দান-সদকায় সম্পদ বাড়ে
মুফতি মুহাম্মাদ যুবাইর খান
প্রকাশ: রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৯, ১১:৪৯ পিএম আপডেট: ২৪.০৩.২০১৯ ৭:২৬ পিএম

দানশীলতা একটি মহৎ গুণ। দানের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার দেওয়া সম্পদের শুকরিয়া আদায় করা হয়, সম্পদ বৃদ্ধি পায়, গরিব ও অসহায় মানুষের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শিত হয়। সমাজের নিঃস্ব ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, গরিব-দুঃখী মানুষের প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে তাদের মুখে হাসি ফোটানোর দ্বারা মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অফুরন্ত সাওয়াব লাভ করে। যে যত বেশি দান-সদকা করে তার আমলনামা ততই সমৃদ্ধ হয়।

দান-সদকার গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা আল্লাহর রাস্তায় নিজেদের অর্থ-সম্পদ দান করে তাদের দানের উদাহরণ হলো, একটি বীজের মতো, যা থেকে সাতটি বিশেষ শিষ বা ছড়া জন্মায়। প্রত্যেক ছড়ায় একশ’ করে দানা থাকে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা আরও বেশি দান করেন। আল্লাহ অতি দানশীল ও সর্বজ্ঞ।’ (সুরা বাকারা : ২৬১)

দান-সদকা করলে গুনাহ মাফ হয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান-সদকা কর, তাহলে তা কতই না উত্তম। আর যদি তা গোপনে গরিব ও অভাবীদের দাও, তবে তা তোমাদের জন্য আরও উত্তম। আল্লাহ তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেবেন। আল্লাহ তোমাদের আমলের বেশি খবর রাখেন।’ (সুরা বাকারা : ২৭১)।

দানের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দান করলে মানুষের সম্পদ কমে না বরং সম্পদ আরও বেড়ে যায়।’ (তিরমিজি : ২৩২৫)। দান-সদকা করলে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচা যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা খেজুরের একটি টুকরো দান করে হলেও জাহান্নাম থেকে বাঁচো।’ (বোখারি : ১৩৫১)। আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রতিদিন আকাশ থেকে দুজন ফেরেশতা নেমে আসেন। একজন বলেন, হে আল্লাহ, আজকের দিনের দানকারীকে তার প্রতিদান দাও। আর অপরজন বলে হে আল্লাহ, কৃপণ লোককে শিগগির ধ্বংস কর।’ (বুখারি : ১৩৫১)। রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি খরচ কর, তাহলে তোমার প্রতিও খরচ করা হবে। (বুখারি : ৪৯৩৩)। এক ব্যক্তি রাসুলকে (সা.) বলল, ইসলামের কোন আমলটি সর্বোত্তম? রাসুল (সা.) বললেন, ‘কাউকে খাবার খাওয়ানো ও পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়া।’ (বুখারি : ১১)। অপর এক হাদিসে এসেছে, ‘সাদাকাহ করলে সম্পদ কমে না।’ (মুসলিম : ৬৭৫৭)
নিজের উপার্জিত সম্পদ থেকে দান করলে সম্পদ কমে না, বরং আরও বৃদ্ধি পায়। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি তার হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুরের মূল্য পরিমাণ দান করেÑ বলাবাহুল্য মহান আল্লাহ হালাল বস্তু ছাড়া কিছুই গ্রহণ করেন না। আল্লাহ তার সেই দান ডান হাতে গ্রহণ করেন। অতঃপর সেই দানকে তার দানকারীর জন্য বৃদ্ধি করতে থাকেন। যে রূপ তোমাদের কেউ তার ঘোড়াকে লালন-পালন করতে থাকে। অবশেষে তা একদিন পাহাড় সমতুল্য হয়ে যায়।’ (বুখারি : ১৩২১)
যে ১০ জন সাহাবা দুনিয়াতে জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন তাদের একজন হলেন হজরত জুবায়ের (রা.)। তিনি বলেন, ‘গোপন গুনাহের কাফফারা হিসেবে বেশি বেশি গোপনে দান-সদকা কর। নিজ স্ত্রী বা স্বামীও জানবে না, সন্তানও নয়, এমনকি পরিবারের কেউই জানবেন না যে, সদকা দেওয়া হচ্ছে। যাকে দেওয়া হচ্ছে তিনিও অনেক ক্ষেত্রে জানেন না, কে তাকে দান করেছেন। শুধু আল্লাহ তায়ালাই জানবেন, তাঁকে খুশি করতেই এই প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা।’
আমাদের সমাজে দেখা যায় আমরা বিবাহ অনুষ্ঠানসহ ব্যয়বহুল নানা অনুষ্ঠান বা পার্টির আয়োজন করতে গিয়ে অনেক অপচয় করে ফেলি। কিন্তু আমাদের পাশেই কোনো গরিব বা অসহায় ব্যক্তি না খেয়ে আছে, তার খবর রাখছি না। কেউ সাহায্যের হাত বাড়ালে তাকে দান করতেও আমরা কৃপণতা করছি। অথচ সমাজে এমন অনেক অসহায়-নিঃস্ব মানুষও আছে যারা সারাদিন অভুক্ত থেকে সামান্য পানি ছাড়া আর কিছুই তাদের ভাগ্যে জোটে না। পরার জন্য ভালো কোনো কাপড়ও তাদের নেই। রাতে থাকার জন্য ভালো কোনো ব্যবস্থাও করতে পারে না। আবার লজ্জা-শরমে কারও কাছে হাতও বাড়াতে পারে না। রাতের আঁধারে ফুটপাথ ধরে হাঁটলে দেখা যায় অন্ন-বস্ত্র, সহায়-সম্বল ও আশ্রয়হীন কত মানুষ রাস্তার ধারে পড়ে আছে। এদের মধ্যে কেউ হয়তো মানুষের কাছে হাত পেতে নিগৃহীত হচ্ছে আবার কেউ এমনও আছে যারা হাতও পাততে লজ্জাবোধ করছে।
এ ধরনের অসহায় মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া সামর্থ্যবান প্রতিটি মুসলমানের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। এমন লোকদের খুঁজে খুঁজে গোপনে দান করলে অবশ্যই অধিক সওয়াব পাওয়া যাবে। একই সঙ্গে দান ও অন্যের কষ্ট লাঘব, উভয় সওয়াবই পাওয়া যাবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সহমর্মিতা, সহানুভ‚তি ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করার এবং বেশি বেশি দান-সদকা করে প্রকৃত গরিব-অসহায়, নিঃস্ব লোকদের পাশে দাঁড়িয়ে অশেষ সওয়াব অর্জনের তাওফিক দান করুন।
লেখক : শিক্ষক, ইদারাতুল কুরআন, ঢাকা

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-২২৬৬৩৯০১৮, ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-২২৬৬৩৯০১৮, ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com