স্মার্টফোনের গঠনমূলক ব্যবহারের তরুণ প্রজন্মের গুরুত্ব
মোঃ জাহিদুল ইসলাম
|
![]() স্মার্টফোনের গঠনমূলক ব্যবহারের তরুণ প্রজন্মের গুরুত্ব দিনের একটা উল্লেখযোগ্য অংশও আমরা মোবাইল নিয়েই কাটাই। তাই প্রযুক্তির এই যুগে স্মার্টফোন এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৪.৮৮ বিলিয়ন মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করে যা বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ৬০.৪২%। কিছু ব্যবহারকারীর একাধিক স্মার্টফোন থাকায় বিশ্বে প্রায় ৭.২১ বিলিয়ন সক্রিয় স্মার্টফোন রয়েছে। তাই বিশেষ করে বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন এখন তরুণদের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। বর্তমান সময়ের ডিজিটাল বিশ্বের ধারণার ক্ষেত্রেও স্মার্টফোনের বিস্তারকে অস্বীকার করা যাবে না। পড়াশোনা, বিনোদন, যোগাযোগসহ সব কিছুতে এই স্মার্টফোন এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে তরুণ প্রজন্ম। তরুণদের শিক্ষাজীবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে স্মার্টফোন। এভাবে স্মার্টফোন তরুণদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে যদি তা ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত জীবন, শিক্ষা বা কর্মক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তাহলে তা আসক্তির লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়। স্মার্টফোন মূলত আসক্তি সৃষ্টিকারী একটি যন্ত্র। এগুলো শুধু শিশুদেরকেই নয় যে কোনো মানুষকেই আকর্ষিত করতে পারে। একবার স্মার্টফোনের মাধ্যমে কোন কিছু দেখতে শুরু করলে এক ধরনের নেশা তৈরি হয়। প্রযুক্তির এই যুগে স্মার্টফোনবিহীন জীবন যেন কেউ কল্পনাই করতে পারে না। বর্তমানে আমরা স্মার্টফোনের ওপর এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি যার কারণে আমরা অনেকেই আজ স্বাভাবিক জীবনযাপনের নিয়ম ভুলতে বসেছি। কিছুদিন আগেও তরুণ-তরুণীরা বিকালবেলা শরীরচর্চা করত, বিভিন্ন খেলাধুলা করত, একে অপরের সঙ্গে গল্পে মেতে ওঠত। কিন্তু আজ সবাই এই শৃঙ্খলার বাহিরে। কেউ কারও সঙ্গে মিশে না, কেউ কারও সঙ্গে কথা বলে না। সবার দৃষ্টি মোবাইলের স্ক্রিনে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও দেখা যায় যখন সবাই ফ্রি থাকেন তখন সবাই সবার ফোন নিয়ে ব্যস্ত। এই এক অজানা আসক্তি যা কিনা নিঃশব্দে ছিনিয়ে নিচ্ছে সোনালি অতীতসহ মায়া-মমতার বন্ধন। এই আসক্তিতে সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে রয়েছে তরুণ প্রজন্ম। এখনকার যুগের ছেলেমেয়েরা অনলাইনের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে বেশি। এখন এই আসক্তিতে সবাই এমনভাবে আসক্ত যে প্রভাতে ঘুম থেকে ওঠার পর প্রথম কাজ মোবাইলের নোটিফিকেশন চেক করা। এটা না করা পর্যন্ত যেন মানসিক অশান্তিতে থাকে সবাই। সারাদিন তো ফোন কাছে থাকছেই। ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমু- এসব থাকার সঙ্গে আরও কয়েকটি বিষয় অ্যাড হয়েছে। যেগুলো হচ্ছে- চ্যাট জিপিটি, ফ্রি ফায়ার, পাবজি, ক্লাস অব ক্লাসসহ বিভিন্ন অনলাইন গেম। এসব বিষয় এই আসক্তিকে গাড় করছে দিন দিন। আর তরুণ প্রজন্ম এই আসক্তিতে মেতে ওঠে ধ্বংস করছে নিজের জীবন। এই অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহার তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি নীরব হুমকি। বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কাছে স্মার্টফোন যেন এক অত্যাবশ্যকীয় সঙ্গী। বর্তমান এই ডিজিটাল যুগে নতুন এক আজব আসক্তির নাম মোবাইল আসক্তি। এই আসক্তি মাদকাসক্তির চেয়েও অনেক ভয়াবহ। এছাড়াও একজন শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ হলেও আজ এই ভবিষ্যৎকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে মোবাইল ফোন। