দুর্নীতির আঁধারে টিকে গেল রেড ক্রিসেন্টের বিতর্কিত বোর্ড
ডেল্টা টাইমস ডেস্ক:
|
![]() . গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো এডহক কমিটির মেয়াদ বাড়ানো বা পুনঃনিয়োগের বিধান নেই। তবুও, গত ১১ সেপ্টেম্বর মেজর জেনারেল (অব.) আজিজুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বোর্ডকে পুনঃনিয়োগ দেয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের ভেতরে অনেকেই এর বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম এককভাবে কমিটিকে টিকিয়ে রাখতে দেনদরবার চালিয়ে শেষ পর্যন্ত জয়ী হন। গত ১৮ মে মগবাজারস্থ রেড ক্রিসেন্টের প্রধান কার্যালয়ে দুদকের অভিযানে টেন্ডারবাজি, বদলি, নিয়োগ ও পদায়ন বাণিজ্যের নথিপত্র উদ্ধার করা হয়। অভিযানের সময় উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মুহাম্মদ তুহিন ফারাবীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠে। বদলি ও পদায়ন বাণিজ্যসহ তার বিরুদ্ধে প্রায় ৩২০ কোটি টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে তাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও রেড ক্রিসেন্ট বোর্ড থেকে সরানো হলেও বাকিরা বহাল-তবিয়তে থেকে যান। বর্তমানে দুর্নীতিবাজদের মধ্যে বহাল রয়েছেন ট্রেজারার মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, বোর্ড সদস্য ডা. মাহমুদা আলম মিতু, পরিচালক ইমাম জাফর সিকদার এবং চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম। অভিযোগ রয়েছে, চেয়ারম্যানই মূলত অন্যদের দুর্নীতির সুযোগ করে দিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করছেন। চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে অফিসের গাড়ি ব্যক্তিগত সফরে ব্যবহার, কক্সবাজার ভ্রমণ, বিলাসবহুল হোটেলে থাকা-খাওয়ার খরচ সোসাইটির নামে দেখানো, জেনেভা সফরে লাখ লাখ টাকা অপচয়, ইফতার প্যাকেজের হিসাব গরমিলসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী তিন মাসে একবার বোর্ড মিটিংয়ের কথা থাকলেও তিনি প্রতি মাসে দু’বার সভা করে সম্মানী ও ভোজের খরচ বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় করেছেন। তুহিন ফারাবী বোর্ডের সদস্য হওয়ার পর পরিচালক ইমাম জাফর সিকদারের সঙ্গে মিলিয়ে বদলি, চুক্তিভিত্তিক চাকরি থেকে নিয়মিতকরণ, পদোন্নতি, নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্যের সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। এতে সহযোগিতা করেছেন মহাসচিব ড. কবীর মোহম্মদ আশরাফ, এইচআর কো-অর্ডিনেটর মো. নিজাম উদ্দিন, চেয়ারম্যানের পিএস আসিফ আলমাজ এবং লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্সের আইনজীবী খোরশেদ আলম। নিজের প্রভাব খাটিয়ে তুহিন ফারাবী তার বন্ধু মুনতাসীর মামুনকে নিয়ম না মেনেই যুব ও স্বেচ্ছাসেবক বিভাগের উপপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেন। আর আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত আমিনুল ইসলামকে করা হয় রেড ক্রিসেন্টের ট্রেজারার। গত ৫ মার্চ কমিটিকে ছয় মাসের জন্য দায়িত্ব দেয়া হলে চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম ও অন্যান্যরা লাগামহীন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। অফিস গাড়ি দিয়ে আর্মি গলফ ক্লাব ও ব্যক্তিগত চেম্বারে যাওয়া-আসা, ভ্রমণ খরচ সোসাইটির ওপর চাপানো, অসহায়দের বরাদ্দ আত্মসাৎ, ট্রেনিং কিচেন থেকে নিজের পোষ্যসহ খাবার সংগ্রহ, ট্রেনিং ও ফিল্ড ভিজিটের নামে অবৈধ ভাতা উত্তোলন—এসব নিয়মিত ব্যাপারে পরিণত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুদকের হাতে দুর্নীতির প্রমাণ ধরা পড়া এবং গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করেও নূরজাহান বেগমের দৃঢ় প্রচেষ্টায় বিতর্কিত এডহক কমিটি আবার টিকে গেছে। ফলে মানবিকতার প্রতীক রেড ক্রিসেন্ট এখন দুর্নীতিবাজদের আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিণত হয়েছে। ডেল্টা টাইমস/সিআর
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |