকায় সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই ধরনের হামলায় সাংবাদিকরা আহত হওয়া ছাড়াও, মোবাইল, ক্যামেরা ও টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সাংবাদিকদের ঐক্যই একমাত্র সমাধান

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) সভাপতি আবু সালেহ আকন বলেন, যতদিন সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ হবেন না, ততদিন হামলা ও মামলা চলতেই থাকবে। ঢাকা বিভাগ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি মো. আলম হোসেনও একইমত।

মানবাধিকারকর্মী ও গবেষক রেজাউর রহমান লেনিন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আগের সময়ে সাংবাদিকরা ব্যাপক হামলার শিকার হয়েছেন। চলতি বছরে অন্তত ১২৬ সাংবাদিক হামলা ও মামলার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে এক নারী সাংবাদিক সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এই ধরনের নিগ্রহ, ধর্ষণ ও মারধরের ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সরকারের প্রত্যাশা অনুযায়ী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

মানবাধিকারকর্মী নূর খান বলেন, সাংবাদিকতা সমাজের প্রতিচ্ছবি। সমাজকে বোঝার জন্য সংবাদ ও সাংবাদিকতাকে বোঝা জরুরি। বর্তমান অস্থিরতায় সাংবাদিকরা হুমকির মুখে পড়েছে। মবসন্ত্রাস এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতির ফলে দেশের বিভিন্ন পেশাজীবীই বিপদে পড়েছে।

এ অবস্থায় জরুরি কাজ হলো সাংবাদিকদের সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা এবং মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় আটক সাংবাদিকদের মুক্তি দেওয়া। যাতে সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হয়।


ডেল্টা টাইমস্/সিআর/আইইউ

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-২২৬৬৩৯০১৮, ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-২২৬৬৩৯০১৮, ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com