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের প্রবণতা ক্রমশ একটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এর ফলে তরুণ সমাজের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তাই সময় থাকতে সচেতন না হলে এর পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে তখন প্রযুক্তিই আমাদের নিয়ন্ত্রণ করবে– এই সত্যটি উপলব্ধি করা খুবই জরুরি। ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি কাজেই আমরা কোনো না কোনোভাবে প্রযুক্তির ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল। এই আসক্তির হাত থেকে মুক্তি পেতে সচেতনতা জরুরি। তরুণদের স্মার্টফোন ব্যবহারের সময়সীমা নির্ধারণ করা উচিত এবং বাস্তব জীবনে সামাজিক কার্যকলাপ ও খেলাধুলার প্রতি মনোযোগ দেওয়া উচিত। অন্যদিকে প্রযুক্তিও এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। স্মার্টফোনে এমন কিছু অ্যাপ রয়েছে যা ব্যবহারের সময়সীমা নির্ধারণ এবং অতিরিক্ত ব্যবহারে সতর্ক করতে পারে। এছাড়াও ডিজিটাল ডিটক্স বা প্রযুক্তি থেকে নির্দিষ্ট সময় দূরে থাকার অভ্যাস গড়ে তোলাও জরুরি। স্মার্টফোনে আসক্তি কেবল একটি ব্যক্তিগত সমস্যা নয় বরং এটি আমাদের সমাজের বড়ো একটি সংকট। এই সংকট থেকে মুক্ত হতে হলে শুধু ব্যক্তি বা পরিবার নয় বরং পুরো সমাজকে সচেতন হতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোকেও তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারের নির্দেশনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। বাবা-মা এবং শিক্ষকদেরও এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। তবেই তরুণেরা ফিরে পাবে একটি সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবন। ফলশ্রুতিতে আগামীর বিশ্ব ফিরে পাবে নতুন আশার আলো। প্রযুক্তির এ অনুষঙ্গকে সমৃদ্ধি ও কল্যাণের পথে ধাবিত করার ক্ষেত্রে অসংখ্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। এ চ্যালেঞ্জকে উপেক্ষা না করে বরং স্মার্টফোনের গঠনমূলক ব্যবহারের মাধ্যমে যন্ত্রটিকে একবিংশ শতাব্দীর চাহিদা পূরণে নেতৃত্বের হাতিয়ার হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। আর এর দায়িত্ব তরুণ প্রজন্মকেই নিতে হবে। তরুণদের হাত ধরেই স্মার্টফোন হয়ে উঠতে পারে সম্ভাবনার প্রতীক। আমরা তারুণ্যের জয়গানে সে প্রত্যাশাই করি। তারবিহীন ক্ষুদ্র এই যন্ত্রটি মানুষের অতিপ্রয়োজনীয় এবং যোগাযোগের সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হলেও এর ক্ষতি সম্পর্কে আমাদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে। শুধু আসক্তিই নয় বরং এই আধুনিক যন্ত্রটির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে কত ধরনের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হতে পারে সে সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানি। একটি প্রজন্মই যেন ধ্বংস হতে বসেছে এই আসক্তির কারণে। স্মার্টফোনে আসক্ত না হয়ে পরিমিতভাবে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন কিছু সচেতনতা ও নিয়ন্ত্রণের কৌশল। যেমন এর মধ্যে রয়েছে অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন বন্ধ করা, অ্যাপ ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট সময় ঠিক করা, ঘুমের সময় ফোন দূরে রাখা, এবং ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হওয়া। স্মার্টফোন আসক্তি রোধ করতে না পারলে আমাদের একটি প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এর ফলে এটি রাষ্ট্র, সমাজ বা পরিবারের জন্য বয়ে আনতে পারে ভয়ংকর পরিণতি। লেখক: নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান (আইসিটি সেল) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। ডেল্টা টাইমস্/মোঃ জাহিদুল ইসলাম/আইইউ |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |